করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

ফ্রান্সের শহরে শহরে কারফিউ

প্রকাশ: অক্টোবর ১৯, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা প্রথমবারের মতো একদিনে রেকর্ড চার লাখ ছাড়িয়েছে। ইউরোপজুড়ে কারোনাভাইরাস সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার দিন শেষে এমন রেকর্ড শনাক্তের তথ্য সামনে এসেছে। অন্যদিকে ফ্রান্সে দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্যারিসসহ আটটি শহরে কারফিউ জারি করেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। গত শনিবার ফ্রান্সের এসব শহরের রাস্তা জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে।

ইউরোপ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের ঢেউ সাফল্যের সঙ্গে সামলে নিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অঞ্চলটি নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে ইউরোপে প্রতিদিন গড়ে লাখ ৪০ হাজার নতুন সংক্রমণের তথ্য সামনে এসেছে। এখন সংক্রমণের হার বিবেচনায় ভারত, ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত সংক্রমণের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে ইউরোপ অঞ্চল।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩৪ জনই ইউরোপের দেশগুলোতে শনাক্ত হচ্ছে। ইউরোপ অঞ্চলে এখন প্রতি নয়দিনে ১০ লাখ নতুন সংক্রমণের তথ্য মিলছে। ইউরোপজুড়ে গতকাল পর্যন্ত এক সপ্তাহে মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকই শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস স্পেনের মতো প্রধান ইউরোপীয় দেশগুলোতে। গত সাতদিনে ১৯ হাজার ৪২৫ জন নতুন সংক্রমিত নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফ্রান্স। এর পরই রয়েছে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, স্পেন নেদারল্যান্ডস।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে ইউরোপের একাধিক দেশ এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় চলাচল সীমিত করে দেয়া হয়েছে। সেখানে আজ থেকে সিনিয়র স্কুল (১৩ থেকে ১৮ বছর) বন্ধ ঘোষণা করা হবে। রাশিয়া অনলাইন শিক্ষায় জোর দিচ্ছে। দক্ষিণ আয়ারল্যান্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুই সপ্তাহ এবং রেস্তোরাঁগুলো চার সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চল কর্তৃপক্ষ পানশালা রেস্তোরাঁগুলোকে ১৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। স্প্যানিশ অঞ্চলে রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবার খাওয়া যাবে না, শুধু কিনে নেয়া যাবে। এছাড়া জিম, কালচারাল ভেনু ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ পূর্ণ করতে পারবে এবং দোকানপাট বড় বড় শপিংমল ধারণক্ষমতার ৩০ শতাংশ মানুষকে প্রবেশ করাতে পারবে। জার্মানিতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বার রেস্টুরেন্ট অবশ্যই আগেভাগে বন্ধ করে দিতে হবে।

অন্যদিকে প্যারিসসহ ফ্রান্সের আরো আটটি শহরে শনিবার রাতটি ছিল একেবারেই জনমানবশূন্য, ভুতুড়ে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির বেশকিছু শহরে শনিবার রাত থেকে মাসব্যাপী কারফিউ জারি হয়েছে। প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে ইউরোপের অন্যতম হটস্পট ফ্রান্স। দেশটিতে ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। ফলে সেখানে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।

অবশ্য কারফিউ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন রেস্তোরাঁ মালিকরা। বসন্তে দুই মাসের দীর্ঘ লকডাউনে তাদের ব্যবসার বিরাট ক্ষতি হয়। সম্প্রতি শুধু রেস্টুরেন্ট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, যদিও নতুন করে কারফিউ আসায় তাদের আবারো ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতালিতেও ফের কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছিল ইতালিতে। এখন নতুন করে ইতালিতে ফিরেছে সংক্রমণ। শনিবার দ্বিতীয় দফায় রেকর্ড সংক্রমণ হয়েছে।

ইতালির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, জিম, পুল শৌখিন খেলাধুলার মতো কম জরুরি বিষয়গুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।

ফ্রান্সে রাজধানী প্যারিস, মার্সেই, লিওঁ, লিল তুলুজসহ মোট নয়টি শহরে দুই কোটি মানুষকে কারফিউর আওতায় আনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, হাসপাতালগুলো যেন রোগীতে ভরে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে কারফিউর প্রয়োজন ছিল।

যদিও অনেকেই কারফিউর কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতি নিয়ে চিন্তিত। প্যারিসে ইতালিয়ান রেস্টুরেন্ট বিয়াঙ্কোর ম্যানেজার স্তেফানো আনসেলমো বলেন, কিছু কর্মী নিশ্চিতভাবেই চাকরি হারাবে। এটা বিপর্যয়।

ফ্রান্সে শনিবার রেকর্ড ৩২ হাজার ৪২৭ মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। তার আগের দিন ছিল ২৫ হাজার ৮৬ জন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫