সেমিনারে বক্তারা

পেনশন-সঞ্চয়ে যাচ্ছে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দের ৩১%

প্রকাশ: জানুয়ারি ৩১, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে বরাদ্দের ২৪ শতাংশই রাখা হয়েছে পেনশন এবং শতাংশ সঞ্চয়পত্রের সুদ প্রদানে। ফলে মোট অর্থের ৩১ শতাংশই চলে যাচ্ছে দুই খাতে। তাই খাতে সুশাসনের পাশাপাশি শুভঙ্করের ফাঁকির সমাধান প্রয়োজন। পাশাপাশি ব্যাপক মানুষকে সুবিধার আওতায় আনতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শতাংশ বরাদ্দের দাবি করেছেন।

গতকাল ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। কভিড ১৯: সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি স্বাস্থ্য অধিকার শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো . নাজনীন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মফিদুল ইসলাম অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী।

বক্তারা বলেন, প্রতি বছর বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, তার বড় একটি অংশই চলে যায় সরকারি চাকুরেদের পেনশনের পেছনে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দের পরিমাণ খুব কম পৌঁছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।

সত্যিকারের যোগ্যরা যাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ঢুকতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে যত দ্রুত সম্ভব একটি ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। এজন্য বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট জিডিপির শতাংশে উন্নীতের প্রস্তাব করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

মূল প্রবন্ধে . নাজনীন আহমেদ বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে নতুন করে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। তাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। সেটি করতে হলে খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

করোনার সময় অর্থনীতির যে বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে, সেটি হলো কর্মসংস্থান। অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। আয় কমে গেছে। বৈশ্বিক বাজারে সংকট চলছে। তাই রফতানি আয়ও কমে গেছে। কর্মসংস্থানের সঙ্গে দরিদ্রতার সম্পর্ক রয়েছে। করোনার সময় দেশে আয়বৈষম্য দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। খাতে সুশাসনের মারাত্মক ঘাটতি আছে। যারা সামাজিক সুরক্ষা খাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি, তারা ঢুকতে পারছে না। খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তা কভিড ১৯-এর সময় সবার সামনে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে দুশ্চিন্তা চলছে, তা দূর করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যাতে দরিদ্র মানুষরাই পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান নিজেও স্বীকার করেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে একসময় ভুলত্রুটি ছিল। অবশ্য সেটি এখন অনেকটাই কমে এসেছে। জনপ্রতিনিধিরা এখন দরিদ্র মানুষ বাছাইয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্ব্বন করছে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে আমিও মনে করি। সেই চেষ্টা অবশ্য চলছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মফিদুল ইসলাম বলেন, কভিডের কারণে নতুন করে অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। স্বাস্থ্য খাতে এখন বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অনেক ভুলত্রুটি আছে। এসব ভুলত্রুটি কমিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। এজন্য জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএস) প্রণয়ন করা হয়েছে।

জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, কভিডের সময় দেশের স্বাস্থ্যসেবা কতটা নাজুক সেটা ফুটে উঠেছে। কতজন দরিদ্র মানুষ নিজেদের কভিড পরীক্ষা করিয়েছেন আমরা জানি না। নিম্ন আয়ের মানুষরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা অগ্রাধিকার পাবে, সেখানেও আছে দুশ্চিন্তা।

একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা খাতেও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫