বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ১৯ শতাংশই হয়েছে ভারতে। যদিও দেশটিতে কভিড-১৯-এর বৈশ্বিক মৃত্যুর ১০ শতাংশ। এ কম প্রাণহানির পেছনে কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন ভারতের জনস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি কে শ্রীনাথ রেড্ডি। তার মতে, তরুণ জনসংখ্যা, অভিজ্ঞতা ও কভিড-১৯ নিয়ে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের আদান-প্রদানের সুবিধা ভারতকে মৃত্যুর পরিমাণ কম রাখতে সহায়তা করেছে।
এখন পর্যন্ত ভারতে কভিড-১৯-এর প্রায় ৭৪ লাখ সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। এটা ৮০ লাখ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ভারতে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ ভাইরাসটি থেকে সেরে উঠেছে এবং ১ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ১৮ হাজার মৃত্যুর তুলনায় অনেক কম। ভারতের মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের থেকে কম। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি পশ্চিমা দেশের শহরগুলোর সঙ্গে ভারতের তুলনা করি, তবে দেখতে পাব ওয়াশিংটন ডিসির চেয়ে দিল্লিতে প্রতি ১০ লাখ সংক্রমণে মৃত্যুর হার তিন ভাগ কম। আর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হওয়া মুম্বাইয়ের সঙ্গে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের তুলনা করলে প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুর হার মুম্বাইয়ে তিন ভাগ কম রয়েছে।
রেড্ডি বলেন, আমি মনে করি ভারতে কম মৃত্যুহারের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত পশ্চিমের চেয়ে আমাদের তরুণ জনসংখ্যা বেশি। আপনার যদি পশ্চিমের মতো ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ বেশি থাকে, তবে অবশ্যই মৃত্যুহার মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার মতো বিষয়গুলো পশ্চিমে অনেক বেশি। যদিও আমাদের মধ্যবয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের সমস্যা রয়েছে। তবে বয়স অবশ্যই আমাদের জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক কবচ হিসেবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, এটাও একটি কারণ যে আমরা ইউরোপের তুলনায় অনেক পরে সংক্রমণের ঝড় অনুভব করেছি। আমাদের এখানে পরে হওয়ার কারণে আমাদের কী করা উচিত, সে সম্পর্কে আমাদের অনেক বেশি জ্ঞান ছিল। এটা কেবল প্রতিরোধের ক্ষেত্রেই নয়, চিকিৎসা ও পরিচালনার ক্ষেত্রেও। আমরা আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক জ্ঞান থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। এছাড়া আমি মনে করি আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিও বেশ কার্যকর হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে কার্যকর ওষুধ সম্পর্কেও বেশ জানাশোনা হয়ে গিয়েছিল। আমাদের বয়স, আগেই চিকিৎসা সম্পর্কে জানাশোনা ও তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা আমাদের মৃত্যুহার কমাতে সহায়তা করেছে। আমরা এখনো অনেক সংক্রমণ হারাচ্ছি। কারণ যত দ্রুত সংক্রমণগুলো শনাক্ত করা উচিত আমরা তা করতে পারছি না। এ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও লোকেরা যখন হাসপাতালে পৌঁছে, তখন তাদের কার্যকর চিকিৎসা শুরু হচ্ছে এবং এটা জীবন বাঁচাতে সহায়তা করছে।
দ্য প্রিন্ট