কাশ্মীরে প্রশাসনের পীড়ন নীতিতে বিপাকে সাংবাদিকতা

প্রকাশ: নভেম্বর ০১, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন গত বছরের আগস্টে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে ভারতের শীর্ষ সন্ত্রাসবিরোধী এজেন্সির কর্মকর্তারা শ্রীনগর থেকে প্রকাশিত দৈনিক গ্রেটার কাশ্মীরের কার্যালয় এএফপির সাংবাদিক পারভাইজ বুখারির বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর বিষয়টি আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।

সব মিলিয়ে কর্মকর্তারা শ্রীনগরের নয়টি জায়গায় তল্লাশি চালান। এর মধ্যে বিভিন্ন এনজিও কার্যালয় কাশ্মীরের শীর্ষ আন্দোলনকর্মীদের বাড়ি রয়েছে। তারা জানান, এসব প্রতিষ্ঠান আন্দোলনকর্মীরা বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্য বিদেশ থেকে তহবিল পেয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রের গোপন খবর ছিল তাদের কাছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তল্লাশি চালিয়েছেন তারা।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এমন এক সময়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, যখন কাশ্মীর উপত্যকাজুড়ে বাকস্বাধীনতা ভিন্ন মতামতকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে। বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক।

গত বছর কাশ্মীরে অন্তত ১৮ জন সাংবাদিককে সন্ত্রাসবিরোধী তদন্ত কর্মকর্তাদের জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে ডজন খানেক সাংবাদিক। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিবিসির কাছে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

২৮ বছর বয়সী আকিব জাভেদ কাজ করেন আর্টিকেল ১৪ নামের একটি নিউজ ওয়েবসাইটের হয়ে। সরকারের দমননীতির কারণে কাশ্মীরের বেশ কয়েকজন টুইটার ব্যবহারকারী কীভাবে হঠাৎ করেই নীরব হয়ে গেছেন, সে বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন তিনি। কিন্তু প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে আকিব পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। পুলিশ তাকে প্রতিবেদনের শিরোনাম ছবি পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়।

পুলিশের জেরার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আকিব বলেন, নিজেকে একজন বন্দির মতো মনে হচ্ছিল তার। মাস্ক পরিহিত একজন পুলিশের হাতে তাকে চড় খেতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত এপ্রিলে শ্রীনগরে ভারতের প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুর সাংবাদিক পীরজাদা আশিকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। দুজন সন্দেহভাজন জঙ্গির মরদেহ পুনরায় কবর থেকে উত্তোলনের জন্য তাদের পরিবারকে অনুমতি দিয়েছিল পুলিশএমনই এক বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন পীরজাদা আশিক। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণও ছিল তার হাতে। তার পরও পুলিশ দাবি করে, এটি ভুয়া প্রতিবেদন ছিল। এছাড়া জেলা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই প্রতিবেদন তৈরির অভিযোগ আনা হয় আশিকের বিরুদ্ধে।

আশিককে দুই দফায় থানায় তলব করে জেরা করা হয়। জেরা চলেছিল দীর্ঘক্ষণ এবং সময় আশিককে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল বলে জানান তিনি।

গত ১৯ অক্টোবর আঞ্চলিক দৈনিক কাশ্মীর টাইমসের শ্রীনগর অফিস সিলগালা করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর নির্বাহী সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন জানান, অফিস বন্ধ করে দেয়ার পেছনে কোনো কারণ দেখায়নি কর্তৃপক্ষ এবং এর জন্য আগে থেকে কোনো নোটিসও দেয়নি তারা।

গত মে মাসে শ্রীনগরে জঙ্গি নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যকার বন্দুকযুদ্ধে অনেক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন কাশ্মীরওয়ালার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ফাহাদ শাহ। ওই প্রতিবেদনের জন্য পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।

ফটোসাংবাদিক মাসরাত জোহরা বলেছেন, এখন আর কেউই কথা বলতে সাহস পায় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন অনেককে চিনি, যারা সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ পুলিশ এমন পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়া যায় না। বিবিসি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫