প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে মাজার স্থাপন!

প্রকাশ: নভেম্বর ২২, ২০২০

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে ‘জিন্দা পীরের কবর’ রয়েছে দাবি করে সেখানে ‘মাজার স্থাপন’ করেছেন রেনু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। কিছু জায়গাজুড়ে কয়েকটি লাল-সবুজের নিশান টানিয়ে নিয়ম করে সকাল-সন্ধা মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন তিনি। তার দাবি সেখানে ‘কালা শাহ্’ নামে জীন্দা পীরের ‘কবর’ রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘ চার বছর ধরে তিনি সেখানে ‘কবরটি’ প্রতিষ্ঠা করে দেখাশোনা করছেন। উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার সেটিকে উচ্ছেদ করে দিয়েছে। কিন্তু তিনি সেখানে পুনরায় কবরের আকৃতি তৈরি করে লাল-সবুজ নিশান টানিয়ে দেন।

আগে তার এই ‘উৎপাত’ কিছুটা কম থাকলেও সম্প্রতি বেড়ে গেছে বলেও মত স্থানীয়দের। তাদের অভিযোগ, এখন কেউ মাজারের বিরোধিতা করলে তিনি তাকে মারপিট করতেও উদ্যত হন। কার্যালয়ের গেট বন্ধ থাকলে তিনি দেয়াল টপকে সেখানে চলে যান। মাঝে মধ্যে কার্যালয়ের গেটে লোহার ‘রড’ দিয়ে আঘাত করেন।

লাখাই উপজেলা পরিষদের পাশেই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়। তার এই কর্মকাণ্ডে দাপ্তরিক কাছে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

তবে রেনু মিয়ার ভাষ্য, ‘প্রায় ৯০০ বছর আগে থেকে এখানে জিন্দা পীর ‘কালা শাহের কবর রয়েছে। এক সময় আমার দাদা সেটিকে সংরক্ষণ করতেন। এখন ২৭ বছর ধরে আমি সংরক্ষণ করছি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমাকে বাঁধা দিচ্ছেন। অনেক বার কবরটি ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘যখন গাছটি কেটে ফেলা হয় তখন আমি তাদের হাতে পায়ে ধরেছি। বলেছি গাছের যত দাম আছে আমি এর ডাবল দাম দেব। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেননি।’

স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজ উল্লাহর বয়স প্রায় ৬০ বছর। তিনি বলেন, ‘এক সময় এখানে একটি বড় গাছ ছিল। কয়েক বছর আগে উপজেলা প্রশাসন গাছটি কেটে এখানে নতুন ভবন নির্মাণ করে। তবে কোন কবর আমাদের চোখে পড়েনি বা আমরা শুনিনি। এখন রেনু পাগলা নামে এক ব্যক্তি এখানে কবর রয়েছে বলে দাবি করে মাজার স্থাপন করেছে।’

সৈয়দ ইব্রাহীম (৬৫) নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এখানেই বড় হয়েছি। কখনো এখানে কবর থাকার বিষয়টি শুনিনি। তবে এখানে একটি বড় আকৃতির গাছ ছিল, সেটিকে সাধারণ মানুষ অন্য রকম দৃষ্টিতে দেখতো। বেশ কয়েক বছর আগে গাছটি কেটে ফেলা হয়।’

লাখাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেডেরিনারি সার্জন ডা. মো. শাহদাত হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি মাত্র ৮ মাস হয়েছে। আসার পরই দেখলাম এখানে কবর রয়েছে। মাঝে মধ্যে একটা লোক এসে সন্ধ্যাবেলায় মোমবাতি জ্বালাতেন। কিন্তু গেল ৪-৫ দিন ধরে তার উৎপাত বেড়ে গেছে। সকাল-সন্ধ্যা তিনি এখানে এসে এটা-ওটা করেন। প্রায় সময় কার্যালয়ের গেইটে লোহার ‘রড’ দিয়ে আঘাত করেন। এতে গেটটিরও বেশ ক্ষতিও হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি উপজেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি।’

লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘যেহেতু রেনু মিয়া নামে এক ব্যক্তি এখানে কবর রয়েছে বলে দাবি করছে সেহেতু চাইলেই তাকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে না। এটি একটি সেনসেটিভ বিষয়, তাই তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। খুব শিগগিরই আমি সরেজমিনে দেখতে যাবো। এরপর তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেনু মিয়া উপজেলার পূর্ব বামৈ গ্রামের মৃত মারাজ উল্ল্যাহর ছেলে। স্থানীয় লোজনের কাছে তিনি রেনু পাগলা নামে পরিচিত। তার স্ত্রী ও ৪ মেয়ে রয়েছে। পরিবারের দাবি, রেনু মিয়া তার স্ত্রী ও চার মেয়ের দেখাশোনা করেন না। তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘মেয়েদের ভরণ-পোষণ সে করে না। এ ব্যাপারে কিছু বললেই সে বলে ‘কালা শাহ’ অনেক সোনা-গহনা নিয়ে আসছে। কয়েকটা দিন কষ্ট কর, তিনি আমাদের রাজা বানিয়ে দেবেন।’

রেনুর মা সাবেনা খাতুন বলেন, ‘সারাদিন কোথায় থাকে কি করে কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় রাত ১২টার পর বাড়ি ফিরে। সারাদিন কয়েকটি কুকুর নিয়ে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ায়। তবে কারও কোন ক্ষতি করে না।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫