নতুন স্মার্টফোন কেনার বাজেটে কাটছাঁট করছেন ক্রেতারা

প্রকাশ: অক্টোবর ২৪, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

স্মার্টফোনের আন্তর্জাতিক বাজারে করোনা মহামারীর প্রভাব ব্যাপকভাবেই পড়বে। এমন ইঙ্গিতই মিলেছে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের একটি গবেষণায়।

বৈশ্বিক মহামারীর কারণে বেশির ভাগ শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। দেশে দেশে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলায় সব বৃহৎ বাজারেই ভোক্তা ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। পরিস্থিতিতে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২০ সালের স্মার্টফোন বিক্রির প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

গবেষণায় অংশ নেয়া প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন বলেছেন, পরেরবার নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় বাজেট ২০ শতাংশ কমাতে চান তারা।

স্মার্টফোনের সাতটি শীর্ষ ভোক্তা বাজারের (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত, জার্মানি, স্পেন ইতালি) ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতাই তাদের পরবর্তী স্মার্টফোন কেনার পরিকল্পনা বিলম্বিত করছেন। যারা পরের স্মার্টফোন কেনা বিলম্বিত করার পরিকল্পনা করছেন, তাদের সংখ্যাটা ভারতেই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল দেশের ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, পরবর্তী স্মার্টফোন কিনতে অপেক্ষা করবেন তারা। সংখ্যায় যথাক্রমে দ্বিতীয় তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন (৫৮ শতাংশ) ইতালি (৫৬ শতাংশ)

ভারতে উত্তরদাতাদের মধ্যে অর্ধেক নতুন স্মার্টফোন কেনায় ১৩৫ থেকে ২৫০ ডলার (১০ হাজার থেকে ২০ হাজার রুপি) ব্যয় করতে ইচ্ছুক এবং অর্ধেকেরও বেশি আগামী বছর তাদের পরবর্তী স্মার্টফোন কেনার পরিকল্পনা করছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার কারণে দেশটিতে গ্রাহকদের স্মার্টফোন রিপ্লেসমেন্ট সাইকেল গড়ে বর্তমানের ২২ মাস থেকে বেড়ে ২৬ মাস হয়ে গেছে।

ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতীয়দের মধ্যে চীনবিরোধী মনোভাবও ইদানীং প্রবলভাবে বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে স্মার্টফোনের বাজারে। অনেক ক্রেতা চীনের তৈরি নানা পণ্য স্মার্টফোনের নামি ব্র্যান্ড বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি ভারত সরকারও তাদের বাজার থেকে চীনা পণ্য বের করে দিতে হম্বিতম্বি করছে। ভারতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে চারজন উত্তরদাতাই বলেছেন, তারা চীনের তৈরি পণ্য কিংবা স্মার্টফোন কিনবেন না।

গত ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জনেরও বেশি ভারতীয় সৈন্যকে হত্যা করে চীনা সৈন্যরা। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনার প্রভাব পড়ে ভারতের প্রযুক্তির বাজারে, যেটি আসলে চীনা পণ্যে সয়লাব। নভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে ঘটনার যোগে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভারতে স্মার্টফোনের শিপমেন্ট ৫১ শতাংশ কমে যায়! পরেও ধারা অব্যাহত থাকে এবং ভারতে চীনা ব্র্যান্ড অপো, ভিভো, রিয়েলমির চাহিদায় পতন ঘটে।

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সংঘর্ষের আগে করা স্টাডি নিয়ে এক বিশ্লেষক বলছেন, আমরা বিশ্বাস করি ভারত-চীনের লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ক্রেতাদের আচরণের ওপর সুগভীর প্রভাব ফেলতে পারে। কনজ্যুমার পারচেজ ইনটেনশনস-এর সিনিয়র অ্যানালিস্ট পাভেল নয়না বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বহু মানুষের ভবিষ্যৎ আয়কে অনিশ্চিত করে দিয়েছে, যা ভোক্তার আচরণের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং এখন তারা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া অন্য কেনাকাটা সীমিত করে দিয়েছেন।

গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, ভবিষ্যতে স্মার্টফোন ক্রয়ের বাজেট ২০ শতাংশ বা তারও বেশি কমাচ্ছেন, এমন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি স্পেনে (২৭ শতাংশ), এর পরেই রয়েছে ইতালি (২৫ শতাংশ) ২৪ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কাউন্টারপয়েন্ট ধারণা করছে, ধারা ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার নিয়ম বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই মেনে চলতে হচ্ছে। স্মার্টফোনের যে কয়টি শীর্ষ বাজার তার সবগুলোতেই করোনাভাইরাস একটু বেশিই আঘাত হেনেছে। ইউরোপের ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন সবার আগে কভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়েছে। এরপর ভাইরাসটি লণ্ডভণ্ড করে দেয় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে, এখন দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে ভারতকে, যেটি অন্যতম বৃহৎ বাজার।

ভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হয় বলে ক্রেতারা এখন অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছেন, যেখানে পণ্য বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়, কেউবা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে দোকানে গিয়েই পণ্যটা সংগ্রহ করছেন, যাকে বলা হয় অনলাইন-টু-অফলাইন (ওটুও)

কাউন্টারপয়েন্টের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট আরুশি চাওলা বলেন, বাড়তি সচেতনতার অংশ হিসেবে ক্রেতা অনলাইনে বা ওটুও বেছে নিচ্ছেন, যদিও এতে বাড়তি খরচ হচ্ছে। শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলো দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন, যেখানে আরো কর্মদক্ষতার সঙ্গে পণ্যগুলো বিতরণ করা হবে।

সূত্র: কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ ইকোনমিক টাইমস


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫