অবৈধভাবে প্রায় সোয়া ৬ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ গতকাল বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি করেন।
মোট ৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রমাণ মেলায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে বলে জানান দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট ও চেয়ারম্যান স্যুটসহ ২৫টি কক্ষে অবস্থান করেন অভিযুক্তরা। এ সময় খাবার, মদ, স্পা, লন্ড্রি ও বারের ব্যয় বাবদ মোট বিল আসে ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ টাকা, যা পাপিয়া নিজেই নগদে পরিশোধ করেন।
পাপিয়া বিলাসবহুল জীবনযাপন পছন্দ করতেন উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, ওয়েস্টিন হোটেলে থাকাবস্থায় তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকার কেনাকাটা করেছেন। এছাড়া ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকা বাসা ভাড়া দিয়েছেন। এ সময় তিনি গাড়ির ব্যবসায় ১ কোটি টাকা ও নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াশ সলিউশনে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।
এতে আরো বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংকে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৮ টাকা জমা রয়েছে। র্যাব তার বাসা থেকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করে। পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের নামে একটি হোন্ডা সিভিএ ২০১২ মডেলের গাড়ি রয়েছে, যার দাম ২২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তাদের নামে ৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার সম্পদের মালিকানা পাওয়া গিয়েছে, যা তাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ। এ সম্পদ তারা আয় করেছেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।
এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ২০ জুলাই পাপিয়া ও তার স্বামী মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে কাশিমপুর জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে পাপিয়ার ঢাকা ও নরসিংদীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় র্যাব। গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে জাল নোট রাখার অভিযোগে একটি এবং অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র্যাব। এছাড়া মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনে আরেকটি মামলা করে সিআইডি। একই সঙ্গে পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের উৎস অনুসন্ধানে নামে দুদকও।