নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে বৈরিতা চলছে চার দশকের বেশি সময় ধরে। এ অঞ্চলে কর্তৃত্ব ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আবারো সংঘর্ষে জড়াল ককেশাসের দুই দেশ। গতকালের সামরিক সংঘর্ষে বেশকিছু মানুষ হতাহত হয়।
সাবেক দুই সোভিয়েত দেশের মধ্যে অঞ্চলটি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং মাঝেমধ্যেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। অঞ্চলটি আজারবাইজানের বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও রয়েছে, যদিও এখানে নিয়ন্ত্রণ আর্মেনিয়ারই।
গতকালের সংঘর্ষ নিয়ে আর্মেনিয়া বলছে, বিমান ও কামান যোগে আক্রমণ করেছে আজারবাইজানই। পরে আর্মেনিয়া সামরিক আইন জারি করে এবং সমগ্র সেনা সংঘাতের ঘোষণা দেয়।
আজারবাইজান বলছে, তারা শুধু সম্মুখ দিক থেকে আসা গুলির জবাব দিচ্ছে। উভয় দেশই বেসামরিক জনগণের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
দুই রাষ্ট্রের মধ্যে নাগার্নো-কারাবাখের বিরোধ চার দশকের পুরনো। কিছুদিন পরপর এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়, যা অবশেষে রূপ নিল সংঘর্ষে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই দেশকে অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগ পর্যন্ত আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া উভয়ই ছিল তাদের অধীনে।
আর্মেনিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটের সময় আঞ্চলিক রাজধানী স্টেপানাকার্টসহ বেসামরিক স্থাপনায় আক্রমণ করা হয়। তারা আজারবাইজানের দুটি হেলিকপ্টার ও তিনটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা ও তিনটি ট্যাংক ধ্বংসের দাবি করেছে।
এক বিবৃতিতে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ‘আমাদের জবাব হবে সমানুপাতিক এবং এ ঘটনার পুরো দায় আজারবাইজানের সেনা-রাজনৈতিক নেতৃত্বের।’
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেন, ‘আমরা আমাদের পবিত্র ভূমি রক্ষার জন্য তৈরি।’
নাগার্নো-কারাবাখের ইতিহাস
ইয়েরেভেন ও বাকুর মধ্যে দীর্ঘ বিরোধের কারণ নাগার্নো-কারাবাখ। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ১৯২১ সালে জাতিগত আর্মেনিয়ান অঞ্চলকে আজারবাইজানের সঙ্গে একীভূত করে দেয়। যদিও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে ইয়েরেভেনের সমর্থন নিয়ে আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অঞ্চলটি দখলে নিয়ে নেয়। তখন যুদ্ধে ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়, গৃহহীন হয় হাজার হাজার।
১৯৯৪ সালে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এ অঞ্চলে শান্তি আলোচনা অতটা অগ্রসর হয়নি এবং মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সর্বশেষ গতকালের সংঘর্ষে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একে অন্যকে দোষারোপ করছে, যে সংঘর্ষে বেশকিছু মানুষ হতাহত হয়েছে। এটা অবশ্য গত জুলাইয়ের সংঘর্ষেরই রেষ, যে সংঘর্ষে দুই দেশের ১৭ জন সৈন্য নিহত হয়েছিল। এছাড়া ২০১৬ সালের সংঘর্ষে মারা গিয়েছিল ১১০ জন।
এএফপি ও বিবিসি অবলম্বনে