করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ ৫৩৩ কোটি টাকা

প্রকাশ: জানুয়ারি ২০, ২০২১

মেসবাহুল হক

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, হাসপাতাল পরিচালনাসহ অন্যান্য খরচে রাজস্ব খাতে বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। তবে করোনা চিকিৎসায় অতিরিক্ত ডাক্তার-নার্স নিয়োগসহ চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় ব্যয় বাড়ায় ইতোমধ্যে খাতে প্রায় ৫৩৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। বরাদ্দ আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, করোনার মধ্যেই বাজেট ঘোষণা হওয়ায় চলতি অর্থবছর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয় হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। গতবার খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা, যা এবার দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে দুই বিভাগের আওতায় রাজস্ব খাতে বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে হাজার ৮২৩ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে খাতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৩২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

এদিকে এবারের বাজেটে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় যেকোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণায় আলাদাভাবে ১০০ কোটি টাকার একটি বরাদ্দও রাখা হয়। চিকিৎসক, নার্স স্বাস্থ্যকর্মী যারা কভিড-১৯ মোকাবেলায় কাজ করছেন, তাদের জন্য এককালীন প্রণোদনা দেয়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১০০ কোটি টাকা। করোনাসংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় করোনায় আক্রান্ত আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ মাঠপর্যায়ের কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেয়া বাবদ ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। যারা মারা গেছেন, ইতোমধ্যে অর্থ থেকে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু হয়েছে। আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এছাড়া কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় দুটি জরুরি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। একটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় হাজার ১২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার। কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ এপ্রিল থেকে ২০২৩ জুন পর্যন্ত। অন্যটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের দেয়া হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। কভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিসট্যান্স শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৩ জুন পর্যন্ত।

বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সীমিত সম্পদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় ভালোমতো করোনা মোকাবেলা করে আসছে। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতও হয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক . আহসান মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, এবার স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়াটা স্বাভাবিক। করোনার টিকাদান কর্মসূচির জন্য বাজেটে সরাসরি কোনো বরাদ্দ ছিল না। কারোনা মোকাবেলায় জরুরি প্রয়োজনে ১০ হাজার কোটি টাকার একটা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেখান থেকেই এসব ক্ষেত্রে খরচ করা হবে। বিশেষভাবে করোনার চিকিৎসায় কয়েক হাজার ডাক্তার এবং নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের বেতন-ভাতাও দিতে হবে। তাই বছর খরচ বাড়বে। ভর্তুকি খরচে করোনার টেস্ট করা হচ্ছে, আবার বিনা পয়সায় টিকা দেয়া হলে সেক্ষেত্রেও সরকারের ব্যয় বাড়বে। সুতরাং এবার স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় বাড়ছে, সেটা ঠিক আছে।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে বিশেষভাবে করোনার চিকিৎসায় দুই হাজার চিকিৎসক এবং প্রায় দুই হাজার নার্স নিয়োগ দেয় সরকার।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫