নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের পথে এগোচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। বিষয়টি চীনের রফতানি খাতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া দেশটির প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রেও পণ্য সরবরাহ বেড়েছে। এসবের প্রভাবে জুলাইয়ে চীনের রফতানিতে আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে ভোগ্যপণ্যের দরপতন ও নিজেদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করায় গত মাসে আমদানিতে পতন দেখেছে চীন। খবর ব্লুমবার্গ।
শুল্ক প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ডলারের হিসাবে জুলাইয়ে চীনের রফতানি বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর এ সময়ে আমদানি কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে গত মাসে চীনের বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৩৩ কোটি ডলারে।
জুলাইয়ে চীনের আমদানি-রফতানির পরিসংখ্যান কিন্তু বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের সঙ্গে একেবারেই মেলেনি। তারা গত মাসে চীনের রফতানি দশমিক ৬ শতাংশ সংকোচন ও আমদানি দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধির ধারণা করেছিলেন।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ হার ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চ। অন্যদিকে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের আমদানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আমদানি-রফতানিতে এ প্রবৃদ্ধি কিছুটা অপ্রত্যাশিতই। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক একেবারেই ভালো যাচ্ছে না। বাণিজ্য শুল্ক, হুয়াওয়ে ইস্যু, তাইওয়ান, হংকং, নভেল করোনাভাইরাস, দক্ষিণ চীন সাগর, কনস্যুলেট বন্ধের পাল্টাপাল্টি নির্দেশ—বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গভীর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে ওয়াশিংটন ও বেইজিং। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে যাওয়াটা কিছুটা অপ্রত্যাশিতই বটে।
সিঙ্গাপুরে ওভারসি চায়নিজ ব্যাংকিং করপোরেশনের অর্থনীতিবিদ টমি শি এর একটা কারণ দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এসব কার্যাদেশ সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ার আগেই দেয়া হয়েছিল।
তবে বিশ্বের দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে বিবাদ যেভাবে বাড়ছে এবং সারা বিশ্বে লকডাউন যেভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তাতে চীনের রফতানিতে এ ঊর্ধ্বগতি কতদিন থাকবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলো উদ্বেগে রয়েছে। এছাড়া লকডাউনের কারণে অন্য দেশের কোম্পানিগুলো তাদের চাহিদাও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় চীনের রফতানিতে কিছুটা ভাটা দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা
বলছেন, চীনের রফতানির এই যে পুনরুত্থান, তা কেবল ততদিনই দেখা যাবে, যতদিন তাদের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোয় চাহিদা চাঙ্গা থাকবে।