নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সিঙ্গাপুরের চাকরিপ্রত্যাশীদের আশাভঙ্গ হতে চলেছে। এরই মধ্যে নিয়োগের বিষয়ে যেসব চুক্তি হয়েছিল, একের পর এক সেসব চুক্তি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। মূলত ব্যয়সংকোচনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগ কমিয়ে দেয়ায় এসব চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।
রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি রবার্ট ওয়াল্টার্স সিঙ্গাপুরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রব ব্রাইসন বলেছেন, ‘এর আগে গত মার্চের শেষ ও এপ্রিলের শুরুর দিকে একবার জব অফার বাতিলের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল।’
অন্যদিকে মাইকেল পেজ সিঙ্গাপুরের এমডি নিলয় খান্ডেলওয়াল জানান, ‘সাধারণত আর্থিক সংকটের সময় ব্যাংকিং খাতে বেশি কর্মী ছাঁটাই হয়। আর এবার রিটেইল ও অ্যারোস্পেসের মতো শিল্প খাতগুলোর ওপর দিয়ে ঝড় বেশি বয়ে যাচ্ছে।’
ঠিক কী পরিমাণ চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যা অবস্থা, তাতে সংখ্যাটা বেশ বড় হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এশিয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুর তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকোচন দেখেছে গত প্রান্তিকে। যে দেশটিকে অন্তত ১২ বছরে কোনো প্রান্তিকে জিডিপির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখতে হয়নি, সেই দেশের জিডিপি দ্বিতীয় প্রান্তিকে বার্ষিক ৪১ দশমিক ২ শতাংশ হারে সংকুচিত হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে সিঙ্গাপুরে বেকারত্ব হার বেড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার পর এবারই সেখানে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি দেখা গেল। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট নিয়োগ কমেছে (বিদেশী প্রত্যক্ষ কর্মীসহ) ১ লাখ ২১ হাজার ৮০০, যা প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে চার গুণ বেশি। এ সময়ে ছাঁটাই প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬ হাজার ৭০-তে দাঁড়িয়েছে।
নোমুরা হোল্ডিংসের অর্থনীতিবিদ ইউবেন প্যারাসিউলেস ধারণা করছেন, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সিঙ্গাপুরের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এর আগে সার্স মহামারীর সময়ে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেকারত্বের হার দেখা গিয়েছিল দেশটিতে।
নিয়োগ চুক্তি বাতিল হওয়ায় সেসব কর্মীকে সবচেয়ে বেশি আফসোসে পুড়তে হবে, যারা একটি চাকরি ছেড়ে অন্যটিতে যোগদানের অপেক্ষায় ছিলেন; ৪৪ বছর বয়সী পল হুন তাদেরই একজন। জুনের শুরুর দিকে আগের চাকরি ছেড়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানিতে রিজিওনাল সাপ্লায়ার কোয়ালিটি ম্যানেজার হিসেবে যোগদানের চুক্তি করেছিলেন তিনি।