নির্বিচারে বনভূমি উজাড় ও বৃক্ষনিধন বিরূপ প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপর। প্রকৃতির ওপর অব্যাহত এ অত্যাচারের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সীমিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পার্বত্য তিন জেলায় এক লক্ষাধিক গাছের চারা সৃজনের উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এ কার্যক্রমের আওতায় এরই মধ্যে পার্বত্য তিন জেলার প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। ১৫ জুলাই সকালে একযোগে তিন জেলাতেই সৃজিত হবে এসব চারা গাছ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’
প্রকল্পের অধীনে তিন পার্বত্য জেলায় ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রের প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে ২৫টি করে মোট ১ লাখ ৭ হাজার ৫০০ গাছের চারা সৃজিত হবে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটির ১ হাজার ৬০৭ পাড়াকেন্দ্রে ৪০ হাজার ১৭৫টি, খাগড়াছড়ির ১ হাজার ৫১৮টি পাড়াকেন্দ্রে ৩৭ হাজার ৯৫০টি ও বান্দরবানের ১ হাজার ১৭৫টি পাড়াকেন্দ্রে ২৯ হাজার ৩৭৫টি বিভিন্ন জাতের চারা সৃজন করা হবে। প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রের আওতায় জামের চারা দুটি, জাম্বুরা বা বাতাবি লেবুর চারা দুটি, বেলের চারা দুটি, আমলকী তিনটি, নিম তিনটি, হরীতকী তিনটি, বহেরা তিনটি, তেঁতুল তিনটি, অর্জুন দুটিসহ ২৫টি গাছের চারা সৃজন করা হবে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, এরই মধ্যে গাছের চারা রোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা সম্পর্কে তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলায় পাড়াকর্মী ও মাঠ সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চারা রোপণের স্থান নির্ধারণসহ এ কাজে সার্বিকভাবে সহায়তা করছেন প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রের পরিচালনা কমিটি ও কিশোর-কিশোরী দল। এসব চারা সৃজন করা হবে পাড়াকেন্দ্রের নির্দিষ্ট জায়গা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এছাড়া সৃজিত গাছের পরিচর্যা করবেন পাড়াকেন্দ্র পরিচালনা কমিটি ও কিশোর-কিশোরী দলের সদস্যরাও। এরই মধ্যে প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে চারা কলাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং চারা রোপণের জন্য গর্ত খনন, ফেন্সিং, জৈব সার সংগ্রহের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ১৫ জুলাই সকাল ১০টায় পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রে এসব গাছের চারা সৃজন করা হবে। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চারা ক্রয়, সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ, পরিবহনসহ অন্যান্য খাতে প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে ১ হাজার ১৬২ টাকা হারে মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।
মাঠ সংগঠক ও পাড়াকর্মীরা জানান, বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণের বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী এসব গাছের চারা কলাম রোপণের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে গর্ত তৈরির জন্য বলা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই গর্ত খননকাজ ও জৈবসার সংগ্রহ করেছেন। এ কাজে বিশেষত মাঠ সংগঠক ও পাড়াকর্মীদের পাড়াকেন্দ্র পরিচালনা কমিটি ও পাড়াকেন্দ্রের কিশোর-কিশোরী দলের সদস্যরা সহযোগিতা করছে। পাড়াকেন্দ্রের আশপাশের এলাকা ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বিশেষ স্থানেও চারা কলাম রোপণ করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে ফলদ, বনজ, ওষধি গাছের চারা সৃজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাড়াকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টায় তিন পার্বত্য জেলার ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রে একযোগে এসব চারা কলাম সৃজন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে বাড়তি চারা সৃজনের ইচ্ছাপোষণ করায় আমাদের এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার চারা সৃজন করা হবে ১৫ জুলাই সকাল ১০-১১টার মধ্যেই। এটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের পাঁচটি উদ্যোগের অন্যতম।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বণিক বার্তাকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় দিন দিন বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। যে হারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে, সে অনুপাতে সৃজন করা হচ্ছে না। তাই জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল মোট আয়তনের এক-চতুর্থাংশ, যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় লক্ষাধিক বৃক্ষ সৃজন করে কিছুই হবে না। এ ব্যাপারে বন বিভাগকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। উন্নয়ন বোর্ড মূলত পাড়াকেন্দ্রের আশপাশ এলাকায় এসব চারা কলাম সৃজন করবে, যার মধ্যে ওষধি, ফলদ ও বনজ চারা রয়েছে। এসব চারা কলাম বড় হলে ব্যক্তিগতভাবে নয়, সবাই উপকৃত হবে।