কভিড-১৯ সম্পর্কিত ভয়ের আখ্যান বদলের সময় এসেছে

প্রকাশ: আগস্ট ০৫, ২০২০

অক্ষয় বাহেতি

কভিড-১৯-এর পরিস্থিতি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে এনিমি অ্যাট দ্য গেটস নামের সিনেমাটিকে। যেটি ছিল স্টালিনগ্রাদে বিধ্বংসী জার্মান আর্মির সঙ্গে সোভিয়েত আর্মির লড়াই নিয়ে। একটি মিটিংয়ে রাশিয়ান মিলিটারি কমান্ডাররা আলোচনা করছিল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া সৈন্যদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ব্যাপারে, যার মাধ্যমে বাকিদের সতর্ক করা যাবে। কিন্তু একজন দ্বিমত জানিয়ে বলেন, রাশিয়ার একটি উদাহরণ প্রয়োজন কিন্তু এমন উদাহরণ যা অনুসরণ করা যাবে। যা কিনা ভয়ের আখ্যানের পরিবর্তে আশার আলো তৈরি করবে। দেশের প্রয়োজন নায়কের, যা কিনা, মানুষকে উৎসাহিত করবে।

পরিকল্পনাটি কার্যকর করতে সেনাবাহিনীর সংবাদপত্র একটি চরিত্রকে বাছাই করে, যেটিতে অভিনয় করেন জুড ল। যিনি একজন দুর্ধর্ষ স্নাইপার হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের রক্ষাকর্তা এবং একজন জাতীয় বীরও বটে। যা কিনা সৈন্যদের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং শেষ পর্যন্ত জয়ও।

ইতিহাসের এমন কৌশল কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়েও আমাদের অনেক কিছু শেখাতে পারে। এখন পর্যন্ত ভারতীয়দের মাঝে (অন্য জায়গায়ও) কভিড-১৯ পরিস্থিতি আধিপত্য বিস্তার করেছে ভয় এবং ট্র্যাজেডির গল্পের মাধ্যমে। যাই হোক, এখন এটা পরিষ্কার যে কভিড-১৯ এখানে অনেকদিন থাকতে এসেছে। রোগের আশপাশেই এখন আমাদের নিজেদের জীবন স্বাভাবিক করতে হবে।

একই গল্প, ভিন্ন আলো

আমাদের অবশ্যই সমস্যার আখ্যান বর্ণনা করার চেয়ে সমাধানে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে, আমরা রোগ বিষয়ে বিস্তৃত সতর্কবার্তা সামনে এনেছি এবং এসবের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল যেন মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে সুরক্ষামূলক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে। এগুলো এখনো প্রয়োজনীয় হলেও আমাদের একই গল্পকে এখন ভিন্ন আলোয় উপস্থাপন করা জরুরি।

সংক্রমণ মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির চাঞ্চল্যকর শিরোনামগুলো বর্ধিত টেস্টের রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারে। যা কিনা প্রকৃতপক্ষে কেস শনাক্ত করার পদ্ধতির উন্নতির কথা তুলে ধরবে। কৌশল আরো বেশি টেস্ট করাকে উৎসাহী করে তুলবে। টিভি স্ক্রিনে সব সময় দেখানো কভিড-১৯ ড্যাশবোর্ডে স্টেট অনুযায়ী মিলিয়ন প্রতি কতজনকে পরীক্ষা করা হয়েছে তাও দেখাতে পারে।

কেবল মহানগরের বিপর্যয় নিয়ে রিপোর্ট করার পরিবর্তে আলোচনা করা উচিত শহর মফস্বল এলাকাগুলো কীভাবে শিক্ষা নিয়ে আরো ভালোভাবে প্রস্তুত হতে পারে সে সম্পর্কে।

কোনো একটি হাসপাতালে একটি অপ্রত্যাশিত মৃতদেহের ভাইরাল ভিডিওর ওপর গুরুত্ব দেয়ার চেয়ে মৃতরা যে কভিড-১৯ ছড়াবে না এবং আত্মীয়স্বজন যেন সম্মানের সঙ্গে সেসব মৃতদেহ গ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়ে জোর দেয়া উচিত। যদিও প্রতিটি দিকের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ জরুরি। নিউজের মধ্যে গল্পকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে সেটিও বিবেচনার সময় এসেছে, যা কিনা আমাদের প্রতিক্রিয়াকে আরো উন্নত করার সুযোগ এনে দেবে।

দ্বিতীয়ত, রোগের উদ্বেগজনক উপস্থাপনের পরিবর্তে পরিস্থিতিকে যেভাবে স্বাভাবিক করা যায় সেভাবে তুলে ধরা উচিত। তবে অবশ্যই হেলাফেলা না করে। এমন একটি রোগ, যেখানে ৮০ ভাগ কেসই উপসর্গবিহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত সেখানে হতাশা মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না। শেষ তিন মাস আমাদের দেখিয়েছে, এই ৮০ শতাংশ রোগীও রোগের চেয়ে বেশি কিছু মোকাবেলা করেছে। পরিসংখ্যানগত রিপোর্ট করার পরিবর্তে আমাদের অবশ্যই পেছনের গল্পগুলো তুলে ধরতে হবে। যেভাবে অনেক রোগী কভিড-১৯-এর সঙ্গে লড়াই করেছে, সে সাহস প্রত্যাশার গল্প সামনে আনতে হবে। যা কিনা অন্য অনেককে সাহায্য করতে পারে।

এই ইস্যুতে ভিন্নধর্মী ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে। টি-শার্ট মাস্কগুলোতে ঘোষণা দেয়া যেতে পারে, আমি কভিডকে হারিয়েছি কিংবা আমি প্লাজমা ডোনেট করেছি’—যা কিনা একটি শক্তিশালী বার্তা হতে পারে। সর্বোপরি, চারপাশের দোষ লজ্জা দূর না করে মহামারীকে হারানো যাবে না।

সামনের সারির কর্মীদের যত্ন নেয়া

তৃতীয়ত এই রোগের সঙ্গে লড়াই করা সামনের সারির কর্মীদের মনোবলও বিবেচনা করতে হবে। হেলথকেয়ার কর্মী এবং অন্যরা এই লড়াইয়ে অতুলনীয় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অস্বস্তিকর পিপিইগুলো সরিয়ে তাদের কিছুদিন শ্বাস নেয়ার সুযোগ করে দেয়া উচিত। তারা তাদের পরিবার থেকে দূরে থাকছে এবং নিজেদের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলেছে।

এসব সমানের সারির কর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে ফ্যামিলি হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্যাকেজ দিতে হবে এবং হাসপাতালে বেড রিজার্ভ করতে হবে। পাশাপাশি তাদের অনুপ্রাণিত করতে এবং সম্মান দেখাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাশাপাশি আমাদের নিজেদের জুড লকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তার বীরত্বগাথা সামনে নিয়ে আসতে হবে।

স্ক্রলডটইন


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫