আলোকপাত

রিজার্ভ থেকে এখনই ঋণ নেয়া বিপজ্জনক হতে পারে

প্রকাশ: জুলাই ১৬, ২০২০

ড. মইনুল ইসলাম

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় মেটানোর জন্য ঋণ নেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আদেশ জারি করেছেন। রিজার্ভে যে সাময়িক স্ফীতি পরিদৃষ্ট হয়েছে, সেটা তাকে রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজে ব্যয়ের ব্যাপারে হয়তো প্রলুব্ধ করেছে। অনেকেরই ধারণা, মোটামুটি তিন মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করার মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট, এর বেশি রিজার্ভের প্রয়োজন নেই। এখন যে গত ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছে গেছে, সেটাই হয়তো ভুল বার্তা দিচ্ছে যে এত বড় রিজার্ভ রাখাটা বাংলাদেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা। বিষয়টা এভাবে বিবেচনা করা ঠিক নয়। অবশ্য মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে জমা রেখে রিজার্ভ থেকে যে সুদ পাওয়া যায়, তা যেহেতু একেবারেই নগণ্য, সেজন্য অনেকের মনে হতে পারে যে আমরা নিজেরাই যদি ওখান থেকে ঋণ নিই তাহলে আমরা বেশি হারে সুদ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে রিজার্ভ সুদাসলে তাড়াতাড়ি বাড়বে।

ব্যালান্স অব পেমেন্টসের ব্যাপারটি ভালোভাবে বোঝা গেলে ধরনের ভুল ধারণার অবসান হবে। ব্যালান্স অব পেমেন্টসের তিনটি অ্যাকাউন্ট থাকে: কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট ক্যাশ অ্যাকাউন্ট। বলা হয়, বছরের শেষে গিয়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টস মাস্ট ব্যালান্স, মানে ৩০ জুনে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্টের প্রাপ্তি ব্যয় যোগ-বিয়োগের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের (ক্যাশ অ্যাকাউন্টের) হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে লেনদেন ভারসাম্যে পৌঁছতেই হবে। কারেন্ট অ্যাকাউন্টে দেশের যাবতীয় দৃশ্যমান অদৃশ্যমান আমদানি ব্যয় রফতানি আয়ের ভারসাম্য (মানে ঘাটতি বা উদ্বৃত্ত) রেকর্ড করা হয়। কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ঘাটতি থাকলে বৈদেশিক ঋণ/অনুদান এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের অর্থ দিয়ে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্টে তা পূরণ করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত দিতে হয় না, নয়তো রিজার্ভ কমে যাবে (মাঝে মাঝে কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতির চেয়ে ওই বছরে প্রাপ্ত বৈদেশিক ঋণ-অনুদান এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের অর্থের যোগফল বেশি হলেও রিজার্ভ বেড়ে যায়) আর যদি কারেন্ট অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত থাকে তাহলে এই উদ্বৃত্তের সঙ্গে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্টে ওই বছরে প্রাপ্ত বৈদেশিক ঋণ-অনুদান এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের অর্থ যুক্ত হয়ে রিজার্ভ আরো স্ফীত হয়ে যাবে। এর মানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্ফীতির আসল গুরুত্ব হলো, এটি একটি দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা শক্তির প্রতীক। কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন ক্রমবর্ধমান থাকে, তখন ওই অর্থনীতির নীতিপ্রণেতাদের কারো ব্ল্যাকমেইলের তোয়াক্কা করতে হয় না। নীতিগ্রহণের এই সার্বভৌমত্বের মূল্য অপরিসীম, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বিশ শতকের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বৈদেশিক অনুদান ঋণের ওপর চরমভাবে নির্ভরশীল ছিল। তখন আমাদের দেশের শাসকদের দাতা দেশ সংস্থাগুলোর ডিকটেশনের কাছে কতখানি অসহায় থাকতে হতো, সেটা যেন আমরা কখনই ভুলে না যাই। বিশ শতকের সত্তর আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ যে বৈদেশিক সাহায্য পেত, গড়ে তার ২৯ দশমিক শতাংশ ছিল খাদ্য সাহায্য, ৪০ দশমিক শতাংশ ছিল পণ্য সাহায্য, আর ২৯ দশমিক শতাংশ থাকত প্রকল্প সাহায্য। ওই পর্যায়ে দেশের আমদানি বিলের ৭০ শতাংশ বা তারও বেশি মেটাতে হতো বৈদেশিক ঋণ-অনুদান দিয়ে। ওই দশকগুলোয় সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটগুলোর প্রায় শতভাগ বৈদেশিক ঋণ-অনুদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমাদের রফতানি আয় এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সপ্রবাহের প্রশংসনীয় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা গত দুই দশকে জাতিকে এই মিসকিনসুলভ অপমান থেকে মুক্তি দিয়েছে। ২০১২ সালে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ ঋণ বিশ্বব্যাংক অন্যান্য দাতা সংস্থা যখন বাতিল করে দিয়ে বাংলাদেশকে নাকে খত দেয়াতে চেয়েছিল, তখন সাহস করে আমরা যে তাদের রুখে দাঁড়াতে পেরেছিলাম, তার পেছনে প্রধান কারণই ছিল বাংলাদেশের লেনদেন ভারসাম্যের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ধারাবাহিক উদ্বৃত্ত অবস্থা এবং সে কারণে ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০০১ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল, তখন রিজার্ভ মাত্র দশমিক শূন্য বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু ওই বিপজ্জনক অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে গত ১৯ বছরে রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে এখন রেকর্ড পরিমাণ ৩৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যেটা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই ক্রমবর্ধমান রিজার্ভের কারণে বাংলাদেশের টাকার বৈদেশিক বিনিময় হার গত কয়েক বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে খুব বেশি অবনমনের শিকার হয়নি। ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি রুপির বৈদেশিক বিনিময় হার টাকার তুলনায় বেশি ছিল, এখন টাকা দিয়ে পাকিস্তানি দশমিক ২৫ রুপি পাওয়া যায়। এমনকি আগে যেখানে ভারতীয় রুপি কেনার জন্য বাংলাদেশের টাকা ৭০ পয়সা লাগত, এখন লাগে মাত্র টাকা ২০ পয়সা। শ্রীলংকার মুদ্রার তুলনায়ও ক্রমে শক্তিশালী হয়ে চলেছে বাংলাদেশের টাকা। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, টাকার মানের কম অবনমনের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হারও এক দশক ধরে সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, যেকোনো দেশের অর্থনীতির দুর্বলতা এবং শক্তির অ্যাসিড টেস্ট হলো লেনদেন ভারসাম্যের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি বনাম উদ্বৃত্তের অবস্থান। বাংলাদেশের দৃশ্যমান রফতানি আমদানিপ্রবাহের ব্যালান্স অব ট্রেডে এখনো প্রায় বছর ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যখন থেকে আমরা প্রধানত ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সপ্রবাহের সহায়তায় ওই ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হচ্ছি, তখন থেকে বৈদেশিক ঋণ-অনুদানের জন্য আমাদের আর বিদেশী রাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার দয়াদাক্ষিণ্যের ওপর অতিনির্ভরশীল হতে হচ্ছে না। এখন আমাদের খুব বেশি অনুদান দেয়া হয় না, এখন আমাদের পণ্য ঋণ-অনুদানও নিতে হয় না। খাদ্য সাহায্যও এখন মোট বৈদেশিক ঋণ-অনুদানের মাত্র দেড়-দুই শতাংশের বেশি নয়, আমাদের বৈদেশিক ঋণের ৯৮ শতাংশেরও বেশি এখন প্রকল্প ঋণ। প্রতি বছর ছাড়কৃত বৈদেশিক ঋণ এখন দেশের জিডিপির এক থেকে দেড় শতাংশে নেমে এসেছে, অথচ সত্তর আশির দশকে তা ছিল জিডিপির ১০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এখনো সফট লোন পাওয়া গেলে আমরা নিতে আগ্রহী হই, কিন্তু আমাদের বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এখন সাপ্লায়ার ক্রেডিট। সাপ্লায়ার ক্রেডিটের অসুবিধে হলো, জোগানদাতারা প্রকল্পের প্লান্ট, যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম ঋণ হিসেবে দেয়ার সময় প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজার দামের চেয়ে অনেক বেশি দাম ধরে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। উপরন্তু, সাপ্লায়ার ক্রেডিটের সুদের হারও সফট লোনের সুদের হারের চেয়ে বেশি, ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও কম থাকে। আরো গুরুতর হলো, সাপ্লায়ার ক্রেডিটে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ব্যবসায়ী আমলাদের মার্জিনের হার অনেক বেশি হয়ে থাকে (অবশ্য সাপ্লায়ার ক্রেডিটে সফট লোনের চেয়ে গোপন শর্তের বহর কম থাকে)

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে খারাপ সাপ্লায়ার ক্রেডিটের নজির সৃষ্টি করেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রধানত ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণের অর্থায়নে ২০২৪ সালে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে নাকি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪০০ মেগাওয়াট বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু প্রাক্কলিত লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের তুলনায় বিকল্প প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো অনেক কম খরচে আমরা এই ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে পারতাম (শেষ পর্যন্ত প্লান্টের প্রাক্কলিত ব্যয়ও আরো অনেক বেড়ে যাবে!) তবুও কেন আণবিক প্লান্টের মতো একটি মহাবিপজ্জনক প্রযুক্তির প্লান্ট বাংলাদেশের সীমানার মাঝখানে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। কয়লাভিত্তিক কয়েকটি বিদ্যুৎ প্লান্টও সাপ্লায়ার ক্রেডিটের মোহে গ্রহণ করা হয়েছে পরিবেশের, বিশেষত সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কা সত্ত্বেও। অবস্থায় চলমান নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ধকল সামলানোর সংগ্রামে যেখানে জনগণকে আগামী এক-দুই বছর জীবনরক্ষা জীবিকার পুনরুদ্ধারে ব্যাপৃত থাকতে হবে, সে পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় মেটানোর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়ার প্রস্তাবকে মোটেও সময়োপযোগী বলা যাচ্ছে না। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, সেটার অভিঘাত আগামী অর্থবছরে অনেক বেশি মারাত্মক আকারে পরিদৃষ্ট হবে। কারণ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের অভিঘাতগুলো পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হতে কিছুটা সময় লাগাই স্বাভাবিক। গার্মেন্টসহ পুরো রফতানি খাতের সংকোচন, লাখ লাখ অভিবাসী বিদেশে চাকরি হারিয়ে ফিরে আসার মিছিল, দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খাতগুলোর এক থেকে দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি-ছাঁটাই-কর্মসংস্থান হারিয়ে ফেলা, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ধ হয়ে যাওয়ার হিড়িক, পর্যটন খাতের মহাবিপর্যয়, হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ের অস্তিত্বের সংকট, পরিবহন সেবা খাতের মহাসংকট, রেলওয়ে-নৌ পরিবহন-বিমান-সড়ক তাবৎ যোগাযোগ ব্যবস্থার চাহিদার সংকোচন, ব্যাংকিংসহ পুরো আর্থিক খাতের অস্তিত্বের সংকট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখার সংকটএগুলোর যুগপৎ আক্রমণ অর্থনীতিকে আগামী বছর প্রচণ্ড টালমাটাল অবস্থায় নিয়ে যাবে।

অতএব, এখন উন্নয়ন ব্যয় নিয়ে মাতামাতি করার কোনো প্রয়োজন আছে কি? আমাদের রফতানি আয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৬৮৬ কোটি ডলার (১৬.৯৩ শতাংশ) কমে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে, যা ঘোষিত টার্গেটের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। রফতানি আয়ে আমরা পাঁচ বছর পেছনে চলে গেলাম। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্যও যে ৩৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় প্রাক্কলিত হয়েছে, সেটাকেও উচ্চাভিলাষী মনে হচ্ছে। কারণ একমাত্র পাট পাটজাত দ্রব্য রফতানি ছাড়া দেশের সব রফতানি খাতের আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা গেড়ে বসেছে। আগামী অর্থবছরে এই খাতগুলোর রফতানি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে মনে হচ্ছে না। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সপ্রবাহে গত অর্থবছরে যে স্ফীতি রেমিট্যান্সকে ১৮ দশমিক বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছে, সেটাও একেবারেই সাময়িক মনে হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে কয়েক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী বিদেশে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত আসবেন। আশঙ্কা হচ্ছে, আগামী বছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সপ্রবাহ এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তাই দেশে ফেরত আসা অভিবাসীদের সঞ্চয়কে কীভাবে উৎপাদনমূলক প্রকল্পে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা যায়, সেটাই নীতিপ্রণেতাদের প্রথম অগ্রাধিকার হতে হবে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও এক থেকে দেড় কোটি শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে যাবে বলে বিআইডিএস এর একজন গবেষক প্রাক্কলন করেছেন, তাদের জীবন নির্বাহ জীবিকা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকেও বিনিয়োগ সহায়তা দিতে হবে সরকারকে। এসব পরিবারের পাঁচ থেকে ছয় কোটি মানুষের কাছে ভর্তুকি দামে রেশনের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছাতে হবে, তাদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ক্রয়ক্ষমতা পৌঁছাতে হবে। একই সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় মুখ থুবড়ে পড়া দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার খোল নলচে বদলে ফেলার কাজটিও শুরু করতে হবে অবিলম্বে। পাশাপাশি আরেকটি বিপদ আসবে আমাদের ব্যালান্স অব ট্রেডে ওখানে যে ১৫ বিলিয়ন ডলার বা আরো বেশি ঘাটতি পড়বে, সেটা আমরা সংকুচিত রেমিট্যান্সপ্রবাহ দিয়ে মেটাতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত দিতে হতে পারে। পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ, এখনই রিজার্ভে হাত দেবেন না, প্লিজ! রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান করার চিন্তাকে এখনো সময়োপযোগী বলা যাচ্ছে না।

 

. মইনুল ইসলাম: একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ

অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫