দশ মাসের বেশি সময় পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচে দাপুটে এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। একদিকে নতুন প্রত্যাবর্তনে বল হাতে সাকিব আল হাসানের জ্বলে ওঠা, অন্যদিকে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদের আগুন ঝরা এক স্পেল। এ দুজনকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন আরেক পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। সব মিলিয়ে বোলিংয়েই মূলত এ ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। বাকি ছিল কেবল ব্যাটিংয়ের আনুষ্ঠানিকতাটুকু। বিরুদ্ধ উইকেটে কিছুটা সংগ্রাম করতে হলেও লক্ষ্য ছুঁতে বড় বিপর্যয়ে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১২৩ রানের লক্ষ্য ৩৩ দশমিক ৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ।
হাতের নাগালে থাকা লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই সতর্ক ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। বিশেষত প্রথম ওভারে আলযারি জোসেফের ডেলিভারিগুলো ছিল রীতিমতো আতঙ্ক জাগানো। এক মুহূর্তের জন্য ১২৩ রানের লক্ষ্যকেও মনে হচ্ছিল দূরের বাতিঘর। কিন্তু বিরূপ পরিস্থিতিতে উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন দুই ওপেনার। অবশ্য পেস সামলাতে পারলেও ঘূর্ণি ফাঁদে ঠিকই পা দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। দলীয় ৪৭ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। আকিল হোসেনের ঘূর্ণিতে মাত্র ১৪ রান করে পরাস্ত হন লিটন দাস। সাকিবের বদলে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ব্যর্থ নাজমুল হোসাইন শান্ত (১)। আকিলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়া এ ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এক রানের বেশি আসেনি। এরপর তৃতীয় উইকেটে তামিম-সাকিব জুটিতে জয়টা ক্রমেই কাছে আসতে শুরু করে। ৪৪ রান করে তামিম ফেরেন জেসন মোহাম্মদের বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে। সাকিব (১৯) যখন ফিরে যান, তখন জয় থেকে মাত্র ১৮ রান দূরে বাংলাদেশ। সাকিবকেও ফেরান আকিল। এরপর দলকে আর কোনো বিপদে পড়তে না দিয়ে সহজেই জয় তুলে নেন মুশফিক (১৯) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৯)। তখনো বাংলাদেশের হাতে ছিল আরো ৯৭ বল।
এর আগে দর্শকবিহীন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না শুরুতেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হানেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ। তার করা ফুল লেংথ ডেলিভারিটি একটু ভেতরে ঢুকে এমব্রিসের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি এমব্রিসের। ৭ রান করেই ফিরতে হয় তাকে। এরপর বৃষ্টির হানায় কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। ফিরে এসে উইকেটের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের বোলিং যেন আরো ধারালো হয়ে ওঠে। দলীয় ২৪ রানে মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে ফেরেন জশোয়া ডা সিলভা। তবে এ উইকেটের সিংহভাগ কৃতিত্ব লিটন দাসের। গালিতে দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে এ ক্যাচটি নেন তিনি। এরপর আন্দ্রে ম্যাকার্থিকে ফিরিয়ে শুরু হয় সাকিব ম্যাজিক। দলীয় ৪৫ রানে অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন ম্যাকার্থি (১২), কিন্তু লাইন মিস করে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান। এটি ছিল ঘরের মাঠে সাকিবের ১৫০তম উইকেট। দলীয় ৫৬ রানে অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদকে ফিরিয়ে উইন্ডিজ শিবিরে ধাক্কা দেন সাকিব। সাকিবের ঘূর্ণিতে বেসামাল জেসন স্টাম্পিং হন মুশফিকুর রহিমের হাতে। রানের খাতায় আর কিছু যোগ হওয়ার আগে এনক্রুমাহ বোনারকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। এরপর কাইল মেয়ার্স ও রভম্যান পাওয়েল জুটি চেষ্টা করে প্রতিরোধ গড়ার। এ দুজন মিলে দলকে নিয়ে যান ১১৫ রানে। এরপরই দৃশ্যপটে আবির্ভাব অভিষিক্ত হাসান মাহমুদের। পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন দুই ক্যারীবিয় ব্যাটসম্যানকে। প্রথমে দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা পাওয়েলকে। ৩১ বলে ২৮ রান করেন পাওয়েল। পরের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন রেমান রেইফেরকে। পরের ওভারেই উইকেট শিকারের তালিকায় নাম লেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। হালকা টার্ন করা বলটি ঠিকঠাক খেলতে ব্যর্থ হয়ে লিটন দাসের তালুবন্দি হন মেয়ার্স। ৪০ রান আসে মেয়ার্সের ব্যাট থেকে। আকিল হোসেইনকে ফিরিয়ে এরপর নিজের তৃতীয় উইকেটও তুলে নেন হাসান। উইন্ডিজদের শেষ উইকেটটি যায় সাকিবের দখলে। মাত্র ৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন ম্যাচসেরা সাকিব। ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
ম্যাচ শেষে বোলারদের কৃতিত্ব দিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন, আমরা দারুণ বল করেছি। ফিজ (মুস্তাফিজ) যেভাবে শুরু করেছে তা দারুণ ছিল। রুবেলও বেশ ভালো শুরু করেছিল। তরুণ হাসান দারুণ বল করেছে। স্পিনাররাও দারুণ করেছে। সাকিব ও মেহেদীও বেশ ভালো করেছে। উইকেট ব্যাট করার জন্য কঠিন ছিল। আপনি আগ্রাসী শট খেলার চেষ্টা করেও পারবেন না। আমি মনে করি, আমরা বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যাট করেছি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: —
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩২.২ ওভারে ১২২/১০ (মেয়ার্স ৪০, রভম্যান ২৮, জেসন ১৭; সাকিব ৪/৮, হাসান ৩/২৮, মুস্তাফিজ ২/২০)
বাংলাদেশ: ৩৩.৫ ওভারে ১২৫/৪ (তামিম ৪৪, মুশফিক ১৯*, সাকিব ১৯; আকিল ৩/২৬, জেসন ১/১৯)
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)