দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া হোক

প্রকাশ: জুলাই ১৩, ২০২০

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক আবহাওয়া মডেলের তথ্যানুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চলের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তত্সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ বিহার প্রদেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এই সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র মেঘনার একটি বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান। এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশকে বছরের পর বছর বন্যায় আক্রান্ত হতে হচ্ছে। কখনো কখনো এই বন্যা সহনশীল মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা ভয়াল আকার ধারণ করছে। এর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির শিকার লাখ লাখ মানুষ। কিছু ক্ষেত্রে সহায়তামূলক কার্যক্রম দেখা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এজন্য বন্যার শিকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর আরো অগ্রণী ভূমিকা জরুরি। ভারতের আসামে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির খবর মিলছে, বৃষ্টিপাতও বাড়ছে। পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হবে। ফলে দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সরকারকে তাই বন্যা মোকাবেলায় দ্রুত সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া, ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার, গবাদিপশুদের সরিয়ে নেয়া থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে করোনার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। সর্বোপরি ত্রাণ পুনর্বাসনে অনিয়ম রোধে তদারকি জোরদারের বিকল্প নেই। 

নদী, উপনদী, খাল অন্য চ্যানেলগুলোর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে অতিবৃষ্টিতে সহজেই পানি উপচিয়ে বন্যার আকার ধারণ করছে। নির্বিচারে বন ধ্বংস হওয়ার ফলে বনভূমি থেকে প্রচুর মাটি ক্ষয় হয়ে বৃষ্টির ঢলের সঙ্গে তা প্রবাহিত হয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশের নদীগুলোর নাব্য এরই মধ্যে কমিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে অতিবৃষ্টি পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসায় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বৃষ্টিপাতের পানি। কারণে দেশের বিভিন্ন নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে। পরিস্থিতিতে আরো বৃষ্টি হলে এবং উজানের ঢল যুক্ত হলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বন্যা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এর নানামুখী প্রভাব থেকে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি তারা যাতে দ্রুত বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারে, কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। অবস্থা উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ যেমন নিতে হবে, তেমনি বন্যার তাত্ক্ষণিক আঘাত থেকে বাঁচার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্গত মানুষ-পশুপাখি যেন আশ্রয় পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। বন্যা চলাকালে বিপুলসংখ্যক দুর্গত মানুষকে ক্ষুধা, কভিড-১৯ সহ অন্যান্য রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করাই প্রধান কর্তব্য। এজন্য প্রথমত বরাদ্দ অনেক বাড়ানো এবং তার সুষ্ঠু বিতরণসহ সামগ্রিক সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এনজিও, ব্যক্তি খাত, সরকারের সমন্বয়ের সুষ্ঠু কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ক্ষতি কমিয়ে আনা কঠিন হবে না। যেহেতু দেশে করোনা মহামারী চলছে, সেহেতু এবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। মহামারীর কারণে জীবিকা হারিয়ে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরেছে। বস্তুত করোনা মহামারীর কারণে সারা দেশের মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে তাদের অনেকের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। অবস্থায় বন্যার্তদের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত। বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তা কূল উপচে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। এতে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সেখানকার ঘরবাড়ি পানির নিচে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি খাবার সংকট। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের লক্ষণ এখনো দেখা না গেলেও অচিরেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদী খনন শুষ্ক মৌসুমে পরিকল্পিতভাবে সংস্কারকাজ না করাসহ ওয়াপদা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির জন্য তাদের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ভোগ বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বছর বছর ভেঙে যাওয়া নদীতীর রক্ষা বাঁধগুলোর সংস্কার করা কিংবা স্থায়ীভাবে বাঁধের কাজ না করায় তাদের এই চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীর পানি উপচে বন্যার পদধ্বনি কেবল নয়, এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য দুর্ভাবনার। সামনে ভয়াবহ বন্যার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা আমলে নিয়েই সরকারের এখন থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের সাধ্যাধীন নয়। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চয়ই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নদী ভরাট হওয়ার কারণে যেমন বেড়েছে ভাঙন, তেমনি সামান্য ঢলে দুকূল উপচে আকস্মিক বন্যা ঘটায়। নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষা করে একদিকে যেমন বন্যার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তেমনি সম্ভব ভাঙন ঠেকানো। আমরা জানি ড্রেজিং নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বন্যার সময় বাঁধ একটা বড় আশ্রয়স্থল। যেভাবে বাঁধ ভাঙছে, তাতে সব বাঁধকে এখন নিরাপদ আশ্রয় মনে করা যাচ্ছে না। তারপর রয়েছে খাদ্য সংকট। আমরা আশা করছি, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যসহায়তা দেয়ার সংস্থান করবে সরকার। বিশুদ্ধ পানি, ওষুধপত্র চিকিৎসাসেবাও প্রস্তুত রাখা দরকার।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫