সোয়া ৪ কোটিতে বৈশ্বিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা

প্রকাশ: অক্টোবর ২৫, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের ৩০০তম দিন অতিক্রান্ত হচ্ছে আজ। এ সময়ের মধ্যে মহামারী থেকে অতিমারীতে রূপ নিয়েছে কভিড-১৯। মোট দৈনিক বৈশ্বিক সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ডও ভাঙছে নিয়মিতভাবেই। ফলে মহামারী যে সহসাই বিদায় নিচ্ছে, এমন কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী মোট সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা সোয়া চার কোটি ছুঁয়েছে গতকালই। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১১ লাখের কাছাকাছি। 

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গতকাল বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২৪ লাখ মানুষের। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ লাখ ৪৭ হাজারের। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, ওই সময় পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মোট কভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিল ৪ কোটি ২৬ লাখের বেশি মানুষের। মারা গিয়েছে ১১ লাখ ৫১ হাজারের বেশি মানুষ।

এদিকে নিয়মিতভাবে রেকর্ড ভাঙা-গড়ার চিত্র দেখা যাচ্ছে দৈনিক বৈশ্বিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যার দিক থেকেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিসংখ্যান বলছে, গতকাল রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩২২ জনের। এর পরবর্তী সময়ে গতকাল যদি আর কোনো সংক্রমণ শনাক্ত না-ও হয়, তবুও এখন পর্যন্ত এটিই একদিনে বৈশ্বিক সংক্রমণ শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড। বৈশ্বিক সংক্রমণ শনাক্তের আগের রেকর্ডটি হয়েছিল এর একদিন আগেই—গত শুক্রবার। সেদিনও বৃহস্পতিবার তৈরি হওয়া রেকর্ড ভেঙে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল।

ডব্লিউএইচওর প্রাপ্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গতকাল বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৫৭২ জনের। নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৯৯ দিনে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে ১৭ এপ্রিল। ওইদিন গোটা বিশ্বে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১২ হাজার ৪৩৪ জনের। 

এদিকে ইউরোপে আবারো ভয়াবহ আঘাত হেনেছে কভিড-১৯। আমেরিকা মহাদেশের অবস্থা আগে থেকেই বেশ খারাপ ছিল। আফ্রিকায়ও এখন বিদ্যুত্গতিতে ছড়াচ্ছে মহামারীর প্রাদুর্ভাব। এশিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে মহামারীকে প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলেও নতুন করে সংক্রমণ প্রবাহ শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, করোনার এ নতুন প্রবাহ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো ভয়ংকর হয়ে দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে ডব্লিউএইচও সর্বশেষ প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আগেকার সাফল্যই ভবিষ্যৎ সফলতার নিশ্চয়তা নয়। এজন্য অব্যাহতভাবে সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। 

এছাড়া মানবদেহে করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি বলেও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডব্লিউএইচওর ভাষ্যমতে, রোগটির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানা বাকি। এ কারণেই রোগটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এর ফলোআপ তথ্যও নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করতে হবে। 

এছাড়া বিশ্বব্যাপী মহামারীটি মোকাবেলায় প্রযুক্তি ও পরিচালনগত এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে ছাড়িয়ে অর্থায়নই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে উঠতে যাচ্ছে বলে মনে করছে ডব্লিউএইচও।

জনস হপকিন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী করোনায় মোট আক্রান্তের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মোট সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৮৫ লাখ ২০ হাজার মানুষের। মৃতের সংখ্যার দিক থেকেই বিশ্বব্যাপী দেশটি শীর্ষস্থানে রয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ২ লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করতে পেরেছে জনস হপকিন্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এদিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৭৮ লাখ ১৪ হাজার মানুষের। মোট সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। ভারতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষের।

অন্যদিকে সংক্রমণ শনাক্তের মোট সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় হলেও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫৩ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি মানুষের। 

সংক্রমণের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা রাশিয়ায় গতকাল পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১৪ লাখ ৮৭ হাজার মানুষের। পঞ্চম ফ্রান্সে মোট শনাক্তের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ৮৫ হাজার। 

অন্যদিকে মৃতের সংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। যদিও দেশটি সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে দশম অবস্থানে রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে ৮৮ হাজারের বেশি মানুষের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার মানুষের। 

মৃতের তালিকায় পঞ্চম হলেও সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে একাদশতম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত ৮ লাখ ৫৪ হাজার মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৪ হাজার ৭৪৫ জনের।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫