স্ত্রীবাচক শব্দের লিঙ্গবৈষম্যমূলক সংজ্ঞা সংশোধন করেছে অক্সফোর্ড

প্রকাশ: নভেম্বর ০৮, ২০২০

বণিক বার্তা অনলাইন

লিঙ্গ সমতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিস্তৃত পর্যালোচনার পর অভিধানেতে ‘নারী’ সম্পর্কিত শব্দগুলোর সংজ্ঞা হালনাগাদ করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস (ওইউপি)। অক্সফোর্ড অভিধানে এই হালনাগাদের মধ্যে একটি হলো- কোনো নারী কেবল একজন পুরুষের না; বরং যেকোনো মানুষের ‘স্ত্রী’, ‘প্রেমিকা’ কিংবা ‘নারী প্রেমিক’ হতে পারেন।

লিঙ্গ নিরপেক্ষ পরিভাষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পুরুষ সম্পর্কিত পরিভাষাও সংশোধন করা হয়েছে। যেখানে যৌন আকর্ষণ ও ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত আরো অনেক পদ সংশোধন করা হয়েছে। ফলে নারী শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে তালিকাভুক্ত ‘দুশ্চরিত্রা’ ও ‘বিন্ট’ শব্দের মতো অবমাননাকর, আপত্তিকর ও সেকেলে শব্দগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। 

ওইউপির একজন মুখপাত্র বলেন, আমাদের অভিধান সংকলনকারীদের মাধ্যমে ‘নারী ও আরো অনেক সম্পর্কিত শব্দগুলোর’ জন্য একটি বিস্তৃত পর্যালোচনার পর এই পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে। 

গত বছর একটি পিটিশন দায়ের করে ইংরেজী বিচ, বিন্ট, ওয়েঞ্চ ও অন্যান্য আপত্তিকর শব্দ অন্তর্ভুক্ত করে নারীদের প্রতিশব্দগুলোর তালিকা নিয়ে ওই অক্সফোর্ডের অভিধানগুলোর সমালোচনা করা হয়েছিল। লিঙ্গ সমতার প্রচারকারীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, অভিধানগুলোতে পুরুষের জন্য যে উদাহরণগুলো দেয়া হয়েছে, সেগুলো নারীদের তুলনায় অনেক বেশি সম্পূর্ণ ছিল এবং নারীদের অধস্তন বা উপদ্রব হিসেবে উপস্থাপন করে হয়েছিল। 

পিটিশনটিতে এমন সমস্ত বাক্যাংশ ও সংজ্ঞা চাওয়া হয়েছিল, যেগুলো নারীদের বৈষম্যমূলক এবং নির্ভরশীল কিংবা পুরুষের মালিকানা বোঝানো হবে না। এটাতে আরো দাবি করা হয়েছিল, নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে এবং রূপান্তরকামী নারী ও লেসবিয়ান (সমকামী) নারীদের মতো সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিদের উদাহরণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

উইমেন এআইডি ও উইমেনস ইক্যুয়ালিটি দলের নেতারা এই বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রচারণায় একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করে ওইউপিকে ‘সেক্সিস্ট’ সংজ্ঞা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘দুশ্চরিত্রা’ নারীর প্রতিশব্দ নয়। কোনো নারীকে দুশ্চরিত্রা বলা অমানবিক। এটা কেবল দুঃখজনকই নয়, ক্ষতিকরও বটে। নারীকে বিভিন্ন অভিধা দিতে ব্যবহৃত শব্দগুলো অভিধানে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত। 

পিটিশনটি ৩০ হাজার স্বাক্ষরে পৌঁছেছে। এটার সঙ্গে যুক্তরা এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে খুব খুশি। তাদের মতে, অভিযানটি তার ৯০ শতাংশ লক্ষ্য অর্জন করেছে। পিটিশনটি শুরু করা মারিয়া বিট্রিস জিওয়ানার্ডি বলেন, সব অভিধানের উদাহরণগুলোতে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ পরিভাষার অন্তর্ভুক্তি সমকামী নারী ও পুরুষ, উভকামী, রূপান্তরকামী, কোয়েশ্চেনিং (লিঙ্গ নির্ধারণে সিদ্ধান্তহীন) ও হিজড়া (এলজিবিটিকিউআই) লোকদের জন্য একটি বিশাল পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটার মাধ্যমে তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সংহতিকে সম্মান করা হয়েছে। 

তবে তিনি হতাশ হয়েছেন, দুশ্চরিত্রা শব্দটির মাধ্যমে এখন হিংসুটে, অসন্তোষজনক ও অপছন্দনীয় নারীকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এটা এখন আক্রমণাত্মক হিসেবে চিহ্নিত হলেও সমার্থক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে থাকবে। 

তিনি নির্বোধ, বিরক্তিকর ও হাস্যকর পুরুষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত ডিকহেড শব্দের শ্রেণিবিন্যাসেরও বিরোধী ছিলেন। এগুলো কুরুচিপূর্ণ গালি হিসেবে বিবেচিত এবং পুরুষের প্রতিশব্দ হিসেবে তালিকাভুক্ত নয়। 

ওইউপির একজন মুখপাত্র তাদের অভিধান নিয়ে বলেন, আমাদের অভিধান কীভাবে ভাষা ব্যবহার করা হয়- তা নির্দেশ করে না বরং প্রচলনকে প্রতিফলিত করে। প্রকৃতপক্ষে লোকেরা কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেন তার প্রমাণের ভিত্তিতে এটি তৈরি হয়। এই স্বতন্ত্র সম্পাদকীয় পদ্ধতির অর্থ হলো, আমাদের অভিধান ভাষার সঠিক প্রতিনিধিত্ব করে। এমনকি আপত্তিকর শব্দ ও এই শব্দে উদাহরণগুলো আমরা অগত্যা নিজেরাই যুক্ত করি না।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫