দক্ষিণ আফ্রিকায় মৃত্যুর হার কম থাকার অদ্ভুত তত্ত্ব

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

আফ্রিকার অনেক দেশে সংক্রমণ মৃত্যু আশঙ্কার চেয়ে অনেক কম দেখা গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণের সংখ্যা যতই নিচের দিকে নেমে যেতে শুরু করেছে বিশেষজ্ঞরা নানা ধরনের চমকপ্রদ হাইপোথিসিস নিয়ে হাজির হয়েছেন। এসব জানিয়েছেন বিবিসি জোহানেসবার্গ প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু হার্ডিং।

জনবহুল শহর, যেখানে একটি সিঙ্গেল রুমে ভাগাভাগি যারা থাকেন, তাদের পক্ষে সামাজিক দূরত্বরীতি মেনে চলা অসম্ভব। কয়েক মাস ধরে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রাজনীতিবিদরা সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন যে দক্ষিণ আফ্রিকার জনবহুল শহুরে এলাকাগুলো করোনাভাইরাসের বিস্তৃতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সেলিম করিম বলেন, জনসংখ্যার ঘনত্ব একটি মূল সমস্যা। যদি আপনি ভাইরাসের বিস্তৃতি কমাতে না পারেন তবে ভাইরাস ছড়াবেই। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ এখন থমকে দাঁড়িয়েছেন, এর উল্টোটা সত্যি হলেও কি হতে পারে? সে একই জনহুল পরিস্থিতি কি কয়েক মাস ধরে সমাধান না হওয়া রহস্যের সম্ভাব্য সমাধান দেয়? নাকি একই বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকরা কভিড-১৯ থেকে যদি কিছুটা বাড়তি সুরক্ষা লাভ করে?

দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ সারির ভাইরোলজিস্ট শাবির মাধি বলেন, এটা সম্ভব হতে পারে যে আমাদের সংগ্রাম, আমাদের দরিদ্র অবস্থা সম্ভবত আফ্রিকান দেশগুলোর পক্ষে কাজ করেছে।

মহামারীর শুরুতে বিশেষজ্ঞরা ভাইরাসের হুমকির ব্যাপারে আফ্রিকাজুড়ে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিলেন। শাবির বলেন, আমি ভাবছিলাম আমরা একটা বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

এমনকি সবচেয়ে আশাবাদী মডেল এবং ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বলছিল যে মহাদেশের সবচেয়ে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসম্পন্ন দক্ষিণ আফ্রিকাও দ্রুত সংক্রমণে উপচে পড়বে। কিন্তু এখনো প্রথম ধাপের ঝড় মোকাবেলা করতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার মৃত্যুর হার ব্রিটেনের চেয়ে সাত ভাগ কম।

বিজ্ঞানীরা বলছেন যে বিশ্বস্ত ডাটা সব সময় পাওয়া সহজ না এবং এসব পরিসংখ্যান পরিবর্তিত হতে পারে। সেলিম করিম বলেন, অনেক আফ্রিকান দেশে এখনো সংক্রমণের চূড়া দেখা যায়নি, আমি জানি না কেন, আমি পুরোপুরিভাবে ধাঁধায় আছি। সাবির মাধিও বলেন, এটা পুরোপুরিভাবে প্রহেলিকাময়, অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

আপাতত বিশেষজ্ঞরা যুবকদের সংখ্যাকে আফ্রিকার তুলনামূলকভাবে কম সংক্রমণের সেরা ব্যাখ্যা বলে উল্লেখ করেছেন। মহাদেশের মানুষের গড় আয়ু ইউরোপের প্রায় অর্ধেক। পাশাপাশি খুব অল্পসংখ্যক আফ্রিকানই আছে যাদের বয়স ৮০ বছর। যা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কম হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।

টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউ ফর গ্লোবাল চেঞ্জের আঞ্চলিক পরিচালক টিম ব্রোমফিল্ড বলেন, বয়স একটি উচ্চঝুঁকির ফ্যাক্টর। আফ্রিকার তরুণ জনগোষ্ঠী মৃত্যুর হার কমিয়েছে। তবে মহামারী যতই সামনের দিকে গড়িয়েছে, তথ্যপ্রমাণ যা হাতে এসেছে তা বলছে, বয়স মোটেই বড় কোনো সমস্যা না, বলছিলেন করিম।

শুরুতে আগ্রাসী দক্ষিণ আফ্রিকা মহাদেশের যেকোনো জায়গায় কঠোর লকডাউন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেখানে মাস্ক পরাসহ অন্যান্য বিষয়ে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেয়া ছিল।

অন্য তত্ত্ব হচ্ছে, উচ্চতা উষ্ণ আবহাওয়ার প্রভাব সম্পর্কিত, যা সাধারণত এক পাশে সরিয়ে রাখা হয়। অনেক গবেষক বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে ভাইরাস প্রবলভাবে আঘাত হানতে পারে। করিম বলেন, আমি নিশ্চিত না একদিন মহামারী চরম বিস্তৃতি নিয়ে আঘাত করবে কিনা।

এছাড়া অতীতে সাধারণ সর্দি-কাশিযুক্ত অন্য ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়া এবং সেই রোগ থেকে সেরে ওঠার পর পাওয়া ইমিউনিটি হয়তো একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কভিড-১৯ থেকে আফ্রিকানদের সুরক্ষা দিচ্ছে। যদিও এটি নিশ্চিত কিছু না। চলমান নানা গবেষণা মহামারী শেষে হয়তো বিষয়ে চূড়ান্ত ধারণা পাওয়া যাবে।

বিবিসি থেকে সংক্ষেপে অনূদিত


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫