এপ্রিলের মাঝামাঝিতে যখন তানজানিয়ায় নভেল করোনাভাইরাস আঘাত হানে, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলি তিনদিনের জাতীয় প্রার্থনা কর্মসূচির আয়োজন করলেন এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে সুরক্ষা চাইলেন। ব্যস, এক মাসের মধ্যেই তিনি করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের দাবি করলেন এবং পর্যটকদের পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে ভ্রমণের আহ্বান জানালেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তানজানিয়ায় করোনা সংক্রমণের প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। কিন্তু মাগুফুলি তাতে কর্ণপাত করেননি। সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে যে এ অঞ্চলের সবচেয়ে দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো রয়েছে, তা-ও বোধ হয় তিনি ভুলে গেছেন। এ কারণেই তাড়াহুড়ো করে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে জাতিকে আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিলেন তিনি।
আসলে করোনা সংক্রমণের নির্ভরযোগ্য তথ্যের ঘাটতি রয়েছে আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশেই। কিছু দেশে মহামারী ছড়িয়ে পড়লেও তাদের সরকার তা স্বীকার করেনি। এছাড়া করোনা মোকাবেলার সক্ষমতা যে তাদের দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামোর নেই, তা-ও প্রকাশ করতে চায়নি তারা। অন্যদিকে কিছু দেশ দারিদ্র্য ও গৃহযুদ্ধের সঙ্গে লড়তে লড়তে এতই ক্লান্ত যে করোনার বিরুদ্ধে লড়ার শক্তিটুকু অবশিষ্ট নেই আর। এ কারণে সেসব দেশের সরকার উল্লেখযোগ্য হারে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করতে পারেনি। ফলে পর্যাপ্ত তথ্যও মেলেনি তাদের কাছ থেকে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফ্রিকায় মহামারী মোকাবেলায় প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করাটা খুব জরুরি। মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো ও বিদেশী সাহায্যদাতাদের কাছ থেকে তহবিল নিয়ে আসা—উভয় কাজেই এসব তথ্য খুব কাজে লাগে। কিন্তু যখন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না, তখন সংক্রমণের প্রকৃত মাত্রা নিরূপণ করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
আফ্রিকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। রয়টার্স সংগৃহীত উপাত্ত বলছে, সেখানে কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার। আর মারা গেছেন ১১ হাজার ৬০০ জন। অন্যদিকে প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা নিয়েই ২৯ লাখ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে লাতিন আমেরিকায়। সেখানে মারাও গেছেন অনেক বেশি—প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার।
তাহলে কী আফ্রিকায় নভেল করোনাভাইরাস লাতিন আমেরিকার চেয়ে কম শক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছে? এখন পর্যন্ত সরকারগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, আফ্রিকার জনস্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই এর চেয়ে অনেক খারাপ। গত ২৫ মে ডব্লিউএইচওর বিশেষ দূত সাম্বা সাও তো বলেই দিয়েছেন, করোনা শনাক্তের পরীক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব না দিলে আফ্রিকায় ‘নীরব মহামারী’
দেখা দিতে পারে।
আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, ৭ জুলাই পর্যন্ত প্রতি ১০ লাখে ৪ হাজার ২০০ জনের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে আফ্রিকায়। এশিয়ায় এ অনুপাত ৭ হাজার ৬৫০ আর ইউরোপে ৭৪ হাজার ২৫৫।
আফ্রিকা সিডিসির পরিচালক জন কেঙ্গাসং বলেছেন, ‘স্বাভাবিক সময়েও আফ্রিকায় মানসম্পন্ন তথ্য সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। আর এর সঙ্গে জরুরি পরিস্থিতি যোগ হলে কাজটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।’
সংক্রমণ ঠিকই বাড়ছে, কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য মিলছে না। এ কারণেই আফ্রিকায় ‘নীরব মহামারী’র প্রকোপ দেখার আশঙ্কা করছে ডব্লিউএইচও। রয়টার্স