পিআরআইয়ের ওয়েবিনার

বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি উৎপাদনে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান

প্রকাশ: ডিসেম্বর ০৩, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত গাড়ির বাজারটি পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। দেশে আমদানি হওয়া ব্যক্তিগত গাড়ির সিংহভাগই আবার রিকন্ডিশন্ড। অবস্থায় আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে দেশেই গাড়ি উৎপাদনের জন্য অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করছে সরকার। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে ফসিল ফুয়েলচালিত গাড়ি শিল্প থেকে বেরিয়ে আসছে, সেখানে বাংলাদেশেরও উচিত হবে ফসিল ফুয়েলের বদলে বৈদ্যুতিক কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চালানো যায় এমন গাড়ি শিল্পে গুরুত্ব দেয়া। গতকাল গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) আয়োজিত কার মার্কেট ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্টস শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, সরকার গাড়ি নির্মাণ শিল্পে নতুন প্রযুক্তির পথে চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেহেতু সনাতন পদ্ধতির ফসিল ফুয়েল বা পেট্রোলচালিত গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে, তাই সরকার ইলেকট্রিক কার নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করতে প্রস্তুত। এরূপ বিনিয়োগকারীদের সরকার বিনা মূল্যে জমি প্রদানেও প্রস্তুত রয়েছে। সরকার অবশ্যই দেশে পুরনো প্রযুক্তির কোনো গাড়ি নির্মাণ শিল্প স্থাপন করতে দেবে না।

তিনি আরো বলেন, উচ্চ সিসির গাড়িতে আমদানি শুল্ক কমানো হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। বর্তমানে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ১২৮ শতাংশ থেকে ৮২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কাঠামো রয়েছে, যা অত্যন্ত বেশি। শুল্ক কাঠামো কমানো হলে দেশের আরো বেশি সংখ্যক লোক বিলাসবহুল গাড়ি কিনবে। সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে যে অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২০ প্রণয়ন করা হচ্ছে, তাতে সড়ক এবং যানবাহন ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সালমান এফ রহমান।

এর আগে সেমিনারে আলোচ্য বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক . আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, নতুন গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও প্রস্তাবিত অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি বন্ধ করা উচিত হবে না। বিষয়ে ভারতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। তাছাড়া বাংলাদেশে বিক্রীত মোট গাড়ির ৭০ শতাংশ হচ্ছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। যেগুলোর ৮০ শতাংশই জাপান থেকে আমদানি করা এবং স্বল্প ব্যবহূত। দেশে যেন কোনো স্ক্রু ড্রাইভিং শিল্প স্থাপন না করা হয়, নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সে বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে।

মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশে সৌর এবং জ্বালানিভিত্তিক মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে . আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশে গাড়ি নির্মাণ শিল্পকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমরা নতুন প্রযুক্তির গাড়ি নির্মাণের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। দেশে যদি বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ শিল্প গড়ে ওঠে, তাহলে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে।

ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট . জাহিদ হোসেন। প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান . মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস নীতি আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) প্রেসিডেন্ট আবদুল হক এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান . মাশরুর এম রিয়াজ।

আলোচনায় বারভিডার প্রেসিডেন্ট আবদুল হক বলেন, সরকারকে দেশ এবং আঞ্চলিক বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালাটি চূড়ান্ত করতে হবে। জার্মানি, জাপান যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো যেহেতু বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাই আমাদেরকেও উচ্চ প্রযুক্তির পথে এগোতে হবে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান . মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, স্থানীয় বাজার রফতানি বাজার এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ টার্গেট করে যদি নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যায়, তবে দেশে গাড়ি নির্মাণ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকার প্রস্তাবিত নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার আগে সব ঝুঁকিগ্রহীতাদের মতামত গ্রহণ করবে। এছাড়া নীতি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল আলম।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫