ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্টের কাণ্ড

রোগী ভর্তি সরকারি হাসপাতালে অপারেশন ব্যক্তিগত চেম্বারে

প্রকাশ: অক্টোবর ২৮, ২০২০

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ঝালকাঠি

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু) ডা. মির্জা মাহবুবুর রহমান। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মোটা অংকের চুক্তির ভিত্তিতে অপারেশন করান ব্যক্তিগত চেম্বারে। একাধিক ভুক্তভোগী তথ্য-প্রমাণসহ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। প্রাথমিকভাবে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জনও।

অভিযোগে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে জেলার রাজাপুর উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের সাহেব আলীর কন্যা শাহিদা আক্তারের চোখের সমস্যা নিয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু) ডা. মির্জা মাহবুবুর রহমানের ব্যক্তিগত চেম্বারে যান। ৫০০ টাকা ভিজিট দিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী নেত্রনালিতে অপারেশন করার জন্যও রাজি হন শাহিদা।

সাড়ে হাজার টাকায় ডাক্তারের সঙ্গে চুক্তিতে নির্দেশনা অনুযায়ী সদর হাসপাতালে গত ২২ সেপ্টেম্বর ভর্তি হন তিনি। ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঝালকাঠি সদর চৌমাথায় চশমা ঘরে ব্যক্তিগত চেম্বারে তার নেত্রনালির অপারেশন করেন ডা. মির্জা মাহবুবুর রহমান। এরপর পাঠিয়ে দেন সদর হাসপাতালের নিচতলার পূর্ব পাশে নারী চক্ষু ওয়ার্ডে। সেখানে পরদিন চোখের ব্যান্ডেজ খুলে দেয়া হয়। চোখ লাল হয়ে অপারেশন স্থান থেকে এখন পিচুটি ঝরছে।

শুধু শাহিদা আক্তারই নন, এভাবে ডা. মির্জা মাহবুবুর রহমানের চেম্বারে অপারেশন করে নির্দেশনা অনুযায়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন নলছিটি উপজেলার নাচনমহল গ্রামের আশরাফ আলী, শ্রীরামপুর গ্রামের শাহ আলম, ঢাপড় গ্রামের সাফিয়া বেগম, রাজাপুর উপজেলার পুখরীজানা গ্রামের হাবিবুর রহমান খান (অব. পুলিশ), সদর উপজেলার সারেংগল গ্রামের মাসুদ খন্দকার, শহরের নতুন কলাবাগান এলাকার রওশন আরা।

সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাচনমহলের আশরাফ আলী, সারেংগলের মাসুদ খন্দকার, শ্রীরামপুরের শাহ আলম, ঢাপড়ের সাফিয়া বেগম সবাই বৃদ্ধ। তারা চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছেন ডা. মির্জা মাহবুবুর রহমানের কাছে।

একাধিক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাড়ে হাজার টাকা চুক্তিতে সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ছানি অপারেশন করা হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে আগে ডাক্তারকে সাড়ে হাজার টাকা দিতে হয়েছে। যে আগে টাকা দিয়েছে তার অপারেশনই আগে হয়েছে।

নতুন কলাবাগান এলাকার রওশন আরার স্বজনরা জানান, ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে কম্পিউটারে ছানি পরীক্ষা করা হয়েছে। হাজার টাকা চুক্তিতে অপারেশন করা হয়েছে।

রাজাপুর পুখরীজানার হাবিবুর রহমান খান জানান, হাজার টাকা চুক্তিতে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। চোখের ছানি অপারেশন করা হয়েছে তার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু) ডা. মির্জা মাহবুবুর রহমানের জন্য নির্ধারিত কক্ষে জটিল কোনো রোগ নিয়ে চিকিৎসাসেবার জন্য গেলে যন্ত্রপাতি লোকবল নেই বলে ব্যক্তিগত চেম্বারে যেতে উৎসাহিত করেন। বেলা ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে থাকার নিয়ম থাকলেও ১২টার পরই তিনি ব্যক্তিগত চেম্বারে চলে যান। সেখানে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ব্যবস্থাপত্র নিতে হয়। অপারেশন প্রয়োজন হলে চেম্বারেই তিনি অপারেশন করেন।

ব্যাপারে ডা. মির্জা মাহবুবুর রহমানের ব্যবহূত সেলফোন নম্বরে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. আবুয়াল হাসান বলেন, বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। বিষয়টি এখন ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫