তিমির বিদার উদার অভ্যুদয়

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০

নূহ-উল-আলম লেনিন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার ভেতর বাংলাদেশের অমানিশার অন্ধকার নেমে এসেছিল। সেই অন্ধকার আরো ঘনীভূত হয় নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। প্রকৃতই বাংলাদেশ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগসহ অন্য কোনো দলেই এমন নেতৃত্ব বা নেতা ছিলেন না যে বা যারা বঙ্গবন্ধুর শূন্যতা পূরণ করতে পারে। ইতিহাসের কী নির্মম বাস্তবতা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন রূপায়ণ তার অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তারই রক্তের উত্তরাধিকার ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব নিতে হয়। যে বয়সে একজন মানুষ তার দাম্পত্য জীবনকে পরিপূর্ণভাবে ভরে তোলে, ঠিক সেই বয়সে দেশমাতৃকাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ব্যক্তিগত জীবনের শান্তি, সুখ, নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়ে ইতিহাসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।

তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮১ সালের মে মাসে এক বৃষ্টিস্নাত দিনে প্রকৃতির কান্নার জলে ভিজে শেখ হাসিনা কিছু সন্তানদের রেখে দীর্ঘ নির্বাসন থেকে পিতৃভূমিতে ফিরে আসেন। শেখ হাসিনা যখন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বভার নেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর। এই ৩৯ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি দায়িত্বভার বহন করে চলেছেন। এখন তার বয়স ৭৩ পূর্ণ হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনটি মেয়াদ পূর্ণ করে চতুর্থ চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক News Week-এর মতে, বিশ্বের ১০ জন ক্ষমতাধর ব্যক্তির অন্যতম শেখ হাসিনা। দৃশ্যত বাংলাদেশে তিনিএকমেবাদ্বিতীয়ম সামরিক শাসকদের মতো হঠাৎ করে তিনি জায়গায় পৌঁছননি। এজন্য একটা দীর্ঘ ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ পথ তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে। অন্য যে নয়জন ক্ষমতাধরের কথা ঘবংি ডববশ বলেছে, তাদের মতোও নন শেখ হাসিনা। তার মতো রক্তরঞ্জিত পিচ্ছিল পথ তাদের পেরোতে হয়নি। হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে, জীবন বাজি রেখে তাকে চলতে হয়েছে। অন্তত ১৯ বার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুকে পরাভূত করেছেন তিনি। তিনি শেখ হাসিনা। একাধারে মহাকাব্যের ট্র্যাজেডির নায়িকা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একমাত্র বোন রেহানা ছাড়া আর সবাইকে হারালেন তিনি। তার পিতাবাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মমতাময়ী মা বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ভ্রাতৃবধূদ্বয় সুলতানা রোজী, চাচা শেখ নাসেরসহ নিকটজনকে সেই আলো-আঁধারির প্রত্যূষে নিষ্ঠুর ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। বিদেশে থাকায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তারা দুই বোন। তারা দেশে থাকলে তালিকাটা দীর্ঘ হতো। ঘটনাটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পের মতো। ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাষ থাকে না। বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডিবিয়োগান্তক ঘটনাটি সেই প্রত্যূষে ঘটে গেল; যা শেখ হাসিনা বা আমাদের কারো কল্পনায়ও ছিল না।

পঁচাত্তরের সেই প্রত্যূষেই কালো গিলাপে ঢেকে গেল বাংলাদেশ। সূর্যোদয়ের সময়েই সূর্যগ্রাসসূর্যাস্তের অন্ধকার নেমে এল বাঙালির জীবনে; শেখ হাসিনা, রেহানার জীবনে।

কত বয়স ছিল তখন শেখ হাসিনার? মাত্র ২৮ বছর! তিনি কি ভেবেছেন তিনি হবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? আমরা কি ভেবেছি? না, তিনি বা আমরা কেউই ভাবিনি।

কেউ কি ভেবেছেন, এত বড় বিয়োগান্তক ঘটনার পর আওয়ামী লীগ আবার উঠে দাঁড়াবে? বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে? গ্রিক ট্র্যাজেডির মতোই বঙ্গবন্ধুকেইতিহাসের মহানায়ককে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে। ট্র্যাজেডিতে তো তা- হয়। অথচ ঘটনাক্রমে বেঁচে যাওয়া এই মহাকাব্যের, ট্র্যাজেডির নায়িকা হতে হলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে।

বিষয়টা আনন্দের না। বিষয়টা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া না। বিষয়টা নিয়মতান্ত্রিক বা রাজতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের মতো না। বিষয়টি ঝড়ের খেয়ার মতো। রবীন্দ্রনাথের গানে যেমন আছে, ‘ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার, হালের কাছে মাঝি আছে করবে তরী পার’—তেমন নয়। হালের মাঝি নেই।ভীরুযাত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ নেই, যে শক্ত হাতে হাল ধরে ঝড়ের খেয়াটিকে তীরে ভেড়াতে পারে। অবশ্য ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগে সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে। দল দেশ বাঁচাতে একাধিকজনের মধ্যে মূল দায়িত্বের অদলবদল হয়েছে। কিন্তু অথৈ সাগরে নৌকা ঘুরপাক খেয়েছে। এগোয়নি।

পঁচাত্তরের শূন্যতার সুযোগ নিয়েছে মোশতাক-জিয়া-সাত্তার-এরশাদ-খালেদা। তাদের মদদ দিয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা। সবাই চেয়েছেন ইতিহাসের পিঠে সওয়ার হয়েঅমরত্বলাভ করতে। কিন্তু ইতিহাস কাঁধ থেকে সবাইকে নামিয়ে দিয়েছে। ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। ইতিহাস অপেক্ষা করেছে একজন নির্মাতার, যে ইতিহাসের পিঠে সওয়ার না হয়ে ইতিহাস নির্মাণ করবেন।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সেই কাজটি করেছে। তার অনুপস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে দলের কাণ্ডারিরূপে গ্রহণ করেছে। ওই যে বললাম, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া নয়। বলেছি বিষয়টি আনন্দের ছিল না। প্রস্তাবটি এসেছে অপারগতা থেকে। প্রস্তাবটি এসেছে অসহায়ত্ব থেকে। শেখ হাসিনা রাজি না হলে কী হতো? যে দেশে রাষ্ট্রের স্থপতি, বঙ্গবন্ধুর মতো স্বাধীনতার মহানায়কের জীবনের নিরাপত্তা নেই, যেখানে রাসেলের মতো একটি অবুঝ শিশুর জীবনের নিরাপত্তা নেই, সেই দেশে সবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার নেয়ার সাহস কী করে হয়? যে দেশ তার জাতির পিতাকে রক্ষা করতে পারেনি, সেই দেশ কি জাতির পিতার কন্যাকে রক্ষা করবে? নিশ্চয়তা কোথায়?

কোন ভরসায় তাহলে দায়িত্ব নেয়া? কেন নেয়া? এটা কি হঠকারিতা নয়? সহজ-সারল্যে অনেকেই বিষয়টা এভাবে ভেবেছেন। বাস্তবেও দেখা গেছে ভাবনা অমূলক ছিল না। ১৯ বার জীবননাশের লক্ষ্যে হামলা, কথা দিয়ে, তত্ত্ব দিয়ে হয়নি। হয়েছে গুলি বন্দুক গ্রেনেড প্রভৃতি মারণাস্ত্র দিয়ে।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর। দুটি শিশুসন্তানকে বিদেশে রেখে তিনি ইতিহাসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে দেশে চলে এসেছিলেন। কেন? না, কোনো ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ করতে না। না, তিনি কোনো থ্রিলারের হিরোইন ছিলেন না। এসেছিলেন জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধ করার জন্য। এসেছিলেন পঁচাত্তরের রাজনৈতিক প্রতিশোধ গ্রহণ করার লক্ষ্যে। ক্ষমতার মোহে নয়, এসেছিলেন পিতার অসমাপ্ত কর্তব্যভার পালন করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। এসেছিলেন বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে নিতে। এসেছিলেন বাংলাদেশ বাঙালি জাতিকে ভালোবেসে। এসেছিলেন এই কথা ভেবে, ‘ আলোর পথযাত্রী, -যে রাত্রি এখানে থেম না’—অন্তরের অন্তস্তল থেকে উত্সারিত আহ্বানে সাড়া দিয়ে। যারা তাকে কথায় বা ইঙ্গিতে জীবনের ঝুঁকির কথা, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তাদের কথার উত্তরে নিজেকে প্রবোধ দিয়েছেন:

আমি ভয় করবো না ভয় করবো না

দুবেলা মরার আগে মরব না ভাই মরব না।

তারপরজীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে, চিত্তভাবনাহীন শেখ হাসিনা এগিয়ে গিয়েছেন।আর এরই মধ্যে পার করে দিয়েছেন অর্ধেক জীবনেরও বেশি।


দল বা দেশ চালানোর কোনো পূর্বাভিজ্ঞতা ছিল না। ছিল না কোনো পূর্বপ্রস্তুতি। যখন তিনি আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন পরিস্থিতি ছিল চরম প্রতিকূল। আওয়ামী লীগ করাটাই সে সময়ে ভয়ের কারণ ছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা যেত না। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু। সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর হস্তক্ষেপ, দল ভাঙার খেলা। দলের অভ্যন্তরে নানা উপদলীয় কোন্দল। জনগণের মধ্যে অপপ্রচার বিভ্রান্তি। বড় নেতাদের কারো কারো উদ্যোগে একাধিকবার দল ভেঙে দল করা।

সর্বোপরি গ্রেফতার, নির্যাতন ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় ২৩ জনের জীবনহানি। সংখ্যালঘু নির্যাতন। নির্বাচনের নামে মিডিয়া ক্যু (১৯৮৬), বিনা ভোটের পার্লামেন্ট (১৯৮৮), সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেয়া (১৯৯১), ভোটার দলবিহীন নির্বাচন (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬) এবং ষড়যন্ত্রমূলক কারচুপির নির্বাচন (২০০১)

পিতার মতোই সাহস, অসীম ধৈর্য দূরদৃষ্টি নিয়ে এসব পরিস্থিতি তিনি মোকাবেলা করেছেন। পদে পদে প্রতিপক্ষের চক্রান্ত, ব্যক্তিস্বার্থে দল দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে নিজ দলেরসংস্কারবাদীবলে খ্যাত প্রভাবশালীদের কারো কারো চক্রান্তের ফাঁদে পা দেয়া, ‘মাইনাস টুফর্মুলার নামে রাজনীতি থেকে কার্যত শেখ হাসিনাকে নির্বাসিত করা এবং প্রিয় মাতৃভূমিতে ফেরা নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তির নানামুখী চাপ, দেশের তথাকথিত এলিট শ্রেণীর একটি অংশের কারসাজি ইত্যাদি ব্যর্থ করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগোতে হয়েছে।

তার জীবনাচার স্বভাবের লোক ঐতিহ্যসহজ-সারল্য, একদিকে যেমন বাংলার গরিব মেহনতি মানুষ মধ্যবিত্ত সমাজকে ভাবিয়েছে যে তো আমাদেরই লোক, আমাদের ঘরের মেয়ে; তেমনি এই সহজ-সারল্যকে অনেকে দুর্বলতাও ভেবেছে। এজন্য এলিট শ্রেণীর লোকেরা কটুকাটব্য করেছে। কিন্তু দিনের শেষে বিজয়ের বরমাল্য তিনিই পেয়েছেন।

যেমন দল পরিচালনায়, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনায় তাকে অনেক কিছু শিখতে হয়েছে। জানতে হয়েছে। বুঝতে হয়েছে। সহকর্মীদের কর্মীদেরও শেখাতে, জানাতে বোঝাতে হয়েছে। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কালপর্বটি ছিল তার জন্য Learning Period সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ এর সহযোগী সংগঠনগুলো হূত জনপ্রিয়তা ফিরে পেয়েছে। নতুন করে দৃঢ় ভিত্তির ওপর শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। উপদলীয় প্রবণতা দূর হয়েছে। দলের মধ্যে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে সবার মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদিকে লাগাতার গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এরশাদ-খালেদার স্বৈরাচারের দুঃশাসনের অবসান এবং গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ গঠনের প্রধান বাধাগুলো দূর করা তার নেতৃত্বের গৌরবোজ্জ্বল সাফল্য।

রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের বর্ণনা দিতে হলে এক মহাভারত রচনা করতে হবে। কেবল সামান্য কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে, বাংলাদেশকে তিনি কোত্থেকে কোথায় টেনে এনেছেন। মোটা দাগে তিন মেয়াদের সাফল্য অর্জনগুলো হলো. মুক্তিযুদ্ধের ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা . ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে (পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী) যাওয়া . বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন রায় কার্যকর করা . যুদ্ধাপরাধীদের বিচার . খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন . দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশ নামিয়ে আনা . প্রবৃদ্ধির হার শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়া . পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদন কার্যকর করা . ভারতের সাথে () গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি () স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন () সমুদ্রসীমা নির্ধারণ (ভারত মিয়ানমার) এবং () বহুমুখী অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে নতুন পর্যায়ে উন্নীতকরণ ১০. মাথাপ্রতি আয় ,০৪৬ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার প্রথম সোপান অতিক্রম ১১. নারীর ক্ষমতায়ন ১২. শিক্ষার হার ৭৩. শতাংশে উন্নীতকরণ ১৩. জনগণের গড় আয়ুষ্কাল ৭২ বছরে উন্নীতকরণ ১৪. মহাকাশে নিজস্ব উপগ্রহ প্রেরণ ১৫. বিদ্যুৎ জ্বালানি সমস্যার সমাধান ১৬. নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে অগ্রগতি ১৭. সামাজিক সুরক্ষার বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন ১৮. মিয়ানমার কর্তৃক বিতাড়িত ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ ঠাঁই দিয়ে তাদের প্রাণরক্ষার ব্যবস্থা করে মানবিকতার উজ্জ্বলতম নজির স্থাপন ১৯. সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলা এবং ২০. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সম্মান মর্যাদাকে শিখর চূড়ায় নিয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

শেখ হাসিনার সাফল্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সামনে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। প্রায় সবার আগে এলডিজি বাস্তবায়ন এবং এসডিজি বাস্তবায়নে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন। আর এসব সাফল্য তার জন্য বয়ে এনেছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার সম্মাননা।

কেউ কেউ মনে করেনক্ষমতাহচ্ছেভোগকরার বা Enjoy করার বিষয়। যারা এটা মনে করেন তাদের কাছে দেশে খালেদা-এরশাদের মতো অসংখ্য নজির আছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক গোষ্ঠীস্বার্থে রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহারের যে দৃষ্টান্ত ওরা স্থাপন করেছেন, তা থেকেই মানুষের ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতির পঙ্কে নিমজ্জিত এসব একদার ক্ষমতাবানদের বিপুল সম্পদ, বিলাসী জীবনযাপন, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক বিস্তারক্ষমতাসম্পর্কে জনগণের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু শেখ হাসিনা এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে বহুভাবে চেষ্টা করেছেন, চেষ্টা করেছে এক-এগারোর পরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শেখ হাসিনা তার পরিবারেরঅবৈধ বিষয়-আশয় সহায়-সম্পদখুঁজে বের করতে। দেশে-বিদেশে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। কিন্তু তারা হতাশ হয়েছে। যা নেই তা তারা খুঁজে পাবে কীভাবে? কোনো দুর্নীতি ভোগ-বিলাসিতার মালিন্য তাকে তার পরিবারের সদস্যদের (তার ভাষায়, আমার পরিবার হচ্ছে আমার সন্তান, আমার বোন রেহানা রেহানার সন্তানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ) স্পর্শ করতে পারেনি। এটা একটা বিরল দৃষ্টান্ত।

ক্ষমতাতার কাছেউপভোগকরার বিষয় নয়। অমর্ত্য সেনের ভাষায় রাষ্ট্রক্ষমতা হচ্ছেজনগণকে ক্ষমতাবানকরা এবং তাদেরসক্ষমতাবাড়ানো। ব্যাপক অর্থ-ব্যঞ্জনা রয়েছে বাক্যটির। জনগণকে প্রকৃতক্ষমতাবানকরা এবং তাদেরসক্ষমতাবাড়াতে হলে বিপুল পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা আত্মত্যাগের প্রয়োজন। প্রয়োজন তারুণ্যদীপ্ত উদ্দীপনার। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, স্বপ্ন রচনা, দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখানো স্বপ্ন রূপায়ণ।

পিতার মতোই শেখ হাসিনা তার জীবন-যৌবন বিলিয়ে দিয়েছেন এই কাজে। স্বপ্ন জয় সহজসাধ্য বিষয় নয়। প্রৌঢ়ত্বের গণ্ডি পেরোনোর এই অপরাহ্নবেলায়ও কী অমানুষিক পরিশ্রম তাকে করতে হচ্ছে, তা এখন আমরা সবাই জানি। অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ In Retrospect- বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “আমি তার মধ্যে একজনঅসাধারণ দক্ষ কর্মযোগীতরুণের সন্ধান পেয়েছি।কথাটি শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। আমরা তার মধ্যে তারুণ্যের উদ্দীপনায় ভরপুর একজনঅসাধারণ দক্ষ কর্মযোগী’—‘Exceptionally good young man of action’-কে পেয়েছি।

শেখ হাসিনার সতীর্থ, যারা পরস্পরের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কম-বেশি জানি, আমাদের এক ঘরোয়া আড্ডায় কথা উঠেছিল আমাদের মধ্যে কে কে সুখী, কে অসুখী। খুবই স্পর্শকাতর একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন। কিন্তু আমাদেরসতীর্থ ৭১’-এর আড্ডায় সেদিন যে যার মতো করে হাসি-তামাশার মধ্যে এর উত্তর দিয়েছি। হঠাৎ আমাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠল, হাসিনা কি সুখী? কে দেবে প্রশ্নের উত্তর, তিনি তো আর আড্ডায় নেই। একবার মাত্র গণভবনে আড্ডা হয়েছিল। সাহস করে আমি বললাম, পিতা-মাতা-ভাই-ভ্রাতৃবধূদের এমন ট্র্যাজিক মৃত্যুর পরও একজন মানুষ কি সুখী হতে পারে? হাসিনা সুখী। কারণ তিনি দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে দেশকে ভালোবেসেছেন।দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। পিতৃহত্যার রাজনৈতিক প্রতিশোধ তিনি নিয়েছেন। বেবী মওদুদ, জাহানারা নিশি, বাদলসহ অনেকেই আমাকে সোচ্চার সমর্থন জানালেন। সবার অনুরোধে সেদিন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী আমাদের প্রয়াত সতীর্থ জাহানারা নিশি দরদি কণ্ঠে পুরো গানটা গাইলেন। পিনপতন নীরবতার মধ্যে যখন ওর গান শেষ হলো, তখন সবার চোখের কোনায় জল...

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হতদরিদ্র অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশে এখন সেই পঁচাত্তর-পরবর্তী অমানিশা ঘুচে গেছে। তার জীবন বাঙালির কাছে আলোকবর্তিকার মতোতিমির বিদার উদার অভ্যুদয়...

 

নূহ-উল-আলম লেনিন: রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের মুখপত্র উত্তরণের সম্পাদক


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫