বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৩ কোটি ছুঁইছুঁই। মৃতের সংখ্যাও সোয়া ৯ লাখ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। এ অবস্থায় মহামারীর কার্যকর ও নিরাপদ প্রতিষেধকের অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ববাসী। সারা বিশ্বে বর্তমানে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে ৩০টি ভ্যাকসিনের। এর মধ্যে নয়টিই চীনের। এ নয়টি ভ্যাকসিনের মধ্যে অন্তত একটি নভেম্বরের মধ্যেই বাজারে আনা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা দেশটির কর্মকর্তাদের। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির হিসাব অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৮ জন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৯ লাখ ২৭ হাজার ২৪৫ জন কভিড-১৯ রোগী। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, অক্টোবরেই মহামারীতে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) বায়োসেফটি বিভাগের প্রধান উ গুইঝেন বলেছেন, চীনের প্রথম কভিড-১৯ ভ্যাকসিন শিগগিরই দেখা যেতে পারে। হয়তো নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরেই এটি বাজারে আসতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত সিসিটিভিকে তিনি জানান, ‘শিগগিরই এ ভ্যাকসিন বাজারে আসবে। সব প্রক্রিয়াই মসৃণ গতিতে চলছে।’
বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে চীন। এ মুহূর্তে নয়টি প্রতিষেধকের মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালাচ্ছে দেশটি। গত সপ্তাহে হংকং ইউনিভার্সিটি জানায়, ন্যাজাল স্প্রে সিস্টেমভিত্তিক (নাকে স্প্রে করার মাধ্যমে প্রয়োগযোগ্য) একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনের মূল ভূখণ্ডের গবেষকদের সঙ্গে একযোগে এ পরীক্ষা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
হাজার হাজার চীনা নাগরিকের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন প্রবেশ করানো হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সিনোফার্মের সাবসিডিয়ারি চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ, সিনোভ্যাক বায়োটেক ইত্যাদি।
কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সারা বিশ্বেই এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। চীন এরই মধ্যে তাদের বন্ধুপ্রতিম ও বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, চীনা কোম্পানির তৈরি কোনো ভ্যাকসিন চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ওই সব দেশ তা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। বিষয়টি নিয়ে এক প্রকার উদ্বেগে রয়েছেন চীনা ব্লকের বাইরের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের উদ্বেগের বিষয়বস্তু হলো, এর মধ্য দিয়ে ভ্যাকসিনকে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে চীন।
চীনের সিডিসি জানিয়েছে, চীনের মূল ভূখণ্ডে সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে চীনের যেসব নাগরিক বিদেশের হটস্পটগুলোয় কর্মরত, তাদের ও চীনের স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
সিডিসির প্রধান উ গুইঝেন ও পরিচালক গাও ফু উভয়েই এ পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন তাদের শরীরে গ্রহণ করেছেন। সিসিটিভিকে উ জানান, গত এপ্রিলে এ ভ্যাকসিন নেন তিনি। তার ভাষায়, ‘গত কয়েক মাসে আমি বেশ ভালো আছি। আমার ভেতরে কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়নি। আমি যে সময় ভ্যাকসিন নিয়েছিলাম সে সময় কোনো ব্যথাও অনুভূত হয়নি।’
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দেশটির ৬০ শতাংশ বা ৩ কোটি নাগরিকের জন্য কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করবে তারা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং সিয়ে-কুন গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য কোরীয় সরকার সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে আরো ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে পরিচালিত কভিড-১৯ ভ্যাকসিন বণ্টনে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ কর্মসূচিতে যোগদানের কথা ভাবছে দেশটি। ভ্যাকসিনের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে এবং বিভিন্ন দেশকে ভ্যাকসিন কেনায় সহযোগিতা করার লক্ষ্যে কর্মসূচিটি হাতে নেয়া হয়েছে। কোভ্যাক্স স্কিমের আওতায় দুই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনবে দক্ষিণ কোরিয়া, যা এক কোটি মানুষের সুরক্ষায় কাজে লাগানো যাবে। আরো চার কোটি ডোজ বেসরকারি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কেনার পরিকল্পনা করছে দেশটি।