কভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর ধরে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বন্ধ ছিল। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক রুটে যে ক’টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে তাতেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয় মাসে প্রায় ৩৭ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের আট কর্মীকে আটকও করা হয়েছে। বিমানবন্দরের শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন সময় শুল্ক গোয়েন্দাদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দেশে যে পরিমাণ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে তার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। এর অধিকাংশই জব্দ করা হয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হাতে জব্দ সর্বশেষ চোরাচালানটি ছিল প্রায় সাত কেজি স্বর্ণের। যেটির আনুমানিক বাজারমূল্য ৪ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে এ স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এয়ারলাইনসটির আট কর্মীকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, গত মঙ্গলবার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বক্স ক্যাটারিং সার্ভিসের গাড়ি তল্লাশি করে সাত কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ক্যাটারিং সার্ভিসের আট কর্মীকে আটকের পাশাপাশি চোরাচালানে ব্যবহূত গাড়িটি জব্দ করে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি মাসকাট থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে আসা সারোয়ার উদ্দিন নামে এক যাত্রীর কাছ থেকে ৭ কেজি ২৯০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টম হাউজ। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।
শাহজালাল বিমানবন্দরের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কভিডের মধ্যে গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে প্রায় ৩৭ কেজি স্বর্ণ এসেছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। চারটি উড়োজাহাজ সংস্থার আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের কাছ থেকে এসব স্বর্ণ জব্দ করা হয়।
শুল্ক গোয়েন্দাদের সরবরাহ করা তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ বিমানের জেদ্দা থেকে আসা বিশেষ একটি ফ্লাইট থেকে ৫ কেজি ২০০ গ্রাম (৩ কোটি ১২ লাখ টাকা) ওজনের স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। বিমানের এক যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণের এসব বার উদ্ধার করা হয়। এরপর গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সৌদি এয়ারলাইনসে করে দুবাই থেকে আসা এক যাত্রীর কাছ থেকে ৩ কেজি ৭০০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। গত বছরের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের আরো একটি ফ্লাইট থেকে চারটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। ওই মাসের ১৮ নভেম্বর এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে আসা ৬ কেজি ৯০০ গ্রাম স্বর্ণের বড় একটি চালান আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিমানবন্দরে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের প্রিভেন্টিভ টিম এই স্বর্ণ জব্দ করে।
এরপর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর এমিরেটস এয়ারলাইন্সের আরেকটি ফ্লাইট থেকে ১৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যার আনুমানিক বাজারমূল্য সাড়ে ১০ কোটি টাকা। দুবাই থেকে আসা ময়মনসিংহের এক ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে করে নিয়ে আসা ১৩০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়।
শুল্ক গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশির ভাগ চালান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মাসকাট ও কাতার থেকে এ চালান এসেছে। বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে এসব স্বর্ণ দেশে আনা হয়।
এসব স্বর্ণ আনতে বিমানের টয়লেট, ব্ল্যাক বক্স, সিট, বিমান সংস্থায় নিয়োজিত বিভিন্ন গাড়ি এমনকি বিমান সংস্থার কর্মকর্তা ও যাত্রীদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে এ অবস্থা যে শুধু রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমনটি নয়; সিলেট, চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা বিভিন্ন দেশের বিমান থেকেও স্বর্ণ আটক করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।