করোনা মহামারীর প্রভাব

ধাক্কা খেতে পারে পাম অয়েলের বৈশ্বিক ব্যবহার

প্রকাশ: জুলাই ১১, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব রদবদল ঘটেছে। পণ্যবাজারের প্রায় প্রতিটি খাতেই এর কোনো না কোনো প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি ভোজ্যতেলের বাজার বিশ্লেষণকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান অয়েল ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির রেকর্ড শুরুর পর থেকে এবারই প্রথম পাম অয়েলের বৈশ্বিক ব্যবহার নিম্নমুখী প্রবণতায় পড়তে পারে। মূলত করোনা মহামারীর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের সীমাবদ্ধতা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার জেরে বিশ্বজুড়ে পণ্যটির ব্যবহার কমিয়ে আনছেন ভোক্তারা। খবর রয়টার্স।

প্রতি বছরের অক্টোবর থেকে পাম অয়েলের নতুন বিপণন মৌসুম শুরু হয়, যা শেষ হয় পরের বছরের সেপ্টেম্বরে। অয়েল ওয়ার্ল্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে আগের মৌসুমের তুলনায় পাম অয়েলের বৈশ্বিক ব্যবহার ২২ লাখ টন বা প্রায় শতাংশ কমে যেতে পারে। এর আগে পণ্যটির বার্ষিক বৈশ্বিক ব্যবহারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী পরিচালক টমাস মিয়েলকে জানান, পাম অয়েলের বৈশ্বিক ব্যবহারে নিম্নমুখী প্রবণতা নজিরবিহীন। গত মৌসুমেও ভোজ্যতেলটির বৈশ্বিক চাহিদা আগের মৌসুমের তুলনায় ৮০ লাখ টন বেড়েছিল।

তিনি বলেন, পাম অয়েল ব্যবহারের অন্যতম বড় খাতগুলোর মধ্যে একটি রেস্টুরেন্ট। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে দেশে দেশে। এর জের ধরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট ব্যবসা এবং ভ্রমণ খাতের ওপর সীমাবদ্ধতা টেনেছে। ফলে পাম অয়েলের বৈশ্বিক ব্যবহার বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সম্প্রতি অনেক দেশে লকডাউন শিথিল করলেও খাতগুলোর কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিকে ফেরেনি।

এদিকে ভারত চীনসহ বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি পাম অয়েল ভোক্তা দেশকে সম্প্রতি পণ্যটির আমদানিতে জোর দিতে দেখা গেছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির মূল্যহ্রাসের সুযোগ নিতে চাইছে দেশগুলো। এছাড়া ভারত চীনে ভোজ্যতেলটির মজুদ কমতির দিকে রয়েছে বলে অবহিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এছাড়া রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি মাস থেকে পণ্যটির রফতানি শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া, যা আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।

ইন্ডিয়ান ভেজিটেবল অয়েল প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (আইভিডিএ) মতে, গত এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত ভারত প্রতি মাসে গড়ে চার লাখ টন পাম অয়েল আমদানি করেছে। তবে আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পণ্যটির মাসভিত্তিক গড় আমদানি দ্বিগুণ বেড়ে আট লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। তবে মৌসুম শেষে দেশটির আমদানি দাঁড়াতে পারে সব মিলিয়ে ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টনে, আগের মৌসুমের তুলনায় যা ২৩ শতাংশ কম।

এদিকে, বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) চীনে পাম অয়েলের মাসপ্রতি গড় চাহিদা ছিল লাখ হাজার টন। সম্প্রতি চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে আমদানি। তবে বছর শেষে দেশটিতে ভোজ্যতেলটির আমদানি আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কমে ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টনে নামতে পারে।

চাহিদা বৃদ্ধির জের ধরে জুনের প্রথম দিকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পাম অয়েল রফতানিকারী দেশ মালয়েশিয়া থেকে পণ্যটির রফতানি আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এছাড়া সম্প্রতি পাম অয়েল রফতানি শুল্কে বিশেষ ছাড় দিয়েছে মালয়েশিয়া, যা পরবর্তী সময়ে দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি আরো বাড়াতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

ওয়ার্ল্ড অয়েলের মতে, মৌসুমের বাকি কয়েক মাস পণ্যটির রফতানি চাঙ্গা থাকলেও চলতি মৌসুম শেষে সামগ্রিকভাবে পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহারে মন্দা ভাব বজায় থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে আগামী ২০২০-২১ মৌসুমে ভোজ্যতেলটির বৈশ্বিক চাহিদা ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।

এদিকে বায়োডিজেল উৎপাদনেও পণ্যটির চাহিদা কমতির দিকে রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি এলএমসি ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি জেমস ফ্রাই বলেন, নভেল করোনাভাইরাস বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা ব্যাপক হারে কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া জ্বালানি তেল প্রাকৃতিক গ্যাসসহ সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের দাম বর্তমানে রেকর্ড নিম্নস্তরে রয়েছে। ফলে বায়োডিজেলের চাহিদা উৎপাদন কমেছে। বায়োডিজেল উৎপাদন পাম অয়েল ব্যবহারের অন্যতম বৃহৎ খাত।

পরিস্থতিতে চাহিদা রফতানি কমে যাওয়ায় শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোতে পাম অয়েলের মজুদ বাড়ছে। মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ডের (এমপিওবি) প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশটিতে ভোজ্যতেলটির মজুদ বেড়ে ২৩ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে, আগের বছরের তুলনায় যা ১৪ দশমিক শতাংশ বেশি। তবে এলএমসি ইন্টারন্যাশনাল ধারণা করছে, মালয়েশিয়াতে বছর পাম অয়েলের মজুদ বেড়ে ৩০ লাখ টন ছাড়াতে পারে। কারণ নভেল করোনাভাইরাস দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি কমিয়ে দিলেও উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫