৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রসারণ

বছরের ৯ মাস বসে থাকে খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রকাশ: জানুয়ারি ১১, ২০২১

আবু তাহের

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে খুলনার গোয়ালপাড়ায় ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয় ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (নওপাজেকো) প্রথমদিকে বাস্তবায়িত কেন্দ্রটি চালু রাখা হতো বিদ্যুতের পিক সময়ে বিদ্যুৎ চাহিদার জোগান দিতে। পরবর্তী সময়ে এটির সক্ষমতা আরো ৭৫ মেগাওয়াট বাড়িয়ে নেয়ায় প্রকল্প শেষ হয় ২০১৭ সালে। তবে সক্ষমতা বাড়ানো হলেও খুব বেশি কাজে আসছে না সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প গ্রীষ্ম মৌসুম ছাড়া বছরের নয় মাসই বসে থাকছে কেন্দ্রটি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তত্ত্বাবধানে থাকা নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের চাহিদা বিবেচনায় ২০১৭ সালে কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হয়। কিন্তু দেশে ওই সময়ে অনেকগুলো কেন্দ্র উৎপাদনে আসায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। ফলে কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টে কেন্দ্রটি রূপান্তরিত হওয়ার পর তা খুব বেশি কাজে আসেনি। এখন বছরের নয় মাসই কেন্দ্রটি বসে থাকে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে গ্যাস তেল দুই ধরনের জ্বালানি ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকলেও উৎপাদনের শুরু থেকেই তেল দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ আর্থিক চাপের মুখে ফেলছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রতিবেদনে (পিসিআর) দেখা গেছে, গ্যাস না থাকায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় ইউনিট প্রতি ১৬ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।

জানা গেছে, এনডব্লিউপিজিসিএল তত্ত্বাবধানে গোয়ালপাড়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১২ সালের ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক সমিতির নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। সিঙ্গেল সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের কেন্দ্রটি উৎপাদনে যায় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রকল্পে অর্থায়ন করে এডিবি, বাংলাদেশ সরকার এবং এনডব্লিউপিজিসিএল। এরপর ২০১৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর সিম্পল সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আসে।

এরপর ২০১৫ সালের শেষের দিকে দেশের সব সিঙ্গেল সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। উদ্যোগের অংশ হিসেবে খুলনার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আপগ্রেড করা হয়। গ্যাস টারবাইন প্রকল্পের সঙ্গে স্টিম টারবাইন যোগ করে আরো ৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হয়। ফলে কেন্দ্রটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ২২৫ মেগাওয়াটে। ২০১৬ সালের ২৫ জুন কম্বাইন্ড সাইকেল হিসেবে উৎপাদনে আসে। ৭৫ মেগাওয়াট যুক্ত করতে প্রকল্পে আরো ৮৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুতের বেশকিছু কেন্দ্র উৎপাদনে এলে অতিরিক্ত বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসে।

বিষটি জানতে চাইলে খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রকল্প পরিচালক প্রধান প্রকৌশলী হাসিবুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, যে সময় কেন্দ্রটি কম্বাইন্ড সাইকেল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, সে সময় কেন্দ্র থেকে ১৫০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। কিন্তু যখন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো, তখন দেশে অনেকগুলো কেন্দ্র উৎপাদনে চলে আসায় অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা প্রয়োজনীয়তা হারায়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কম্বাইন্ড সাইকেল সিস্টেমে রূপান্তরিত হওয়ার সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত ২০১৬ সালের পর থেকে কেন্দ্রটি দুতিন মাসের বেশি প্রয়োজন হয়নি। এছাড়া গ্যাস সংযোগ না থাকায় ডিজেল দিয়ে অতিরিক্ত ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

গ্যাস সংযোগের বিষয়ে কর্মকর্তা বলেন, খুলনায় সে সময় গ্যাস সংযোগ আসবে এমন সম্ভাবনা থেকেই কেন্দ্রটি ডুয়েল ফুয়েল সিস্টেম রাখা হয়। কিন্তু গ্যাস সংযোগ না থাকায় যেসব যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছিল, তা এখন প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। এখন খুলনায় গ্যাস এসেছে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ পেতে হলে কমিশনিং করতে হবে। তিনটি দেশ মিলে কমিশনিং করে। আমরা তাদের অনেক আগেই প্রস্তাব দিয়েছি। জানুয়ারিতে তারা কমিশনিং করতে চেয়েছে কিন্তু কভিডের কারণে তারা এখন কেউ বাংলাদেশে আসতে চাইছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট প্রতি ১৬ টাকা খরচ হয়, যেখানে গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট প্রতি - টাকা খরচ হয়। তবে গ্যাস না থাকায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলেও পিক আওয়ারে কেন্দ্রটি বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে জানান এনডব্লিউপিজিসিএলের কর্মকর্তারা।

এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর খুলনায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা প্রকল্প অবশেষে বাস্তবায়িত হয়েছে। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে খুলনায় গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করে গ্যাস সংযোগ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ নিয়ে যাওয়ার জন্য এনপিজিসিএলের অর্থায়নে এরই মধ্যে আড়ংঘাটা ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে গ্যাস সংযোগের জন্য যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে গ্যাস সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না।

সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংযোগের জন্য আড়ংঘাটা ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের লাইন দিতে হলে যেসব যন্ত্রপাতি সেগুলো দীর্ঘদিন পড়ে আছে। কমিশনিং না হলে সংযোগ দেয়া যাবে না। চলতি মাসে কমিশনিং করবে বিদেশী বেশ কয়েকটি কোম্পানি। সেটি করা শেষ হলে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ দেয়া যাবে। তবে কভিডের কারণে যদি কমিশনিং পিছিয়ে যায়, তাহলে সেটি আরো বিলম্ব হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫