পোশাক খাত

কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিল্প মালিকরা

প্রকাশ: অক্টোবর ১২, ২০২০

বদরুল আলম

সাত মাসের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারী চলছে দেশে। শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কমে এলেও তা শূন্যের কোটায় নামেনি এখনো। এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা জেঁকে বসেছে। শীত সামনে রেখে এখনই সতর্ক হওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকেও। এ পরিস্থিতিতে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৈরি পোশাক খাতের শিল্প মালিকরা। 

চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বড় ধাক্কা লাগে তৈরি পোশাক শিল্পে। সংক্রমণ রোধে টানা এক মাস বন্ধ ছিল কারখানা। কারখানা খোলার সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও এড়ানো যায়নি সংক্রমণ। সরকারি এক সংস্থার তথ্যমতে, মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশের শ্রমঘন শিল্প খাতের শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ছয়জন। তাদের মধ্যে চারজনই ছিলেন পোশাক শিল্পের। এ অবস্থায় দ্বিতীয় ঢেউ এলেও যাতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকরা। 

৫ অক্টোবর সব সদস্যের উদ্দেশে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সেখানে বলা হয়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ এখনো চলমান রয়েছে। আসন্ন শীত মৌসুমে এ ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আপনাদের কারখানায় কর্মরত কোনো শ্রমিক/কর্মকর্তা/কর্মচারী করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হলে তাদের রিপোর্ট বিজিএমইএকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। 

সদস্যদের কভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা জানিয়ে চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা শুধু সাবধানতা অবলম্বন করছি এবং কারখানাগুলোকে সতর্ক করছি। 

এদিকে বিকেএমইএ সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর সীমিত আকারে কারখানা চালুর দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তবে এখন আর সীমিত আকারে কারখানা চালু রাখার কোনো পথ নেই। এমনিতেই অনেক কারখানা বন্ধ। অনেকে আবার সচল থাকলেও পূর্ণ সক্ষমতায় উত্পাদনে নেই। এ পরিস্থিতিতে কারখানাগুলোতে মৌলিক কিছু বিষয় অনুসরণের বিষয়ে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। যেমন হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ করা, পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি। 

বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, কভিড মোকাবেলায় সীমিত আকারে কারখানা সচল রাখার বিষয়টি এখন আর বাস্তবসম্মত না। তবে মৌলিক বিষয়গুলো কঠোরভাবে অনুসরণে কারখানাগুলোয় কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় এ বিষয়গুলোকে কঠোরভাবে অনুসরণের তাগিদ কারখানা কর্তৃপক্ষগুলোকে দেয়া হচ্ছে। 

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সীমিত আকারে ২৬ এপ্রিল থেকে সচল হতে শুরু করে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন পোশাক খাতের কারখানা। কারখানায় প্রবেশের সময় কর্মীদের শরীরে নিয়মিত তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা ও বিভিন্ন জীবাণুনাশক উপকরণ সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল মালিকদের। কোনো শ্রমিকের শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়। শ্রমিকদের মাস্ক পরে থাকা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে বলা হয়েছে। কারখানায় দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেও আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা। পাশাপাশি কাজের সময় কারখানা ভবনে অপ্রয়োজনীয় চলাচল সীমিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি যেসব কর্মী লোডিং ও আনলোডিং করবে, তাদের অন্য কর্মীদের থেকে আলাদা রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া কারখানার নিয়োগকর্তাকে শ্রমিক এবং নিজেদের মধ্যে স্বচ্ছ যোগাযোগ চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পিএ সিস্টেমের মাধ্যমে দিনে অন্তত চারবার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও নির্দেশনার বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়। 

সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে কারখানাগুলো কার্যক্রম শুরুর পর কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চারটি উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সেই পরিদর্শনে অধিকাংশ কারখানায়ই যথাযথ সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার প্রমাণ পাওয়া যায়। 

শ্রমিকদের মধ্যে দ্রুত কভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকলেও আনুষ্ঠানিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আশঙ্কার চেয়ে সংক্রমণের পরিমাণ কম। গত ২৩ মে পর্যন্ত কভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৭০। এরপর গত ১ জুন এ সংখ্যা বেড়ে হয় ২৫১। সর্বশেষ গতকাল ১১ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত শ্রমিকের সংখ্যা ৪৭৯। আক্রান্ত শ্রমিকরা বিভিন্ন খাতের মোট ২০৪টি কারখানার সঙ্গে যুক্ত, যার ১০৯টিই পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য কারখানা। এ প্রেক্ষাপটেই কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে শিল্প মালিক প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো। 

কভিড সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইলে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কভিড আক্রান্ত হওয়া শ্রমিক সংখ্যা ৫৫৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫০৩। বাকিরা চিকিত্সাধীন ও সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় আছেন। কর্মস্থলে যেসব পোশাক শ্রমিক কভিড-১৯ আক্রান্ত হবেন, তাদের জন্য তিনটি হাসপাতালের ৫০০ শয্যা তৈরি রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল বিজিএমইএ। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫