দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্বে থমকে আছে টেড্রোসের স্বপ্ন

প্রকাশ: আগস্ট ০১, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্ব। আজ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ সংক্রমিত ও প্রায় ৬ লাখ ৮৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই মহামারীতে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিইএইচও) তাদের সামর্থ্যরে সর্বোচ্চটুকু করতে পারছে না নানা প্রতিবন্ধকতায়। দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্বে সবার জন্য চিকিৎসার সমতা নিয়ে আসার স্বপ্নটা থমকে আছে হু মহাসচিব টেড্রোস আধানোম গেব্রেইসাসের। 

যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মহামারীর সূচনা থেকে নিয়মিতই ডব্লিইএইচওকে আক্রমণ করেছেন, একাধিক ব্যর্থতায় তাদের দোষারোপ করেছেন এবং সংস্থাটির ওপর চীনের প্রভাবের অভিযোগ তুলেছেন। ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সংস্থায় নিজেদের অনুদানও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবং পরিশেষে এটি থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।  

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ডব্লিইএইচও মহাসচিবকে ‘কিনে নিয়েছে’ চীন। যদিও টেড্রোস এ অভিযোগকে ‘অসত্য’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্ষমতা আসলেই সীমিত। এবারের মহামারীটি ধনী, গরীব সব দেশকেই সমানভাবে বিধ্বস্ত করে চলেছে এবং শুরু থেকেই দেশগুলো নিজেদের মতো করে স্বাধীনভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে, সীমান্ত বন্ধ করেছে এবং এখানে তারা কমই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাহায্য নিয়েছে। ফলে সবকিছু ঠিকমতো করতে পারেনি ডব্লিইএইচও।  

ইথিওপিয়ার সাবেক স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী টেড্রোস মহামারী নিয়ে কোনো কোনো পক্ষের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। এটা তার সমস্যাসংকুল সংস্থার কাজটাকে আরো চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। তবু অনেকেই বিশ্বাস করেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বদলে দেয়ার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করার সামর্থ্য একজনেরই আছে- টেড্রোস।

অ্যাসপেন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক পেগি ক্লার্ক বলেন, ‘আমি মনে করি সে অসাধারণ কাজ করছে। আমার মনে হয়, যে যতটা সম্ভব পরিস্থিতিকে সামাল দেয়া চেষ্টা করছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যখন অনুদান নিয়ে হাস্যকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখনো।’                                                                                                

বর্তমান পরিস্থিতিতে অসহায় ডব্লিইএইচওকে নিয়ে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর লরেন্স গস্টিন বলেন, ‘এমন ডব্লিইএইচও-ই পাওয়ার দাবিদার বিশ্ব। এ কথা বলার কারণ, ডব্লিইএইচওকে তহবিল দেয়া করুণা করার মতো, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৃহৎ হাসপাতালের মতোই যার আকার; বাজেটের দুই তৃতীয় তৃতীয়াংশের ওপর ডব্লিইএইচওর কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। এভাবে কোনো সংস্থা সফল হতে পারে না...যখন কোনো সমস্যা হয় তখন তারা রাজনৈতিক সমর্থন পায় না এবং তাদেরই দোষারোপ করা হয়।’

বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার কিছু ভুলভ্রান্তি ছিল। শুরুর দিকে মাস্ক পরার নির্দেশনা না দেয়া, করোনাভাইরাসকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিতে বিলম্ব করা, বাতাসের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়ায় না-এভাবে নানা বার্তায় বিশ্বে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। যদিও বৈশি^ক বিপর্যয় আর হুর বিরুদ্ধে অভিযোগের পর অভিযোগ এলেও টেড্রোসের নামটি সবার মুখে মুখে এবং তিনি এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ৫৫ বছর বয়সী পাঁচ সন্তানের এই জনক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন ও বিশ্বকে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা দিচ্ছেন, যিনি প্রথম আফ্রিকান ও চিকিৎসকদের বাইরের কেউ হিসেবে ডব্লিইএইচওর মহাসচিব হয়েছেন। ‘পুরনো স্বাভাবিক সময় আর কখনো ফিরবে না’ কিংবা ‘স্বাস্থ্য খাতে সর্বকালের সর্ববৃহৎ জরুরি অবস্থা’র মতো তার কথাগুলো হয়তো ইতিহাসের বইয়েও স্থান পাবে।  

২০১৭ সালে ডব্লিইএইচও মহাসচিবের দায়িত্ব নেন টেড্রোস। মাত্র সাত বছর বয়সে আফ্রিকার এক ‘চাইল্ড কিলার’ রোগে ছোট ভাইকে মরতে দেখেছেন তিনি। বলেছেন, খুব সহজেই তার মধ্যেও এটা আসতে পারতো। সেই টেড্রোস আজ বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব। শৈশবে চোখের সামনে দেখা মহামারীই তার মধ্যে মানুষের প্রতি সহমর্মিতা তৈরি করে দিয়েছে। এই জীববিজ্ঞানী ডব্লিইএইচওর দায়িত্বে আসার পর শপথ নেন, অসমতা দূর করে সবার জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করবেন। কেননা শৈশবে তিনি দেখেছেন বেঁচে থেকে কৈশোর-যৌবনে পা দেয়ার নিশ্চয়তা ছিল না। আবার শুধু গরীব হওয়ার কারণে মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে, এটাও তিনি মানতে পারছিলেন না। যখন সুযোগ এসেছে তখন তার স্বপ্নপূরণে বড় বাধা বিশ্ব রাজনীতি। 

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্ব অবশ্যই জটিলতা তৈরি করেছে। কিন্তু বিশ্বের ভবিষ্যত যখন পেন্ডুলামের সুতোর মতো দুলছে তখন নিজের কাজটি করে যেতে তৎপর টেড্রোস। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভবিষ্যতও ঝুঁকিতে। এখন দেখার বিষয়, কীভাবে তার সংস্থা ভ্যাকসিন বণ্টন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন নির্ধারণ করে দেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার সবচেয়ে বড় দাতাকে হারাবে নাকি আরো বেশি অর্থ ও রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে আগের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। ট্রাম্পকে হারিয়ে জো বাইডেন ক্ষমতায় এলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে তার দেশের সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত দুই পরাশক্তির স্নায়ুযুদ্ধ আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে দাঁড়িয়ে যে মানুষটি এখন লড়াই করছেন তিনি টেড্রোস।

সূত্র: সিএনএন


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫