৫ বছরে ১৮ কোটি টাকা লোকসানে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি

প্রকাশ: জুলাই ১৩, ২০২০

রিফাত রহমান চুয়াডাঙ্গা

হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া পাহারাদাররা বরখাস্ত

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের কৃষি খামারে ৫ বছরে ১৮ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কৃষি খামারের শিডিউল অনুযায়ী শ্রমিকরা কাজ না করেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অতিরিক্ত বিল উত্তোলন, বেশ কয়েকবার খামারের সার চুরি, সেটআপ অনুযায়ী কৃষি খামারে যে পরিমাণ 

পাহারাদার প্রয়োজন, তার চেয়ে তিন গুণ বেশি পাহারাদারের বিল উত্তোলন করার কারণে প্রতি বছরই খামারের লোকসান বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে লোকসানের কারণ দেখিয়ে হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগ করা সাড়ে ৩০০ পাহারাদারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এসব পাহারাদারের অভিযোগ, হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগ করা হলেও তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) একটি প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। বিএসএফআইসি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের কৃষি খামারগুলোয় গত পাঁচ বছরে ১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৯০ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৭ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলাকার আখচাষী ও কেরুর নিজস্ব বাণিজ্যিক খামারগুলোয় প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে আখ চাষ করা হয়, যা থেকে প্রায় ২৫ হাজার টন আখ পাওয়া যায়। যার বাজারমূল্য ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ পরিমাণ আখ উত্পাদন করতে প্রতি বছর চিনিকলের গড়ে খরচ হয় ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতি বছর এ বাবদ গড়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোকসান হয়। আর লোকসানের পরেও চিনিকল চালিয়ে রাখার জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নানামুখী অনিয়মের আশ্রয় নেয়। 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শুধু চিনিকল কৃষি খামারের পাহারাদারের বিল বাবদ প্রতি বছর ২ কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হয়। তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো পাহারাদারই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। ফলে কৃষি খামারে সর্বক্ষেত্রে নানা অনিয়ম, বছরের পর বছর লোকসান, প্রভাব খাটিয়ে অতিরিক্ত দৈনিক পাহারাদার দেয়াসহ কৃষি খামারগুলোয় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পায় বিএসএফআইসি। 

এ অবস্থায় বিএসএফআইসি সম্প্রতি কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ বিষয়গুলো রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। সে মোতাবেক চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেরু চিনিকলের ডিজিএম (ফার্ম) মো. হুমায়ুন কবীরসহ সব ফার্ম ইনচার্জকে জানিয়ে দেন যে দৈনিক পাহারাদারদের খামারে আসার দরকার নেই।   

এদিকে দৈনিক পাহারাদাররা ফার্ম ইনচার্জদের কাছ থেকে এমন খবর শোনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের অভিযোগ, বিগত সময়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অর্থ বাণিজ্যের সহায়তায় চিনিকলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দিন হাজিরায় তাদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। 

বাদ পড়া এমন কয়েকজন পাহারাদার এ প্রতিবেদককে জানান, কেরু চিনিকলের ১০টি কৃষি খামারের মধ্যে নয়টি কৃষি খামারের দৈনিক হাজিরার প্রায় সাড়ে ৩০০ পাহারাদারকে কাজ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু চিনিকলের আকন্দবাড়িয়া পরীক্ষামূলক খামারের প্রায় অর্ধশত দৈনিক হাজিরার পাহারাদার বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন।

তারা আরো অভিযোগ করেন, আকন্দবাড়ীয়া খামারের শ্রমিকদের দৈনিক গড় হাজিরা ৩৭৫ টাকা দেখিয়ে চিনিকলের অনেক কর্মকর্তার বাড়িতেই একজন বা দুজনকে বাজার করা, বাড়িতে মালির কাজসহ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজে লাগানো হয়। এ কারণে এ খামারের পাহারাদারদের বাদ দেয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবু সাইদ জানান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কৃষি খামারগুলোয় লাগাতার লোকসান কমিয়ে লাভে ফিরিয়ে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাছাড়া যারা বাদ পড়েছেন তারা দিন হাজিরায় কাজ করতেন। প্রতিদিন হাজিরা দিয়ে কাজ করানো হয়। আর চিনিকলের আকন্দবাড়ীয়া পরীক্ষামূলক খামারের শ্রমিকদের কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কাজে বা বাড়ির কাজে লাগানোর অভিযোগ সঠিক নয়। এছাড়া আকন্দবাড়ীয়া পরীক্ষামূলক খামারের দৈনিক পাহারাদারদেরও বাদ দেয়া হয় বলে জানান তিনি।

হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া পাহারাদারদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. আবু সাইদ জানান, তিনি নতুন নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগের যিনি এমডি ছিলেন তিনি বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারবেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫