ইয়ুথ পলিসি ফোরামের আলোচনায় বক্তারা

বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাই সমন্বিত পেশাদারী উদ্যোগ

প্রকাশ: আগস্ট ১১, ২০২০

প্রদ্যুৎ পাল

তরুণ প্রজন্মের নীতি গবেষণামূলক প্ল্যাটফর্ম 'ইয়ুথ পলিসি ফোরাম' (ওয়াইপিএফ) আয়োজিত 'রি-থিংকিং এফডিআই : ফর দ্য মেনি' শীর্ষক অনলাইন ওয়েবিনার সিরিজের ৪র্থ এবং শেষ পর্ব -‘অরগানাইজিং দ্যা গভর্মেন্ট টু ইফেকটিভলি এট্রাক্ট এফডিআই’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ৮ আগস্ট।

ওয়াইপিএফ এর উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ ডক্টর আখতার মাহমুদের সঞ্চালনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্রাইসিস পয়েন্ট কনসাল্টিং এর চেয়ারম্যান ও বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট (বিওআই) এর সাবেক পরিচালক মামদুদ হোসাইন আলমগীর, বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব (পি আর এল) ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাবেক সহ সভাপতি বিজয় ভট্টাচার্য এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের  অপারেশনস কর্মকর্তা মিয়া রহমত আলী।

আলোচনার শুরুতে ইয়ুথ পলিসি ফোরামের পক্ষ থেকে বিদেশী বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা নিয়ে আগের তিনটি পর্বের আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। যেখানে বিদেশি বিনিয়োগের বর্তমান অবস্থা, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার থেকে প্রাপ্ত সুবিধা, বিদ্যমান নীতি সংশোধনের ক্ষেত্র, বিনিয়োগকারীরাদের চাহিদা, বিদেশী বিনিয়োগের সুবিধা ঠিকমতো আদায় করতে করণীয় প্রভৃতি বিষয় গুরুত্ব পায়।

ডক্টর আখতার মাহমুদের প্রশ্নের জবাবে মামদুদ আলমগীর বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন যে, এ প্রচেষ্টা দীর্ঘ দিনের। স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীনতা উত্তর প্রথম দুই দশকের বিনিয়োগ আকর্ষণ প্রচেষ্টার সীমাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে স্থাপিত বোর্ড অফ ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ বোর্ডের পূর্বকালীন সময়ের বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন যে স্বাধীনতার পর শুরুর দিকে বিদেশী বিনিয়োগ কেবলমাত্র সরকারি খাতের জন্যই প্রযোজ্য ছিল। 

বিনিয়োগ বোর্ড এবং তার উত্তরসূরি বর্তমানের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডার)  কার্যক্রমকে তিনি বিনিয়োগ  উন্নয়ন, বিনিয়োগ সহায়তা এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার পক্ষ্যে ওকালতি করা, এরকম তিন ভাগে ভাগ করেন। সরকারের ভেতরে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কাজের সমন্বয় বাড়ানোর বিভিন্ন প্রক্রিয়া, যেমন বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কর্মরত বিভিন্ন কমিটির কাজ তিনি তুলে ধরেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে বিজয় ভট্টাচার্য বলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের মনোভাব নির্ভর করে হোস্ট দেশে কতটুকু বিশ্বমানের পরিবেশ মানা হয় তার উপর। মালয়েশিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আইন এবং নীতিমালার পাশাপাশি সমন্বিত পেশাদারী উদ্যোগ অনেক বেশি জরুরি। মাইক্রোম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব এবং নানাবিধ সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি প্রক্রিয়াগুলোকে আর বেশি ডিজিটালাইজড  করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন প্রচারের পাশাপাশি ব্যাক্তিপর্যায়ের যোগাযোগ ও  মুখের কথায় অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আকর্ষিত হয়।  

তিনি যোগ করেন, আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় যা বিনিয়োগকারীর কাছে অস্বস্তিকর এবং যা তাদের ব্যবসার স্বাধীনতা হরণ করে। এ কারণেও বাইরের অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আগ্রহ হারায়।

ব্যবসা খাতে বা বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে তবে এটি সক্রিয় নয় বলে অভিমত প্রকাশ করেন ড. আখতার মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা বাজারে কারো অত্যাধিক প্রভাব থাকুক তা চায় না, তাই বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চাইলে প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও জোরদার করতে হবে।’

সম্প্রতি প্রবর্তিত ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) এর প্রকল্পের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত মিয়া রহমত আলী  বলেন, বোর্ড অফ ইনভেস্টমেন্ট (বিওআই) এর সময় থেকেই বিনিয়োগ সংক্রান্ত সবগুলি সরকারি সংস্থাকে এক ছাদের নিচে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের  আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু হলেও প্রযুক্তির ঘাটতি থাকার কারণে তা এতো দিন সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে প্রযুক্তি উৎকর্ষতা লাভের সাথে সাথে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিডা) গত  চার বছর ধরে ইলেকট্রনিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। 

এ লক্ষ্যে তারা ৩৫টি পৃথক সংস্থার সাথে কাজ করা শুরু করে। অবশেষে দেড় বছরের আগে বিডা তার ১৬টি সার্ভিসকে সম্পূর্ণ অনলাইনে নিয়ে আসে। এ পর্যন্ত সাতটি মন্ত্রণালয়ের প্রায় ২৩/২৪ টি সার্ভিস অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে এবং এর সুযোগ যে কোনো নাগরিক গ্রহণ করতে পারবে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেবাকে এখনও  ওয়ান স্টপ সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন মিয়া রহমত আলী। এখন সেবাগ্রহীতার ই-অভিযোগ দেয়ার সুযোগও ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। এসময় সরকারের প্রশংসা করে মিয়া রহমত আলী বলেন, সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সরকার ইতোমধ্যে বিনিয়োগ পরিবেশের সংস্কারের দিকে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।


বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা একটি দেশ আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিং কোথায় অবস্থান করছে তা খুঁটিয়ে দেখে, এই ব্যাপারটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে এটি নিয়ে সরকার তেমন চিন্তা না করলেও বিগত তিন বছরে কিছু অগ্রগতি ও ভালো সংস্কার হয়েছে। সরকার ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকার ডুইং বিজনেস ইনডেক্স রিপোর্টে ৯৯তম স্থানের মধ্যে থাকতে চায়।

পারফরম্যান্স কালচার গড়ে তুলতে যথাযথ মনিটরিং প্রয়োজন, সেটিও আস্তে আস্তে গড়ে উঠছে  জানিয়ে র‍্যাংকিংয়ে মনোযোগ দেয়াকে স্বাগত জানান ডক্টর আখতার মাহমুদ। 

অটোমেটেড সিস্টেমে অনাগ্রহ এবং মাঝারী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অভাবকে সরকারের দিক থেকে এফডিআই আকর্ষনের অন্তরায় হিসেবে তিনি দায়ী করেন। 

আলোচনার শেষ পর্যায়ে,  বক্তারা সকল ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস)- এর সফল বাস্তবায়ন, সবধরনের সেবা অটোমেশনে নিয়ে আসা, বিসিএস অফিসারদের ঘন ঘন মন্ত্রনালয় পরিবর্তন না করে ক্লাস্টারভুক্ত করে মাঝারী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারিগরি দক্ষতা  বাড়ানো এবং আন্তঃমন্ত্রনালয় সমন্বয়ের উপর আলোচকরা গুরুত্বারোপ করেন।

এই পর্বটির মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হলো ইয়ুথ পলিসি ফোরামের ‘রি-থিংকিং এফডিআই : ফর দ্য মেনি’ সিরিজ। পুরো আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল বণিকবার্তা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫