পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে ব্যাহত ফেরি চলাচল

দৌলতদিয়ায় পারের অপেক্ষায় সহস্রাধিক পণ্যবাহী ট্রাক

প্রকাশ: জুলাই ১৬, ২০২০

বণিক বার্তা প্রতিনিধি রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর পদ্মায় আবারো অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে পানি। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে তীব্র স্রোতের কারণে ঘাটে ফেরি ভিড়তে সময় লাগছে দ্বিগুণ। তার ওপর রয়েছে ফেরি সংকট। অবস্থায় ঘাট এলাকায় তৈরি হচ্ছে যানবাহনের লম্বা সারি। প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রাককে ফেরির নাগাল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দু-তিনদিন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় ৩০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

গতকাল বিকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পানি বৃদ্ধির ফলে ফেরিঘাটগুলো তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাটে থাকা ছয়টি ফেরিঘাটের মধ্যে নম্বর ঘাট গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী হয়নি। বাকি , , নম্বর ঘাট সমান পানি দেখা যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে হয়তো দু-একদিনের মধ্যেই তলিয়ে যাবে সচল থাকা চারটি ঘাট।

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতে তৈরি হওয়া প্রবল স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে ১৬টি ফেরির মধ্যে বিকল হয়েছে চারটি। বাকি ১২টি ফেরি দিয়ে চলছে নৌরুটের পারাপার। এছাড়া প্রবল স্রোতের কারণে ৩০ মিনিটের নৌপথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি সময়। যে কারণে ঘাট এলাকায় তৈরি হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাকের লম্বা সিরিয়াল।

গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৩০০ ট্রাক আটকে আছে। এছাড়া ঘাট থেকে ১২ কিলোমিটার পেছনে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার কামালদিয়া পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৭০০ ট্রাক গোয়ালন্দ মোড় থেকে ফরিদপুর সড়কের নিমতলা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় আরো ২০০ পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে।

গোয়ালন্দ মোড়ে আটকে থাকা ট্রাকের চালক হাবিবুল্লাহ শেখ বলেন, বিআইডব্লিউটিসির গাফিলতির কারণে ঘাটে এসে বিপদে পড়তে হয় মাঝে মধ্যেই। এটা নতুন বিষয় নয়। শীতে কুয়াশায় ফেরি বন্ধ, আবার বর্ষায় স্রোতে ফেরি নষ্ট হয়। ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই ফেরি কর্তৃপক্ষের। যে কারণে ভোগান্তি শেষ হয় না।

অন্য এক ট্রাকচালক আমীর মন্ডল বলেন, গত সোমবার সকাল থেকে গোয়ালন্দ মোড়ে আটকে আছি। কখন ফেরির নাগাল পাব বলা মুশকিল। এদিকে ট্রাকের মালিক ট্রাকে থাকা মালামালের ব্যবসায়ী বারবার ফোনে রাগারাগি করছেন। তাছাড়া এমন একটি এলাকায় আটকে আছি, যেখানে খাবারের কোনো হোটেল নেই। ২০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে খাবার খেতে যেতে হচ্ছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমান মৃধা বলেন, প্রবল স্রোত ফেরিস্বল্পতার কারণে চাপ বেড়েছে যানবাহনের। ঘাট এলাকায় যাতে কোনো জটলা তৈরি না হয়, সেজন্য গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় ট্রাকগুলোকে সারিবদ্ধভাবে রাখা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ ঘাট থেকে যে কয়টি যানবাহনের চাহিদা দিচ্ছে, সেভাবেই পাঠানো হচ্ছে।

ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি বণিক বার্তাকে বলেন, প্রবল স্রোতে নদী পার হতে ফেরিগুলোর সময় লাগছে বেশি। যে কারণে কমেছে ট্রিপ সংখ্যাও। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে কাঁচামাল বহনকারী ট্রাক। পদ্মার স্রোত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর সমাধান কারো হাতে নেই।

তিনি আরো বলেন, নৌরুটে ১৬টি ফেরির মধ্যে ১২টি ফেরি চলাচল করছে। বাকি চারটি ফেরির মধ্যে দুটি বিকল আর দুটি স্রোত মোকাবেলা করে চলতে না পারায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে বিকল ফেরি দুটি শিগগিরই বহরে যুক্ত করা হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫