বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ক্ষুদ্র কারখানা

মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য নিয়ে বিপাকে খুচরা বিক্রেতারা

প্রকাশ: অক্টোবর ২১, ২০২০

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশের মুদি খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানে বিক্রি হওয়া খাদ্যপণ্যের বড় একটি অংশই সরবরাহ করে স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্পগুলো। খুচরা বিপণনের নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মিত নতুন পণ্য সরবরাহের সময় দোকানিদের কাছ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ফেরত নিয়ে যান তাদের বিক্রয়কর্মীরা। কিন্তু করোনাভাইরাসের আঘাতে দেশের অসংখ্য ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবস্থায় তাদের সরবরাহ করা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য নিয়ে বিপাকে আছেন দোকানি বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

কয়েক মাসের লকডাউনে মোড়কজাত বিস্কুট, কেক, চানাচুর, চিপস, বিভিন্ন ধরনের কোমলপানীয়, ড্রিংকিং ওয়াটার, জুস, চকোলেট, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন সহজলভ্য কনজিউমার পণ্যের বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। তবে সম্প্রতি পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলে বন্ধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করে। সময়ে খুচরা দোকানে মজুদ পণ্যের এক-তৃতীয়াংশই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী না আসায় মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

চট্টগ্রামভিত্তিক একাধিক কনজিউমার পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর স্থানীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শুকনো খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এতে তাদের ডিলাররাও মজুদ পণ্য নিয়ে চিন্তায় আছেন।

চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী এলাকার মেসার্স দ্বীপ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মৃদুল দে। চট্টগ্রামভিত্তিক স্থানীয় ব্র্যান্ড পিওরিয়া, রিও ব্র্যান্ডের কনজিউমার পণ্যের ডিলারশিপ ছিল তার। তবে করোনাভাইরাসের কারণে দুটি ব্র্যান্ডের খাদ্যপণ্য উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিক্রি না থাকায় তিনি দেশের বড় একটি খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী ব্র্যান্ডের ডিলারশিপ নিয়েছেন। খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দ্বীপ ট্রেডার্সের গুদামে আগের দুটি ব্র্যান্ডের খাদ্যপণ্যের মজুদ রয়েছে। মজুদ এসব খাদ্যপণ্যের অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিক্রি করে নগদ টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন না তিনি।

মৃদুল দে বণিক বার্তাকে বলেন, পর্যাপ্ত উৎপাদন সরবরাহ না থাকলে পণ্য বিপণন কার্যক্রম করা কঠিন। কোম্পানির উৎপাদন না থাকলে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও উঠিয়ে নেয়া যায় না। তাছাড়া লকডাউনের কারণে মজুদ সিংহভাগ পণ্যই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব পণ্য সরিয়ে নেয়াও সম্ভব নয়। কারণে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পণ্য বিপণনে ঝুঁকছে ডিলারভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

জানা গেছে, নতুন পণ্য না আসায় অনেক খুচরা বিক্রেতা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য মজুদ রাখছেন। এর মধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বণিক বার্তাকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের সংখ্যা বেড়েছে। কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা খুচরা পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকেই জবাবদিহিতার আওতায় এনে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। ফলে করোনাভাইরাসের কারণে একজন বিক্রেতা যতই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন ভোক্তা স্বার্থ বিনষ্ট করলেই ব্যবস্থা দেয়া হচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতা কনজিউমার পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, করোনাকালীন সংকটে বৃহৎ শিল্পের মতো ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে বড় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সেভাবে আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না। কারণে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগোষ্ঠীর কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আগের উৎপাদিত খাদ্যপণ্য বাজারে থাকলেও নতুন করে পণ্য উৎপাদনে না থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো মজুদ মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য উঠিয়ে নিতে পারছে না। এতে পণ্যের ব্র্যান্ড ভ্যালু নষ্ট হলেও ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের নতুন করে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না, যার প্রভাব পড়েছে দেশের কনজিউমার পণ্যের খুচরা বাজারে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫