আমার গ্রাম হবে আমার শহর

প্রকাশ: অক্টোবর ১৩, ২০২০

এম এ মান্নান

গ্রামকে শহরে রূপান্তর আমাদের সরকারের একটি ঘোষিত নীতি। উন্নয়ন বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন হলো গ্রামকে শহরে রূপান্তর করা। অর্থাৎ শহরের সব ধরনের সুবিধা ও উন্নয়নের প্রবহমান ধারা গ্রামে পৌঁছে দেয়া। এ দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগের নিজস্ব চিন্তাধারা এবং সংস্কৃতি থেকে। এ সংগঠনের রাজনৈতিক দর্শনে গ্রামকে শহরে রূপান্তরের বিষয়টি গভীরভাবে প্রোথিত। ঐতিহাসিকভাবেই সেই দর্শন বর্তমান সরকার দক্ষতা ও সময় উপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমেই বাস্তবায়নের কাজ করছে।

পল্লী উন্নয়ন তথা গ্রামীণ রূপান্তরের বিষয়টি স্বশাসন ও স্বনির্ভরতার সঙ্গেও যুক্ত। সেদিক থেকে এটি আমাদের মুক্তি সংগ্রামের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত নিজস্ব জমি-ভূমি ও ভূখণ্ডকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আগে সেটি আমাদের হাতে ছিল না। দখলদারির মধ্যে ছিল। বিদেশ থেকে আগত শাসকরা এখানে শাসন করেছে। ঔপনিবেশিক শাসনের নিগড়ে এখানকার মানুষ বন্দি ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছি, স্বশাসন নিশ্চিত করেছি। দ্বিতীয়ত অর্থনৈতিক মুক্তি। এটি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে স্পষ্ট ছিল। তিনি প্রায়ই বলতেন, অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া আমাদের স্বাধীনতার আসলে কোনো অর্থ হবে না। ভুখা-নাঙ্গা, অন্নহীন মানুষ স্বাধীন হতে পারে না। সুতরাং স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি প্রয়োজন। এ চিন্তারই প্রতিফলন ঘটেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচির মাধ্যমে। 

মনে রাখতে হবে, সারা বিশ্বেই নগরায়ণের বিবর্তন হয়েছে গ্রাম থেকে। গ্রামের কিছু লোক একখানে জড়ো হয়ে শহর গড়ে তুলেছে। শহরে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকে, যা গ্রামে অনেক ক্ষেত্রে লভ্য নয়। এর কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা এবং উন্নত যোগাযোগ সবই শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সর্বোপরি বরাবরই প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ছিলেন শহরেই। ফলে বেশির ভাগ উন্নয়ন এখানেই হয়েছে। অতীতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল সবই শহরে ভালো ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা সবকিছু এর মধ্যে ছিল। ফলে গ্রামগুলো তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে ছিল। সারা বিশ্বেই প্রায় সমরূপ একটি ধারা ছিল যে শহরগুলো ক্রমেই বড় হয়েছে এবং সেগুলো ছিল আন্তঃসংযুক্ত। কিন্তু গ্রামগুলো বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে দেশের অর্থনীতি যত এগিয়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে; তত শহরের সম্প্রসারণের সঙ্গে গ্রামেও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের চিরায়ত বিচ্ছিন্নতা কমে এসেছে, গ্রামের রূপান্তর ঘটেছে। পৃথিবীজুড়ে শহরগুলোর মূল আকর্ষণ ছিল বিদ্যুৎ। এটিই পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক। একসময় গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। এখন সেখানেও বিদ্যুৎ যাচ্ছে।

আমাদের দলের যে রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মানুষের উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য নিরসন, গ্রাম ও শহরের মধ্যকার ব্যবধান কমিয়ে আনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরাবরই গ্রামকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। নির্বাচনী ইশতেহারেও সে বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাধীন দেশে জাতির পিতা সংবিধানে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার যুক্ত করেছিলেন। বর্তমান সরকার প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। সে লক্ষ্যেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।


উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সব সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরো বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপ ভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দেয়া হবে। গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবা কেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। আর এসব উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।

গ্রাম ও শহরের মধ্যকার তফাত মূলত সুযোগ-সুবিধায়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে শহরে একজন নাগরিক যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, সেগুলো গ্রামেও জোগানো হবে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষ গ্রামমুখী হবে, তখন গ্রামগুলো শহর হয়ে উঠবে। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে যদি বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়, রাস্তাঘাট যদি উন্নত করা যায় তাহলে উল্লিখিত কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন ঘটবে। পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এরই মধ্যে বেশির ভাগ জায়গায় পৌঁছে গেছে। আর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হাজার হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করেছে। সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করেছে, মাঠের উন্নয়ন করেছে, হাট-বাজারের উন্নয়ন করেছে। কাজেই গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে, আবার উন্নত সড়কও পাওয়া গেছে। গ্রামের স্কুলগুলোর অবকাঠামোর ব্যাপকতর উন্নয়ন করা হয়েছে। সেদিক থেকে সুযোগ-সুবিধায় গ্রাম ও শহরের মধ্যে তেমন পার্থক্য থাকছে না। 

এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে এক-দুটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বাংলাদেশে চলছে। এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষ, বিশেষত নারীরা মোটামুটি মানের প্যারাডেমিক-স্বাস্থ্যকর্মীর সান্নিধ্য লাভ করছেন। সেখানে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছেন, বিনা মূল্যে ওষুধও পাচ্ছেন। চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নতি, হাটবাজারের উন্নতি, সর্বোপরি বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে সর্বত্র। গ্রামের রাস্তাগুলো উপজেলা-জেলা ও মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ফলে ঘর থেকে বেরিয়েই গ্রামের মানুষ হেঁটে কিংবা রিকশায় বড় সড়কে উঠতে পারছে। তার মানে সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের গ্রামগুলোর সংযুক্তি ঘটল, আর বিচ্ছিন্ন থাকল না। এ বাস্তবিক কাজগুলো করে আমরা গ্রামকে শহরে রূপান্তর করছি। দৈহিকভাবে তো আর শহর করা হবে না। ভৌত অবয়ব একই থাকবে, কিন্তু শহরের নাগরিকরা যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে গ্রামের মানুষরাও যেন সেই সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে, সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি আমরা। এজন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ই নিজের ভূমিকা সেখানে রাখছে। পালন করছে। সবচেয়ে অগ্রগামী ভূমিকায় আছে আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তারা ভৌত চেহারার আমূলভাবে বদলে দিয়েছে।

বিগত সময়ে আরেকটি জরুরি বিষয় অবহেলিত ছিল, সেটি হলো কৃষি। কৃষি মানেই গ্রাম। কৃষির যা কিছু করা হয় গ্রামেই করা হয়। গ্রাম থেকে কৃষকরা বরাবরই খাদ্যের জোগান দেয়া হলেও সেখানে খুব টানাটানি ছিল। মানুষ এক বেলা পেলে অন্য বেলায় পায়নি। উপোসও থেকেছে। নিত্য অভাব ছিল। সবার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা কৃষির পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছি। আমাদের সরকার নানা ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে সার দিচ্ছে, কীটনাশক দিচ্ছে, কৃষি উপকরণ সরবরাহ করছে। এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি যেন কৃষকরা ব্যবহার করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এগুলো আগে ছিল না। কাস্তে, লাঙল, মই এসবই ছিল আমাদের কৃষিকাজের প্রধান অবলম্বন। আমরা এখন ধান লাগানো, সেচ দেয়া, ধান কাটা, ধান মাড়াই যন্ত্রের মাধ্যমে করছি। এমনকি যন্ত্র দিয়ে ধান শুকানোও হচ্ছে।  আগে মা-চাচিরা হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে রোদে শুকাত। এখন সেটি করতে হয় না। মেশিন দিয়ে করা হয়। ১০০ শতাংশ এখনো যান্ত্রিকীকরণ ঘটেনি। কিন্তু কাজ শুরু হয়ে গেছে। সাধারণত একবার শুরু হয়ে গেলে একের পর এক এটি বাড়তে থাকে। এটিই নিয়ম। সরকার সঠিকভাবে প্রণোদনাটা দিয়েছে, দিচ্ছে। এখন ব্যক্তি খাতের অনেকেই এগিয়ে এসেছে। এখানেও সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। যান্ত্রিকীকরণ একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে উৎপাদন বেড়েছে, পরিমাণ বেড়েছে। এখন আর উপোস থাকতে হয় না আমাদের। কভিড-১৯ মহামারীতে ভাতের জন্য কারো কষ্ট হয়নি। গত কয়েক বছরে আমরা এ কাজগুলো করতে পেরেছি। ফলে গ্রাম অনেক এগিয়ে গেছে, এটি বলা যায়। 

দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। দেশের কৃষিজ কাজ যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি অকৃষিজ খাতও বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি অকৃষি খাত, বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ পরিবহন ও যোগাযোগ এবং গ্রামীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবারের আয় ও কর্মসংস্থানে অকৃষি খাতের অবদান বাড়ছে। তবে আমার কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে চাই। বর্তমানে কৃষি উৎপাদন অনেক বেড়েছে। তবে বাজার ও বিপণন ব্যবস্থায় কিছুটা দুর্বলতা রয়ে গেছে। বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য সড়কের উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর শাখা গ্রামে বিস্তৃত করায় উৎসাহ দিচ্ছি আমরা। কিংবা অনলাইনে সেবার সম্প্রসারণে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। সুতরাং এখানে এটি একটি ফ্যাক্টর। এখন ব্যাংকে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং শুরু হয়েছে। এগুলোকে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং এগুলো আমরা করছি, যাতে গ্রামে লোকজন সহজেই কাজ করতে পারে। ইন্টারনেট এখন গ্রামেও সহজলভ্য। মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন গ্রামের লোকজনের আছে। অপারেটরগুলো নানা ইন্টারনেট প্যাকেজ দিচ্ছে। গ্রামের নিরক্ষর মহিলা সহজেই ইংরেজি অক্ষর টিপে ডিজিটাল মাধ্যমে কল করতে পারে। এর মাধ্যমে সাক্ষরতারও সম্প্রসারণ ঘটছে। কৃষক কৃষি সম্পর্কে জানতে পারে। সবদিক থেকে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে, ঘটছে। সরকার নিজে অনেক কিছু করতে পারে না, কিন্তু একটু এগিয়ে দেয়ার কাজটি করে থাকে, বাকিটা মানুষ নিজেরাই করবে। এ কাজটি আমরা সার্থকভাবে করছি বলেই আজকে সবদিক থেকে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। 

তরুণদের জন্য আজকে গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু ভুললে চলবে না যেন বিশ্বায়নের ফলে গোটা পৃথিবী এখন এক গ্রাম হয়ে যাচ্ছে। যদিও অনেকেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে, ভিসা দেয় না; কিন্তু মানুষকে কি আটকাতে পারছে? লাখে লাখে মানুষ এদিক-সেদিক যাচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, মানুষ আবহমান কাল থেকে ঘোরাফেরা করেছে। বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় অন্যায় হলো রাষ্ট্রীয় বেড়া/বর্ডার। চার-পাঁচশ বছর আগে বড় বড় সাম্রাজ্য ছিল, শাসক ছিল; কিন্তু কোনো সীমান্ত ছিল না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য কোনো পাসপোর্ট লাগত না। মানুষ ইচ্ছামতো ঘোরাফেরা করেছে। তবে একটি বিভাগ ঠিকই ছিল, শুল্ক বিভাগ। কাস্টমস ডিউটি দিতে হতো। বড় বড় রাস্তায় তারা তল্লাশি চৌকি বসাত। বর্তমান দেশে দেশে দেয়াল তোলা হচ্ছে। মানুষকে আবদ্ধ করা হচ্ছে। এটি হলো আধুনিক সভ্যতার একটি নেতিবাচক দিক। এখন যেসব দেশ মানুষকে আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে তারা আমাদের সম্পদ লুটপাট করেছে, ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়েছে। এখন বড় বড় কথা বলছে। কিন্তু মানুষকে কোনোভাবে আটকাতে পারছে না। ভূমধ্যসাগরে ডুবেও মরছে, তবু যাচ্ছে। সেদিক থেকে তরুণদের নিজের গ্রাম, নিজের জেলা  ও নিজের দেশ বললে হবে না। সারা বিশ্বই এখন আমার—এ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের তরুণদের ধারণ করতে হবে। যেখানে কাজ পাওয়া যাবে, সেখানেই যেতে হবে। তবে বেলা শেষে আমরা আমার মায়ের কোলে ফিরে আসব—এটিই হলো আসল কথা। 

তরুণরা সারা বিশ্বের নাগরিক। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে বাংলাদেশের তরুণদের আমরা যেন বিশ্বজনীন চিন্তা করি। বিশ্ব মানে শুধু নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নয়। সব রাষ্ট্র, সব বর্ণ, সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। সংকীর্ণ চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ—চারদিকেই আমরা ছড়িয়ে পড়ব। এটিই হলো মূল কথা। আমাদের স্বাধীনতার বার্তাও ছিল তাই। অসাম্প্রদায়িকতা শুধু ধর্ম নয়, বর্ণ এবং অর্থনীতিও বোঝায়। কর্মক্ষেত্রে আমরা যেন সবাইকে নিয়ে সমান মর্যাদায় চলতে পারি। কোনো সুনির্দিষ্ট দেশ, সুনির্দিষ্ট কোনো পথ, কোনো সুনির্দিষ্ট সংস্কৃতি শ্রেষ্ঠ, আর কিছু নেই—এ ধারণা ভুল। সব মানুষের মর্যাদা আছে। সব মত-পথ, সব খাবার, সব পরিচ্ছদ সবার সমান মর্যাদা আছে। এটি আমাদের বাঙালি তরুণদের মাথায় আনতে হবে। মনটাকে প্রসারিত করতে হবে।

উন্নয়নকে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে চাই। উন্নয়ন বরাদ্দে গ্রামকে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দরিদ্রবান্ধব শিক্ষা, কৃষি ও গ্রামমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। উন্নয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের বরাদ্দে কোনো বৈষম্য আছে কিনা সেটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সুষম উন্নয়নে সরকারের নজর আছে। আগামীতে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ অঞ্চলে উন্নয়ন বরাদ্দ আরো বাড়বে। দারিদ্র্য বিমোচন ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা যে কাজ করছি সেগুলোকে আরো মানবিক করা হচ্ছে। হাওড় অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি নদীভাঙন এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে চেষ্টা থাকবে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ, চরাঞ্চলের মানুষসহ পিছিয়ে পড়া সব ধরনের গ্রামীণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রামীণ উন্নয়ন করতে পারলে উন্নয়ন সামগ্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন হবে। সে লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমার গ্রাম হবে আমার শহর।

এম এ মান্নান: পরিকল্পনামন্ত্রী

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫