‘আর্কেডিয়া আর্টস’ গ্যালারির নেপথ্য কথা

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১

রাইসা জান্নাত

চার বন্ধু দেশ-বিদেশে ঘোরেন আর প্রখ্যাত সব শিল্পীর শিল্পকর্ম সংগ্রহ করেন। অনেক বছর ধরে দুর্লভ সব শিল্পকর্ম সংগ্রহ করতে করতে একসময় তাদের মাথায় আসে প্রদর্শনীর কথা। এর জন্য দরকার আর্ট গ্যালারি। যেই ভাবনা সেই কাজ। চার বন্ধু মিলে খুলে ফেললেন একটি আর্ট গ্যালারি। নাম দেয়া হলো আর্কেডিয়া আর্টস কথাগুলো গল্পের মতো শোনালেও সত্য। রাজধানীর বনানীতে আর্কেডিয়া আর্টস নামে যাত্রা করেছে নতুন একটি গ্যালারি। গ্যালারি কার্যক্রমের নেপথ্যে রয়েছেন চার বন্ধু। চার বন্ধুর একজন হলেন মিসেস বাংলাদেশ মুনজারিন অবনী। তার মুখ থেকেই আর্কেডিয়া আর্টস গড়ে ওঠার গল্প শোনা গেল। মূলত মুনজারিন অবনী, আরনীব চৌধুরী, খান রেজাউল হক তার স্ত্রীএই চারজনের প্রচেষ্টায় আর্কেডিয়া আর্টসের যাত্রা। 

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, এসএম সুলতান, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, রফিকুন নবী, কালিদাস কর্মকার, মকবুল ফিদা হুসেন, কনকচাঁপা চাকমা, আইভি জামানকাদের শিল্পকর্ম নেই গ্যালারিতে! স্বনামধন্য এসব শিল্পীর চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো আর্কেডিয়া আর্টসের দেয়াল। নারী অবয়ব, প্রকৃতির রূপ সৌন্দর্য, জলের ভেতর মাছের আনাগোনা, গ্রামবাংলার অপরূপ দৃশ্যসহ নানা শিল্পকর্ম হরেক রঙের মিশেলে গ্যালারির দেয়ালগুলো পেয়েছে এক অনন্য মাত্রা। বসন্তের সব রঙ যেন এখানেই মিলেমিশে একাকার।

আর্কেডিয়া আর্টস নতুন গ্যালারি হিসেবে যাত্রা করে ১৬ ফেব্রুয়ারি। এদিন গ্যালারির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, শিল্পী কনকচাঁপা চাকমা, শিশির ভট্টাচার্যের মতো স্বনামধন্য শিল্পীদের উপস্থিতিতে গ্যালারির উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। যাত্রার শুরুতেই উদ্বোধনী প্রদর্শনী হিসেবে আড়াই মাসব্যাপী একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে গ্যালারিটি। সমসাময়িক বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমের ৪৫ জন শিল্পীর শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। এতে ভারত বাংলাদেশের ৪৫ জন শিল্পীর মোট ৬০টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে।

প্রদর্শনীতে দেশী শিল্পীদের মধ্যে যাদের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে তারা হলেন আব্দুস শাকুর শাহ, আবুল বারক আলভী, হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, কাজী গিয়াস, কাইয়ুম চৌধুরী, কালিদাস কর্মকার, নিসার হোসেন, মোহাম্মদ ইউনুস, শিশির ভট্টাচার্য, ওয়াকিলুর রহমান, নাসরিন বেগম, কনকচাঁপা চাকমা, আইভি জামান, শেখ আফজাল, মোহাম্মদ ইকবাল, সাধনা ইকবাল, ইমরান হোসেন পিপলু, বিশ্বজিৎ গোস্বামী প্রমুখ। ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে প্রখ্যাত শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন, যোগেন চৌধুরী, অজিত শীল, প্রবীর কুমার বিশ্বাস, তাপস দাস শিল্পী শাহজাহানের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে।

আর্কেডিয়া আর্টসের যাত্রার নেপথ্যের গল্পটা একটু ভিন্ন। তার ইঙ্গিত শুরুতেই দেয়া হয়েছে। চার বন্ধুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগৃহীত শিল্পকর্ম দিয়ে গ্যালারির যাত্রা। নতুন আর্ট গ্যালারিটি নিয়ে টকিজের সঙ্গে আরো কথা হয় মুনজারিনের। অন্যান্য পরিচয়ের বাইরে এবার তিনি শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। অবনীর মতে, একই ছাদের নিচে রকম বড় বড় শিল্পীর কাজ দেশে খুব কম জায়গায় রয়েছে। আর্কেডিয়া গ্যালারির মাধ্যমে আর্ট কালেক্টররা একসঙ্গে সিনিয়র আর্টিস্টদের এক্সক্লুসিভ সব কাজ দেখতে সংগ্রহের সুবিধা পাবেন বলে মনে করছেন তারা। গ্যালারি নিয়ে নানা পরিকল্পনা সম্পর্কে মুনজারিন জানালেন, তাদের গ্যালারি কার্যক্রমে সিনিয়র আর্টিস্টদের পাশাপাশি নতুন শিল্পীদের জন্যও থাকবে নানা সুযোগ। নতুন শিল্পীদের কাজের ধরন, মান দেখে তাদেরও প্রদর্শনীর সুযোগ দেয়া হবে। এছাড়া গ্যালারিতে সব ধরনের শিল্পকর্ম স্থান পাবে বলে তিনি জানালেন। বললেন, আর্কেডিয়া আর্টস গ্যালারি কার্যক্রমের মাধ্যমে মৃৎ, পাট, জামদানি যা কিছু দেশে তৈরি হয় এবং শিল্প ক্যাটাগরিতে পড়ে সবকিছুকেই প্রমোট করা হবে। শুরুটা চিত্রকর্ম দিয়ে করা হলেও ধীরে ধীরে সব ধরনের শিল্পকর্মকে প্রাধান্য দেয়া হবে।

আর্কেডিয়া আর্টসে চলমান উদ্বোধনী প্রদর্শনীটি প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে কভিড-১৯-এর কারণে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া গ্যালারি ভিজিট করা যাবে না। অন্যদিকে আর্কেডিয়া আর্টসের ওয়েবসাইটে গিয়েও শিল্পীদের শিল্পকর্মগুলো দেখা যাবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫