মহামারীকালে ভুল তথ্য আর গুজবে মরেছে ৮০০ মানুষ

প্রকাশ: আগস্ট ১৬, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশ্বজুড়ে ইনফোডেমিক বেশ আলোচিত হচ্ছে। ইনফোডেমিক হলো তথ্যের বাহুল্য, আবার এর মধ্যে থাকে ভুয়া সংবাদ, গুজব ষড়যন্ত্রতত্ত্ব। এই ইনফোডেমিক মানুষকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। তত্ত্বগতভাবে একটি ইনফোডেমিক যেকোনো বিষয়ে হতে পারে। তবে বর্তমানে কভিড-১৯-এর গুরুতর সংকটের সময়ে বিপদগুলো আরো বাড়িয়ে তুলেছে ইনফোডেমিক।

নতুন একটি গবেষণায় সংক্রামক রোগ গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল কীভাবে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে কভিড-১৯ সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা করোনাভাইরাস সম্পর্কিত গুজব, কলঙ্ক ষড়যন্ত্রতত্ত্বের হাজার ৩০০টিরও বেশি রিপোর্ট শনাক্ত করেছেন, যা ৮৭টি দেশের ২৫টি ভাষায় ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।

এই ভুল তথ্যগুলো কোনোটিই সহায়ক নয়, এমনকি এগুলোর উদ্দেশ্য হলো মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিরোধিতা করা। কিছু ক্ষেত্রে এটা মারাত্মক এবং এটা মৃত্যু গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। লেখকরা গবেষণায় লিখেছেন, একটি জনপ্রিয় মিথউচ্চমাত্রায় ঘন ঘন অ্যালকোহল পান শরীরকে জীবাণুমুক্ত করতে পারে এবং ভাইরাসটিকে হত্যা করতে পারেবিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারিত হয়েছিল। এই ভুল তথ্যের কারণে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মিথানল পান করে প্রায় ৮০০ জন মানুষ মারা গেছে, হাজার ৮৭৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে এবং ৬০ জন সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেছে। ইরানে ঘটা ঘটনাটি ইনফোডেমিক সম্পর্কিত মৃত্যু, আঘাত দুর্দশার সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ হতে পারে।

অনুরূপ ঘটনায় তুরস্কে ৩০ জনের প্রাণহানির বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছিল। গবেষকরা বলছেন, কাতারে দুজন পুরুষ জীবাণুনাশক বা অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার গ্রহণের ফলে মারা গিয়েছিল। ভারতে বিষাক্ত ধুতরা ফলের বীজ থেকে তৈরি অ্যালকোহল পান করার পর এক ডজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন শিশুও ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, এটা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।

করোনাভাইরাস সম্পর্কিত প্রতিটি বিপজ্জনক তথ্য মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য করে। এছাড়া অনেকগুলো বাঁকা ধারণা রয়েছে এবং সেগুলো শেয়ার করা হচ্ছে। ধারণাগুলো করোনাভাইরাসকে হত্যা, নিরাময় বা প্রতিরোধ করতে ব্লিচিং পান, গো-মূত্র গোবর পান করা, রুপোর দ্রবণ খাওয়া বা পুরো শরীরে ক্লোরিন স্প্রে করার পরামর্শ দেয়। এছাড়া করোনাভাইরাস এক ধরনের জলাতঙ্ক, মোবাইল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ করতে পারে, ভ্যাকসিন বিক্রি করার জন্য এটা গবেষণাগারে তৈরি করা বায়ো-অস্ত্র, এটা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন/ডোনাল্ড ট্রাম্প/সিআইএ/চীন তৈরি করেছিল, এটা একটি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ইত্যাদি নানা মিথ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।

গবেষকরা তাদের গবেষণায় অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেছেন এবং তারা উল্লেখ করেছেন, তারা ভুল তথ্যগুলো অনুসন্ধান বা তদন্ত করেননি বা সেই গুজব বা ষড়যন্ত্রে বিশ্বাসী এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা নির্ধারণ করেননি।

পরিশেষে তারা পরামর্শ দিয়েছেন, স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে অবশ্যই ভুল তথ্য ট্র্যাক করতে হবে এবং এগুলো বন্ধ করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী সরকারি স্টেকহোল্ডারদের জড়িত করতে হবে।

সায়েন্স অ্যালার্ট


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫