সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে (অক্টোবর, ২০১৯-সেপ্টেম্বর, ২০২০) যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার, যা তাদের জিডিপির ১৬ শতাংশ। মার্কিন রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাজেট ঘাটতি ও জিডিপির এ অনুপাত ১৯৪৫ সালের পর সর্বোচ্চ। মূলত অর্থনীতির ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব প্রশমনে সরকার বিপুল অংকের ব্যয় কর্মসূচি হাতে নেয়ায় এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।
গত দশকের ভয়াবহ আর্থিক সংকটও যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি এতটা বাড়াতে পারেনি। ২০০৯ সালে ওই সংকট শেষ হওয়ার সময় দেশটির বাজেট ঘাটতি ও জিডিপির অনুপাত ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। ২০১৫ সালের দিকে এ অনুপাত অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারী এসে পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলেছে।
সরকারি ব্যয় বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার অনেক কমে নামানো হয়েছে। ফলে সমাপ্ত অর্থবছরে দেশটিতে সুদ বাবদ আয় ৯ শতাংশ কমে গেছে। বিপরীতে দেশটিতে সার্বিক ঋণের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে তাদের জাতীয় অর্থনীতির আকারের চেয়েও বেশি হয়েছে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষা ও মেডিকেয়ারের জন্য আবেদন বেড়েছে। ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ জাতীয় ঋণের পরিমাণ জিডিপির দ্বিগুণে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন রাজস্ব বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৬ লাখ ৫৫ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক স্থবিরতায় চাকরি হারানো কর্মী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে সরকারের ব্যয় এতটা বেড়েছে।
একদিকে ব্যয় বেড়েছে, অন্যদিকে আয় কমেছে। কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়া ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আয় হারানোর কারণে ব্যক্তিগত ও করপোরেট আয়কর প্রদান কমেছে। এতে গত অর্থবছরে মার্কিন সরকারের রাজস্ব আহরণও কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আনএমপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রামের অধীনে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। আর স্টেট আনএমপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রামের অধীনে ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছিল। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে আয় সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ও মেডিকেয়ার খাতে ব্যয় বাড়াতে বাধ্য হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের। এ সময় খাতটিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে।
খুচরা বিক্রি বেড়েছে: সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রিতে প্রত্যাশাতীত প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। গত মাসে দেশটিতে খুচরা বিক্রি বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। আগের মাসে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল দশমিক ৬ শতাংশ। মূলত ভোক্তারা মোটরগাড়ি ও পোশাক কেনা বাড়িয়ে দেয়া, রেস্তোরাঁগুলোয় তাদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়া ও অবকাশ সেবা গ্রহণ বাড়িয়ে দেয়ার কারণেই খুচরা বিক্রিতে এ আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রয়টার্সের একটি জরিপে অর্থনীতিবিদরা গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রিতে দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তবে বাস্তবে এ প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মোটরগাড়ির বিক্রি বেড়েছে বছরওয়ারি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া মোটরগাড়ির জ্বালানি, নির্মাণসামগ্রী ও খাদ্য সরবরাহ সেবা খাতে বিক্রি বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।