কভিড-১৯ মহামারীর সংকটকে তীব্র করছে বায়ুদূষণ

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির পর তা হ্রাসের জন্য সব ধরনের যুক্তিসংগত কৌশল বাস্তবায়ন করা কঠিন। পাশাপাশি মারাত্মকভাবে সংক্রমিত রোগীদের সংখ্যা কমানোর বিষয়টিও আছে, যা কিনা হেলথকেয়ার সিস্টেমের ওপর চাপও তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে বায়ুদূষণ এমন একটি বিষয়, যা কিনা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায়। এখন পর্যন্ত মহামারী ঘটেছে বসন্ত গ্রীষ্মে, যখন বায়ুদূষণ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। কিন্তু শীতের সময়ে বায়ুদূষণের মাত্রা কভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়াবহ ফলাফল বয়ে আনতে পারে।

বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ভারত বা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর মাত্রা অনেক বেশি। দেশগুলোর শহর অঞ্চলগুলোর দূষণ এবং গ্রাম অঞ্চলগুলোতে চুলার ব্যবহার সামগ্রিক বায়ুদূষণের মাত্রাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। কভিড-১৯ মূলত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং আমরা জানি ধরনের সংক্রমণকে আরো বাজে অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে বায়ুদূষণ। ২০১৯ সালে ভারতে প্রায় দুই লাখ মানুষ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, যা কিনা মূলত বায়ুদূষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এক কথায় বলতে গেলে, বায়ুদূষণ সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর, যা কিনা কভিড-১৯-এর মৃদু সংক্রমণকে এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে আক্রান্তের মেডিকেল কেয়ারের প্রয়োজন হয়।

যদিও কভিড-১৯-এর ওপর বায়ুদূষণের সরাসরি প্রভাবের বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ খুব সীমিত এবং সঠিক গবেষণার জন্য আরো অনেক সময়ের প্রয়োজন। ২০০৩ সালের সার্স মহামারী বায়ুদূষণ মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার মধ্যে সম্পর্ক থাকার ইঙ্গিত দেয়। ভারতসহ একাধিক দেশ থেকে প্রাপ্ত প্রমাণগুলো দেখায় যে স্বল্প সময়ের জন্য বায়ুদূষণের সংস্পর্শে আসার কারণে নিউমোনিয়ায় সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং দীর্ঘ সময় বায়ুদূষণের সংস্পর্শে এসে বাচ্চাদের বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে ভোগার মধ্যে একটা ধারাবাহিক যোগ রয়েছে।

গবেষণা বলছে, বায়ুদূষণের স্বল্পমেয়াদি ক্ষতির বৃদ্ধি, শ্বাসপ্রশ্বাসের সংক্রমণের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য রোগের তীব্রতাকে আরো খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে।  গবেষণা আরো দেখায় শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের বিরুদ্ধে যে ইমিউন প্রতিক্রিয়া তাকে আরো কমিয়ে দেয় বায়ুদূষণ।

উদাহরণস্বরূপ নিচের দিকের এয়ারওয়েজ, যেখানে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ অনেক বেশি ক্ষতিকর, সেখানে ম্যাক্রোফেজ নামক ইমিউন সেল ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে বিনষ্ট করতে পারে, কিন্তু বায়ুদূষণের সংস্পর্শে আসার পর কোষগুলো কণা দ্বারা ভর্তি হয়ে যায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে আর কার্যকর থাকে না।

বর্তমান গবেষণা আরো যা বলছে তা হলো, বায়ুদূষণ হয়তোবা ফুসফুসের সেলকে পরিবর্তন করে সার্স-কোভ- ভাইরাস রিসেপ্টরের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।

আরেকটি দলের গবেষণা বলছে, দীর্ঘমেয়াদি বায়ুদূষণের সংস্পর্শে থাকার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, বিশেষত যাদের আগে দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য। ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ ফুসফুসের গঠনে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে।

সংক্রমণ মৃদু উপসর্গযুক্ত সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে দীর্ঘস্থায়ী রোগসহ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এটাই হয়তোবা অন্যতম কারণ, বায়ুদূষণের ফলে যে রোগগুলো হয় তা কভিড-১৯- তীব্রভাবে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীরই ছিল, যাদের হাসপাতালের প্রয়োজন হয়।

পাশাপাশি কিছু রিপোর্ট আরো বলছে, বায়ুদূষণ ভাইরাসের বিস্তারকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে এবং গবেষণাগুলো বাতাসে ভাইরাস কণার উপস্থিতি চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এর মানে নয় যে এসব কণা নিজেরা সংক্রামক হচ্ছে এবং প্রমাণগুলো এটাও বলছে না যে ভাইরাসগুলো দূষিত কণা দ্বারা সঞ্চালিত হচ্ছে।

হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫