চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি: ভুটান

প্রকাশ: জুলাই ১১, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানিয়েছে ভুটান। ভারতে অবস্থিত ভুটান দূতাবাস সম্প্রতি জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে সীমানা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে এবং সীমান্ত এখনো চিহ্নিত হয়নি। নিয়ে একটি বিবৃতিও দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, সীমান্ত সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য পর্যন্ত মন্ত্রী পর্যায়ে প্রায় ২৪ দফা আলোচনা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক রাজনৈতিক বিশেষকরা বলছেন নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ভুটানের প্রতি পেশিশক্তি দেখাচ্ছে বেইজিং। খবর সাউথ এশিয়ান মনিটর স্ক্রল ইন।

ভুটানের এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে চীনের সঙ্গে তাদের ২৫তম দফা আলোচনা বিলম্বিত হচ্ছে। এতে বলা হয়, পরবর্তী দফা সীমান্ত আলোচনায় সব বিতর্কিত এলাকা নিয়ে কথা হবে। পরস্পরের সুবিধাজনক সময়ে শিগগিরই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। বিতর্কিত লাদাখ থেকে চীন ভারতের সেনারা প্রস্থান করলেও তার পরবর্তী প্রভাব হিসেবে ভুটানের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে বেইজিং।

উল্লেখ্য, গত জুনের শেষের দিকে ভুটানের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে একটি বিতর্কিত ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করে চীন। গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি কাউন্সিলের ৫৮তম বৈঠকে চীন ওই মন্তব্য করে। সেখানে সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে একটি প্রকল্পে তহবিল প্রদানের বিরোধিতা করে চীন।

সময় একে বিতর্কিত ভূখণ্ড হিসেবে অভিহিত করে। তবে তখনই ভুটান এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং চীনা প্রতিনিধির কাছে একটি কঠোর প্রতিবাদলিপি পাঠায়। এতে বলা হয়, সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ভুটানের অবিচ্ছেদ্য সার্বভৌম ভূখণ্ড।

অভয়ারণ্য কখনই কোনো বৈশ্বিক তহবিলের অংশ ছিল না। প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে এখানকার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সুযোগে চীন স্থানটির ওপর তার দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে। কিন্তু স্থানটি চীনের দাবি করা ভারতের অরুণাচল প্রদেশের প্রধান শহর তেওয়াংয়ের কাছাকাছি হওয়ায় নয়াদিল্লি সতর্কতার সঙ্গে চীনের তত্পরতার ওপর নজর রাখছে। পুরো অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে মনে করে চীন এবং দীর্ঘদিন ধরে এর মালিকানা দাবি করে আসছে দেশটি।

ভুটানের সর্বপূর্বে তারাশিগাং জংখায় অবস্থিত সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এর আয়তন ৭৪০ দশমিক ৬০ বর্গকিলোমিটার। দেশের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় অভয়ারণ্যের অবস্থান বিধায় সেখানে তেমন কোনো উন্নয়নকাজ হয় না। সাকতেং অভয়ারণ্যের সঙ্গে ভারতের অরুণাচল প্রদেশেরও সীমানা রয়েছে। বনে বিচিত্র ইকোসিস্টেম রয়েছে। যার মধ্যে ওয়ার্ম ব্রডলিফ ফরেস্ট থেকে শুরু করে আলপাইন মিডোও রয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে বিরোধের জেরে চীন ভুটানের ওই অংশকে বিতর্কিত ভূখণ্ড দাবি করেছে। ভুটানের অনেকেই পদক্ষেপ কল্পনা করতে না পারলেও ভারত দীর্ঘদিন ধরে চীনের সীমান্ত উচ্চাবিলাস নজরে রেখেছিল। কারণ অঞ্চলটিতে ভুটানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পররাষ্ট্রনীতি প্রতিরক্ষা নিয়ে কাজ করছে ভারত। ভুটানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি মিশন রয়েছে, যারা রয়্যাল ভুটান আর্মি রয়্যাল বডিগার্ড অব ভুটানের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়।

সেন্টার ফর ভুটান গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস স্টাডিজের প্রধান দর্জি পেঞ্জরি একটি নিবন্ধে লেখেন, শিনো-ভুটান সীমান্ত বিরোধ কোনো ভূখণ্ড দখলের লড়াই নয়। বরং আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ভারতের সঙ্গে মিত্রতার কারণে চীনের সাজা দেয়ার প্রয়াস।

ভুটানের রয়্যাল থিম্পু কলেজের অধ্যাপক রবিলাল ধাকাল বলেন, ভুটানের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনাদের উপস্থিতিতে সবসময়ই উষ্মা প্রকাশ করে এসেছে চীন।

ধাকালের সহজ স্বীকারোক্তি, চীনের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হওয়ার কারণ নয়াদিল্লির সঙ্গে বেইজিংয়ের বিরোধ। যদি চীন ভারতের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়, তাহলে চীনের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা থাকে না।  


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫