বেসরকারি হাসপাতাল

বেড়েছে লাইসেন্স নবায়ন ও নিবন্ধনের আবেদন

প্রকাশ: আগস্ট ১০, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেবা মুখ্য নয়, মূলত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব হাসপাতালের বড় অংশেরই নেই নিবন্ধন। আবার কিছু আছে লাইসেন্স নিলেও তা নবায়ন করা হয়নি। যদিও সরকারি সংস্থার নজরদারির অভাবে বছরের পর বছর চলে আসছে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম দুর্বলতা প্রকাশ পেতে থাকলে নড়েচড়ে বসেছে মন্ত্রণালয়। গতকালও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৩ আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন না করলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। সরকারের এমন কঠোর মনোভাবে হাসপাতাল নিবন্ধন লাইসেন্স নবায়ন পেতে আবেদনের হিড়িক পড়েছে সম্প্রতি। গত এক মাসেই আড়াই হাজারের মতো আবেদন পড়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে হাজার ৪৩৬টি, চট্টগ্রামে হাজার ৩৭৫, রাজশাহীতে হাজার ৩৮০, খুলনায় হাজার ১৫০, রংপুরে হাজার ২৩৬, বরিশালে ৯৫৭, ময়মনসিংহে ৮৭০ সিলেটে ৮৩৯টি। তবে এসব চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশ লাইসেন্সবিহীনভাবে পরিচালিত হতো।

প্রতিষ্ঠান মালিকদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে অনলাইনের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এতে তেমন সাড়া না পড়লেও গত এক মাসে আড়াই হাজারের অধিক আবেদন পড়েছে। এখনো প্রতিদিন ২৫০-৩০০টি আবেদন জমা পড়ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই বছরে নিবন্ধন লাইসেন্সের জন্য ১১ হাজার ১৭৮ হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার আবেদন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত লাইসেন্স রয়েছে মাত্র হাজার ৩৮৭টি হাসপাতালের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জনবল সংকটের কারণে সরেজমিন পরিদর্শনের অভাবে দেড় হাজারের অধিক হাসপাতালের নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া যথাযথ কাগজপত্র জমা বিভিন্ন শর্তপূরণ না করতে পারায় সাড়ে চার হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান ঝুলে আছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বর্তমানে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে লাইসেন্সহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এমনকি সংগঠনের পক্ষ থেকে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের যারা সদস্য, সবাই বৈধভাবে হাসপাতালের নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো দুই-এক বছর লাইসেন্স নবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য বলা হয়েছে। এরই মধ্যে ১১ হাজারের অধিক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। বাকি সময়ের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠানই আবেদন করবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

২০১৮ সালের পর থেকে হাসপাতাল ক্লিনিক নিবন্ধন নবায়ন করতে হয় অনলাইনে। সেখানে যেসব শর্ত দেয়া আছে, তা পূরণ করতে পারে না অনেক হাসপাতাল। তথ্যগুলো নির্দিষ্ট ফরমেটে পূরণ করতে হয়। কোনো তথ্য বাদ থাকলে সফটওয়্যার তা নেয় না। এমন অনেক কারিগরি জটিলতার কারণে অনেকে ফরমেট পূরণ করতে পারে না। সম্প্রতি টেস্ট না করেই নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে ঢাকার উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশাসনের ভয়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই আবেদন করেছে।

ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ফরিদ হোসেন মিয়া বণিক বার্তাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুই-তৃতীয়াংশ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সহীনভাবে পরিচালিত হয়ে এলেও সম্প্রতি প্রশাসনের মনিটরিং বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনলাইনে নিবন্ধন আবেদন বেড়েছে। ২৩ আগস্টের মধ্যে তথ্য জমা দিতে হবে। যারা তারিখের মধ্যে মজা দিতে না পারবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে সারা দেশের বিভাগীয় পরিচালক সিভিল সার্জনদের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫