আলোকপাত

সামান্য হলেও সামগ্রিক পরিবর্তন দরকার

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

ড. মোহাম্মদ আসাদ উজ জামান

করোনার কারণে পুরো বিশ্বে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। দুই কোটিরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত। বলতে গেলে একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে আছে। পুরো বিশ্বেই করোনা নামে একটি মহামারী চলছে। মহামারীর ভালো-খারাপ দুটো দিকই আছে। ভালো দিক হলো, এতে নতুনভাবে মানবতার উন্মেষ ঘটতে পারে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি হতে পারে। আরো অনেক ভালো দিক আছে। সেজন্য আমরাও ভালো একটা কিছু পরিবর্তন আশা করেছিলাম, বিশেষ করে আমাদের মানসিকতায়। প্রতিদিনই নতুন করে করোনা আক্রান্তের কথা শুনছি। মৃত্যুর কথা শুনছি একেবারে ঘরের পাশে।

বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও লকডাউন চলছে। যদিও আমাদের দেশে সত্যিকারের লকডাউনের চিত্রটা দেখা যায় না। লকডাউন সম্পর্কে আমাদের মাঝে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তা হলো, ভাইরাস ঠেকানো সহজ কোনো কাজ নয় এবং এটা ঠেকানোও যাবে না, আজ হোক কাল হোক ভাইরাস চারদিকে ছড়াবেই। তাহলে লকডাউন দিয়ে কী হবে! লকডাউনের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর বর্তমান হারটা একটু কমানো যাবে। এতে আমাদের হাতে একটু সময় পাওয়া যাবে। যে সময়ে চিকিৎসা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হবে। এতে যখন চারদিকেই করোনা ছড়িয়ে যাবে তখন হয়তো চিকিৎসা চলে আসবে, না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে মৃত্যুহার কমানো যাবে। তাই বলে লকডাউন দিয়ে করোনা আটকে রাখা যাবে নাএমনই একটি ধারণা আমরা পেয়েছিলাম এবং এভাবেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের দেশও কিছুটা এগিয়ে যাচ্ছিল। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ নভেল করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করেছে বলে জানা গেছে। রাশিয়া নভেল করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে দেয়ার ব্যাপারেও অনুমতি দিয়েছে বলেও এরই মধ্যে জানতে পেরেছি।

এটা ঠিক, প্রতিটি দুঃসময় বা মহামারীতেই বিজ্ঞানের বড় একটি অগ্রগতি হয়ে থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতি একেবারেই অভাবনীয়! বিজ্ঞানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সমাজের অন্য দিকগুলোও বিশেষভাবে এগিয়ে যায়। ঠিক মহামারীতেও তা-, বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের মানসিকতার একটি পরিবর্তন আশা করা যায়। মৃত্যু যখন দুয়ারের ওপাশে দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ে, তখন কিছুটা হলেও মানসিক পরিবর্তন আশা করা যায়। বিশেষ করে অন্য মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা, মিথ্যা ছেড়ে দেয়ার প্রবণতাএমন অনেক কিছুই মানুষের মাঝে দেখা যাওয়ার কথা।

এখন চলে আসি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। করোনার কারণে স্বাস্থ্যসেবার মান কি বেড়েছে? করোনার কারণে চিকিৎসাবিজ্ঞান কি এগিয়ে গেছে? মানুষে মানুষে কি সহমর্মিতা বেড়ে গেছে? বাজার থেকে কি ভেজাল চলে গেছে? সমাজ থেকে কি মিথ্যা চলে গেছে? রকম অনেক প্রশ্নই আমরা তুলতে পারি। এর উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম। ভুক্তভোগীরা বলেন, এক রকম কথা, নীতিনির্ধারকরা বলেন অন্য রকম কথা। এর ওপর আছে পত্রিকা, ওরা নানান কথা নানানভাবে প্রকাশ করতে থাকে। এর মধ্যে একটি হলো স্বাস্থ্য খাতে লুটপাট, করোনা টেস্ট না করেই করোনার সার্টিফিকেট দেয়ার নামে বড় রকমের টাকার ব্যবসা ইত্যাদি। আর এগুলো সোস্যাল মিডিয়ায় এলে তো কথাই নেই, শুরু হয়ে যায় বিশাল তোলপাড়। এসব দেখে মনে হয় দেশের সব সাধু মানুষ ঘাপটি মেরে পড়ে আছে এই সোস্যাল মিডিয়ায়, আর যত অনাসৃষ্টি করে অন্যরা!

আমরা লকডাউনে আছি। হয়তো ভেতরে ভেতরে চিকিৎসা স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। ঠিক সময় এলে আমরা বুঝতে পারব। তার আগে কিন্তু আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না। আমরা চাই এই করোনা মহামারীর কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের মাঝে একটি পরিবর্তন আসুক। হয়তো ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক মানুষের মাঝেই ভালো ভালো পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু আমরা চাই সামগ্রিক একটি ভালো পরিবর্তন! করোনা যা কিছু বার্তা বয়ে এনেছে, তা যেন একেবারেই বিফলে না যায়। করোনার বার্তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বার্তা হলো, হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। হাত পরিষ্কার রাখা কোনো সহজ কাজ নয়। হাত পরিষ্কার রাখতে গেলে পরিবেশও পরিষ্কার রাখতে হবে। কিন্তু একবার যদি শুরু করি, তাহলে আর কাজটা কঠিন থাকার কথা নয়। একইভাবে করোনার আরো একটি বার্তা হলো, নিজেকে ভালো রাখতে গেলে অন্যকেও ভালো রাখতে হবে। শিক্ষা কি আমরা নিতে পারলাম? শিক্ষা নেয়া অনেক সময়ের ব্যাপার, এত সহজেই শিক্ষা নেয়া যায় না। আর একবার শিক্ষা নিতে পারলে ভেজাল, মিথ্যা, শঠতা দূর করা তেমন কঠিন হবে না।

এর পরেই একটি পরিবর্তন চাই। সামগ্রিকভাবে পরিবর্তন চাই, যেন সবার চোখে পড়ে। একবার পরিবর্তনের ছোঁয়া এলে থেমে থাকা অনেক বড় কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। বিশেষ করে ভেজাল, দুর্নীতি...কিন্তু সবকিছুর সঙ্গেই শিক্ষাটা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। যতদিন শিক্ষা থেকে নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি থাকবে ততদিন দেশ থেকে দুর্নীতি, ঘুষ তাড়ানো যাবে না। বরং মানুষ প্রতিনিয়ত এগুলোয় জড়িয়ে পড়বে। ব্যক্তি লোভের কারণে দুর্নীতি থেকে বের হয়ে আসা সত্যিই কঠিন। তাই বলে কি আমরা থেমে থাকব! এই করোনার অজুহাত দিয়ে কি একবার শুরু করতে পারি না? যেহেতু সবকিছুর মূলেই শিক্ষা। শিক্ষা থেকে শুরু করতে পারলে ভালো। কিন্তু শিক্ষার সঙ্গে ব্যক্তির যে লোভ, এখান থেকে বের করে আনা অনেক কঠিন, কিছুদিন আগেও বড় একটি খবর বের হলো মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতি নিয়ে, কিন্তু রাষ্ট্র যদি চেষ্টা করে যায়, তখনো কি বন্ধ না হয়ে উপায় আছে! কিন্তু তখনো একটি প্রশ্ন থেকে যায়, যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের মাঝেই ঘুণপোকা থাকে, তাহলে! হাসপাতালে করোনা টেস্ট না করেই করোনা সার্টিফিকেট দেয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের ঘুণপোকার কথা টের পাওয়া যায়, একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিও কি এর একটি বড় প্রমাণ নয়! সাধারণ ছোট মানুষ ধরনের দুর্নীতি করতে পারে না, ধরনের বড় দুর্নীতি করতে গেলে সঙ্গে বড় বড় অনেককেই লাগে এবং তারা কেউ নিরীহ সাধারণ মানুষ নয়!  

আমরা কি তাহলে কিছুই করব না! আমরা সবাই কিছু না কিছু করেই যাচ্ছি। রাষ্ট্রও যা যা দরকার মনে করছে করে যাচ্ছে। কিন্তু এর বাইরেও করোনা উপলক্ষে একটি পরিবর্তন চাই, একটি সামগ্রিক পরিবর্তন চাই, যা আমাদের চোখে পড়বে, যার সুবিধা আমরা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারব। রকম একটি কাজ হতে পারে ঢাকা থেকে ময়লা পরিষ্কার করা, ঢাকাকে ঝকঝকে তকতকে করে ফেলা। ঢাকার রাস্তায় কোনো ময়লা থাকবে না। বাড়ির সামনে কোনো ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকবে না। ড্রেনের মাঝে ময়লা ফেলতে পারব না। একবার শুরু করলে পারব না কেন! করোনার কারণে যখন সাধারণ পরিবহনে ভাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হলো, তখন কি আমরা বেশি ভাড়া না দিয়ে পেরেছি? তাহলে এখন যদি কোনো সরকারি নির্দেশ আসে, আমরা কেউই বাইরে ময়লা ফেলতে পারব না, যার যার বাড়ির সামনের অংশ তার তার পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব। সেই ময়লা দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্য দরকার পড়লে আমাদের একটু বেশি কিন্তু সহনীয় পর্যায়ের বাড়তি টাকা দিতে হলে দেব, বেঁচে থাকার জন্যই তো টাকা। একই সঙ্গে রাস্তায় কাউকে ময়লা ফেলতে দেখলে তাকে জরিমানা করা হোক। এটাই তো করোনার বার্তা, পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে পারলেই হাত পরিষ্কার রাখা সহজ হবে!

প্রতিটি আবাসিক এলাকার জন্যই পর্যাপ্তসংখ্যক ভালো মানের ডাস্টবিন রাখা হোক এবং এগুলো নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হোক। এজন্য প্রয়োজনীয় টাকা এলাকার মানুষের কাছ থেকেই তোলা যেতে পারে। একইভাবে প্রতিটি বস্তিতেও প্রয়োজনীয়সংখ্যক উন্নত মানের ডাস্টবিন বসানো হোক। এজন্য টাকা আসবে সরকার থেকে এবং জনগণ থেকে। ওগুলো পরিষ্কার না রাখতে পারলে সবাই পরিষ্কার থাকতে পারব না। এখানে একটা কথা বলা দরকার, সেটা হলো ময়লা পরিষ্কারের জন্য পলিথিন ব্যাগ বলতে গেলে অপরিহার্য, পলিথিন শুধু ময়লা আটকে রাখে না, দুর্গন্ধ ছড়ানোর তরলও বাইরে আসতে দেয় না, ফলে দুর্গন্ধটা সীমিত রাখা যায়। তবে মজার কথা হলো, পলিথিনের গায়ে নিষিদ্ধের একটি ছাপ এঁটে দিলেও কিন্তু এটা বাজারে বেশ চলছে! একই সঙ্গে মাঝে মাঝে দু-একজনকে ধরে জরিমানাও করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের কাছে রাষ্ট্রের আইন সম্পর্কে একটি ভুল বার্তা চলে যায়যতক্ষণ না ধরা পড়ি, ততক্ষণ সবই করা যায়। তাই পলিথিনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক, বরং যত্রতত্র পলিথিন কাউকে ফেলতে দেখলে তাকে জরিমানা করা হোক! আরো ভালো হলো, একটি পলিথিন দোকানে ফেরত দিলেই পলিথিনের দাম ফেরত পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে পলিথিনের দাম একটু বেশি নিলেই হবে; যা আমরা দোকানে জমা দিলেই ফেরত পাব।

এর পরের ধাপেই আমরা চলে যেতে পারি ড্রেনেজ ব্যবস্থার দিকে। ঢাকা শহরের ড্রেন আধুনিকায়ন করা হোক, খাতা-কলমে নয়, বাস্তবে। যেন বৃষ্টি পড়লেই সব পানি নিজের মতো করে ড্রেন দিয়ে চলে যেতে পারে, ড্রেনে কোনো ময়লা ফেলা যাবে না, বৃষ্টির পানির সঙ্গে রাস্তা উপচে যাওয়া ময়লা দেখা বন্ধ করা হোক! প্রতিটি ড্রেনের ওপর সুন্দর ঢাকনা থাকুক। এর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাড়ির সামনে নির্মাণসামগ্রীসহ নানান জঞ্জাল জমিয়ে রাখা। কোনো অবস্থাতেই আমরা বাড়ির সামনেরটা যেন কোনো জঞ্জাল, ময়লা, নির্মাণসামগ্রী বা অন্য কিছু দিয়ে আটকে না রাখি। লক্ষ করে দেখুন, একটির সঙ্গে অন্যটি কত ওতপ্রোতভাবেই না জড়িত! এভাবেই কি একদিন আমরা বুড়িগঙ্গাকে পরিষ্কার রাখতে পারি না! একটি নদী যেকোনো দেশের জন্যই আশীর্বাদ, বুড়িগঙ্গাও তাই, কিন্তু ওর ভেতরে যে পরিমাণ ময়লা, তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য রীতিমতো অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে! এই অভিশাপের পেছনে ওর কোনো ভূমিকা নেই, আছে আমাদের মানসিক দৈন্য!

এই পরিষ্কারের পেছনে টাকা আমাদের কাছ থেকেই নেয়া হোক, ভালো করে বেঁচে থাকতে গেলে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু একবার যখন সুবিধাটা বুঝতে পারব, তখন কিন্তু টাকা দিতে গায়ে লাগবে না। চোখে ময়লা পড়বে না, নাকে দুর্গন্ধ আসবে না, বৃষ্টি হলেই ময়লায় চারদিক সয়লাব হবে না... সুবিধাগুলো আমাদের চোখে পড়তে হবে। তবেই না আমরা সুন্দর জীবনের দিকে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হতে পারব!

ময়লা পরিষ্কার থেকে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিকল্পনার জন্য বুয়েট আমাদের সহায়তা দিতে পারে। শোনা যায়, বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারদের বড় একটি অংশ বিদেশে চলে যান। উন্নত বিশ্বের অনেক শহরের সুপেয় পানির সরবরাহ, নদী-খাল-বিলের পানি পরিষ্কার রাখা, টেকসই রাস্তা, সিস্টেম লস ছাড়া বিদ্যুৎ সাপ্লাই, আলো-বাতাসসহ ঘরবাড়ি, কোনো প্রকার ঝক্কিবিহীন বর্জ্য নিষ্কাশনসব কিছুতেই বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারদের বড় ধরনের অবদান আছে বলে শোনা যায়। কিন্তু বুয়েট যে শহরে, সেই শহরেই বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়, সেই পানিতে অনেক ময়লা, গন্ধ ছড়িয়ে যায় চারপাশে, যাতায়াত ব্যবস্থায় আছে নানান দুরবস্থা, ঘরে ঘরে সাপ্লাইয়ের যে পানি আসে, সে পানি কেউ না ফুটিয়ে কেউ সহজে পান করতে চায় না, লোডশেডিং আর সিস্টেম লস নামে আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগে সুপরিচিত দুজন ভূত থাকে, ঢাকা শহরের ঘরবাড়িতে সহজে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে না, রাস্তায় জ্যাম নামে আরেক বাঁদর বাস করে, যে মানুষের ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেয়ে ফেলে, মানুষকে করে তোলে অস্থির এবং অসহিষ্ণু, বুড়িগঙ্গা নামে একটি নদী আছে, যেখানের পানির বর্ণনা দেয়া খুবই কষ্টের, শীতের সময় নদীর পাশে যাওয়ার আগেই নাক চেপে ধরতে হয়, ঢাকা শহরে রাস্তাঘাট বানালে বেশিদিন টেকে না, রাস্তার ঠিক পাশের বাড়িঘরের ময়লার পাহাড় জমে থাকে, একই সঙ্গে দুর্গন্ধ। এর পেছনের কারণ হলো আমাদের মানসিকতা। উন্নত বিশ্বের মানুষ বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারদের অর্জিত জ্ঞানকে শুদ্ধভাবে ব্যবহার করতে পারলেও হয়তো ঢাকাবাসী, এমনও হতে পারে সামগ্রিকভাবে দেশবাসী, নিজেদের জন্য বিশুদ্ধভাবে কাজে লাগাতে চায় না। কিন্তু এটা একটা বিশ্বাস যে কোনো কিছুই বুয়েটের সাধ্যের বাইরে নয়। তাই দুঃখটা খুব বেশি করে বুকে বাজে! মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো অদূরভবিষ্যতে কোনো এক ইতিহাসবিদ দুঃখ করে বলবেন, ঢাকায় একটি বুয়েট ছিল।

যাক সে কথা, ফিরে আসি করোনার কারণে একটি সামগ্রিক পরিবর্তনে। কে জানে, একবার যদি ঢাকাকে পরিষ্কার করা যায়, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণমুক্ত করা যায়, একদিন তো দেশটাকেও পরিষ্কার করা সম্ভব হবে। শুধু ময়লার দিক থেকে নয়, করোনা টেস্ট না করেই মিথ্যা সার্টিফিকেট, পরীক্ষায় নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, অফিস-আদালতে দুর্নীতিএগুলো থেকে কিছুটা হলেও তো সাধারণকে দূরে রাখা যাবে, তাই না! কিন্তু শুরু করতে হবে, কোথাও না কোথাও থেকে শুরু করতে হবে। সুন্দর পরিবেশে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি পরিবর্তন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। শুরুটা হতে পারে ময়লা পরিষ্কার দিয়ে, যার মাধ্যমে আমরা পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে পারি এবং এতে নিজেদের হাত পরিষ্কার রাখাও সহজ হবে। করোনা আমাদের রকমই একটি ডাক দিয়েছে। কিন্তু কথা হলো, আমরা করোনার সেই ডাকে সাড়া দিতে চাই কিনা! রকম একটি সামগ্রিক পরিবর্তনে যদি সাড়া দিতে চাই, তখন আবার খেয়াল রাখতে হবে ঢাকা পরিষ্কারের নামে বিশাল লুটপাটের কোনো খবর যেন পত্রিকায় হেডিং না হয়, তাই বলে পত্রিকাওয়ালাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে নয়; বরং পরিবর্তনের নামে বড় ধরনের লুটপাট হতে না দিয়ে!

 

. মোহাম্মদ আসাদ উজ জামান: সহযোগী অধ্যাপক

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫