যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ের (ডিওজে) সঙ্গে বহুল কাঙ্ক্ষিত সমঝোতায় পৌঁছতে পারল গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপ। মালয়েশিয়ায় ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারিতে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতায় যুক্তরাষ্ট্রে যে মামলা হয়েছিল, তা নিষ্পত্তিতে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি জরিমানা গুনছে গোল্ডম্যান স্যাকস। বিষয়সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর ব্লুমবার্গ।
সূত্রগুলো বলছে, এ সমঝোতার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মামলার সম্মুখীন হতে হবে না। ডিওজের সঙ্গে এই সমঝোতা পূর্ববর্তী পূর্বাভাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এ সমঝোতায় শীর্ষস্থানীয় এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি বড় অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা পেল। মালয়েশিয়ার ওয়ানএমডিবি তহবিল নিয়ে কয়েক বছর ধরে চলা তদন্তে ব্যাংকটির ব্যাপক সুনামহানি হয়েছে। এর আগে মালয়েশিয়ার সঙ্গেও ২৫০ কোটি ডলারে বিরোধ নিষ্পত্তিতে যায় গোল্ডম্যান স্যাকস। ফলে গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কভিত্তিক কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ তুলে নেয় মালয়েশিয়া।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্যে অপারগতা প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিচার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীরব থাকে।
মালয়েশিয়া, ডিওজেসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে গোল্ডম্যান স্যাকসের। বিষয়সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, কোম্পানিটি যদি আইন ও শর্ত লঙ্ঘন করে তাহলে আর্থিক জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। গোল্ডম্যান সিঙ্গাপুর বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য দ্য মনিটারি অথরিটি অব সিঙ্গাপুর ও অ্যাটর্নি জেনারেলের চেম্বার এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওয়ান মালয়েশিয়ার ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ বা ওয়ানএমডিবি হিসেবে পরিচিত মালয়েশিয়ার ওই উন্নয়ন তহবিলের জন্য ২০১২ ও ২০১৩ সালের মধ্যে ৬৫০ কোটি ডলার সংগ্রহের সময় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত হয়ে পড়েছিল গোল্ডম্যান স্যাকস। মালয়েশিয়ার তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ ওই অর্থ তছরুপ করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। গোল্ডম্যান স্যাকসের বিনিয়োগ ব্যাংকিং শাখা তখন বন্ড বিক্রির মাধ্যমে ৬০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছিল।
সরকারি ওই বিনিয়োগ তহবিলের অর্থ ব্যয় করে নাজিব রাজাক সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কন্ডো, গহনা ও শিল্পকর্ম ক্রয় করেছিল। এ দুর্নীতি তদন্তে এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সরকারগুলো মাসের পর মাস অনুসন্ধান চালিয়ে আসছে।
গোল্ডম্যান স্যাকস সবসময়ই দাবি করে আসছে, ওই আর্থিক কেলেঙ্কারির পেছনে প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি যুক্ত নয়। ব্যাংকটির কিছু অসাধু কর্মী নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে ওই দুর্নীতিতে যুক্ত হয়ে পড়েছিল। উন্নয়ন তহবিল থেকে কীভাবে অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে চলে গিয়েছে, সে বিষয়ে তারা তেমন কিছু জানত না—এমনটাই দাবি গোল্ডম্যান স্যাকসের।
অর্থ পাচার এবং বিদেশী ঘুষ আইন লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন টিম লেইসনার নামে গোল্ডম্যান স্যাকসের সাবেক এক কর্মকর্তা। অন্য এক নির্বাহীর বিরুদ্ধেও বিদেশে ঘুষ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ওয়ানএমডিবি তহবিলটি গঠন করা হয়। এর প্রধান উদগাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। ২০১৫ সালে ব্যাংক ও শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতার এই তহবিলের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তোলে যে এই তহবিল থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে এবং ব্যক্তিগত হিসাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব অর্থ বিলাসবহুল বাড়ি, বিমান, দামি চিত্রকর্ম কেনাসহ নানা বিলাসী কর্মকাণ্ডে ব্যয় হয়েছে।