এবারের তিন দফা বন্যায় পানিতে তলিয়ে গিয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর। সব মিলিয়ে ৩৭ জেলায় তিন দফার বন্যায় ফসলের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৫১। এদের সবাইকে প্রণোদনার আওতায় আনতে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক গতকাল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এ সময় কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী জানান, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ধান। সব মিলিয়ে মোট ৩২ হাজার ২১৩ হেক্টর জমির আউশ ধান এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, টাকার অংকে যার পরিমাণ ৩৩৪ কোটি। এছাড়া ৭০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমির ৩৮০ কোটি টাকা মূল্যের আমন ধান ও ৭ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলাও বন্যায় ক্ষতির শিকার হয়েছে। এর বাইরেও বন্যায় ২৩৫ কোটি টাকার সবজি ও ২১১ কোটি টাকার পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন প্রণোদনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩১ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এর আওতায় স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিভিন্ন শাকসবজি চাষের জন্য প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার কৃষককে লালশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, বরবটি, শিম, শশা, লাউ ইত্যাদির বীজ বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যদি আমন চাষ সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ৩৫ জেলায় ৫০ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার মাষকলাই বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার বিনা মূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আরো প্রায় ৭৫ কোটি টাকার প্রণোদনা কর্মসূচি প্রক্রিয়াধীন। এ অর্থ দিয়ে ৯ লাখ ২৯ হাজার ১৯৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে গম, সরিষা, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী, খেসারি, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ইত্যাদি ফসল আবাদের জন্য বিনা মূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
মন্ত্রী আরো জানান, সবজি-পুষ্টি বাগান স্থাপন কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ৬৪ জেলায় ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৯২ জন কৃষকের মধ্যে বিনা মূল্যে বীজ, চারা ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আওতায় ১৫২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলার ৪৯১টি উপজেলায় মোট ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ জন কৃষকের মধ্যে বিনা মূল্যে বীজ, চারা ও সার সহায়তা দেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ এর অধীন সব দপ্তর করোনা ঝুঁকির মধ্যেও অত্যন্ত সজাগ ও সক্রিয় রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা কৃষকের পাশে থেকে বাংলাদেশের কৃষির উৎপাদন বৃৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, তাতে আবার বন্যা না হলে এ ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কাটিয়ে ওঠা যাবে। এ ক্ষয়ক্ষতি আমাদের খাদ্য উৎপাদনে তেমন প্রভাব ফেলবে না।