শেখ কামাল দেশকে অনেক কিছুই দিতে পারত —প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: আগস্ট ০৬, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল বেঁচে থাকলে জাতিকে অনেক কিছুই দিতে পারতেন বলে মন্তব্য করেছেন তার বড় বোন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অডিটোরিয়ামে শহীদ শেখ কামালের বর্ণাঢ্য কর্মবহুল জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভা দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানেশহীদ শেখ কামাল: আলোমুখী এক প্রাণশীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের বহুমুখী প্রতিভা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদানের কথা স্মরণ করে  প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আজকে কামাল যদি বেঁচে থাকত তবে সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারত। কারণ বহুমুখী প্রতিভা ছিল তার, তা দিয়ে সব অঙ্গনে আরো অবদান রাখতে পারত সে। অবদান রেখেও গেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সাহসী ভূমিকা ছিল। প্রতিটি সংগ্রামে সে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। এমনকি ২৫ মার্চ রাতে রাস্তায় রাস্তায় যে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছিল, সে কাজে ব্যস্ত ছিল সে। পরে দেরাদুনে ট্রেনিং নেয় এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, কামাল আমার থেকে দুই বছরের ছোট, কিন্তু তার বুদ্ধি, জ্ঞান সবকিছুতে একটা পরিমিতিবোধ যেমন ছিল, তেমনিভাবে বহুমুখীও ছিল। সে একদিকে যেমন ক্রীড়া সংগঠক ছিল, তেমনি সাংস্কৃতিক জগতেও তার প্রতিভা রয়েছে। স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী সে সৃষ্টি করেছিল। ঢাকা থিয়েটার গ্রুপ যখন হয় সেখানেও তার অবদান ছিল। সে নিজেই অভিনয় করত, গান গাইত, সেতার বাজাত। খেলাধুলার মাঠে তার সবচেয়ে বড় অবদান। সেই সময় ধানমন্ডি এলাকার তরুণ, শিশু-কিশোরদের জন্য কোনো ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না। সে- উদ্যোগ নেয় এবং ওই অঞ্চলের সবাইকে নিয়ে আবাহনী ক্লাব গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের পর এই আবাহনী ক্লাবকে আরো বেশি শক্তিশালী করে।

তিনি বলেন, আবাহনী ক্লাবের প্রতি তার যে আকর্ষণ। ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই আমি আর রেহানা জার্মানির উদ্দেশে রওনা হই। তখন কামালের নতুন বিয়ে হয়েছিল। আমি কামালকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি তোমাদের জন্য কী নিয়ে আসব? কামাল আমার ডায়েরিতে লিখে দিল অ্যাডিডাস বুট নিয়ে আসবা আমার প্লেয়ারদের জন্যও। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার এতগুলো প্লেয়ারের জন্য কীভাবে এত বুট নিয়ে আসব? তখন সে বলে তুমি চেষ্টা করো। সে নিজের জন্য কোনো দিন কিছু চাইত না।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, কামালের জন্মের পরে আব্বা বেশির ভাগ সময়ই জেলখানায় ছিলেন। কামাল তো আব্বাকে আব্বা বলার সুযোগও পায়নি। আমরা যখন খেলতাম, তখন আব্বাকে আব্বা বলে ডাকতাম। আমাকে বলত, হাসু আপা তোমার আব্বাকে একটু আব্বা বলি। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমার বাবা যেভাবে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। আমরা ভাইবোনেরা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছি। প্রত্যেকটা ভাইবোনের বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আমাদের মা সব সময় আমাদের লেখাপড়ার দিকে নজর দিতেন। শুধু খেলাধুলা না, সাংসারিক কাজেও ছোটবেলা থেকে সে মাকে সহযোগিতা করত। ওই ছোট্ট বয়স থেকেই সে খুব দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করত। আজকে কামাল আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার সৃষ্টি আবাহনী ক্লাব আমাদের মাঝে আছে।

শহীদ শেখ কামালের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়া ওঠা স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি খুব খুশি হয়েছি। স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর অনেকেই মারা গেছে, নতুনভাবে আবার স্পন্দন গড়ে তোলা হয়েছে। ফিরোজ শাহীর ছেলেসহ যারা উদ্যোগ নিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশী গানগুলো রেকর্ড করে নিয়ে সেটাকে আধুনিক সুরে-মানে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে সেগুলোকে জনপ্রিয় করা এবং সেখানে বসে বসে টিউনগুলো দেয়া, আমাদের ধানমন্ডির বাসার ছাদে বসে বসে এই কাজগুলো কিন্তু অনেক সময় আমি নিজেও করতে দেখেছি। তার নতুন নতুন চিন্তাভাবনা ছিল। আজকে যদি বেঁচে থাকত হয়তো দেশকে অনেক কিছু দিতে পারত। আমি যে সব একদিনে এভাবে হারাব, এটা কখনই চিন্তাও করতে পারিনি, কল্পনাও করতে পারিনি।

তিনি বলেন, আজকে কামাল নেই। আমরা পিঠাপিঠি ভাইবোন ছিলাম। একসঙ্গে ওঠাবসা, একসঙ্গে খেলাধুলা, চলাফেরা, ঝগড়াঝাঁটি সবই আমরা করতাম। একসঙ্গে সাইকেল চালানো, যেহেতু আমরা দুই ভাইবোন কাছাকাছি বয়সের। পুতুল খেলায় যেমন আমার সঙ্গে থাকত। ওর সঙ্গে ছোটবেলার বাকি সব খেলায় আমিও ওর সঙ্গেই খেলতাম।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬৯ সালে আব্বা মুক্তি পাওয়ার পর আমি যখন বিদেশে গেলাম কামালের কথাই সবচেয়ে বেশি আমার মনে হতো। কারণ আমরা এত বেশি আব্বাকে ঘিরে, মাকে ঘিরে ঘনিষ্ঠ ছিলাম যে ওদের ছেড়ে যে থাকতে হবে, এটাই ভাবতে পারিনি। এত বহুমুখী প্রতিভা কামালের। তার পরও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে তো সে কিছুই করেনি। আমাদের ধানমন্ডির বাড়িটা কিন্তু একটাই বাড়ি। তিনতলায় মা ওর জন্য আলাদা একটা ঘর করে দিলেন। সেখানে বিয়ে করার পর বউ নিয়ে উঠল। ১৪ জুলাই বিয়ে হলো, ১৫ আগস্ট শেষ। জামালেরও একই অবস্থা, স্পেশাল পারমিশন নিয়ে তার বিয়ে দেয়া হলো। ১৭ জুলাই জামালের বিয়ে হলো, ছোট ফুফুর মেয়ে রোজীর সঙ্গে। তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করল, কী নিষ্ঠুরতা? সেটা একবার ভেবে দেখেন?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কামাল আজকে আমাদের মাঝে নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সেও ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে শাহাদত বরণ করেছে। আগস্ট মাস শোকের মাস। কী একটা অদ্ভুত ব্যাপার এই আগস্ট মাসের তারিখ কামালের জন্মদিন, তারিখ আমার মায়ের জন্মদিন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫