মধ্যপ্রাচ্যে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ‘সিক্রেট স্প্রেডার’রা

প্রকাশ: জুন ৩০, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

একটি গুজব লিবিয়ায় সিরীয় যোদ্ধাদের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে একদল ভাড়াটে সৈনিক সম্প্রতি গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল, যাদের ভাড়া করেছিল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লিবিয়ান সরকার দ্রুতই আতঙ্ক চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে যে এটা মূলত করোনাভাইরাস তারা যখন সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে তুরস্ক হয়ে ত্রিপোলিতে আসে তখন তেমন কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেউই সেলফ আইসোলেটেড ছিল না, মাস্ক পরা ছিল না টেস্টও করায়নি

এক যোদ্ধা বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি আরো বেশি তথ্য জোগাড় করার, কিন্তু পারিনি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ছয় হাজার সিরিয়ান কর্মী এসেছে লিবিয়াস গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ডকে (জিএনএ) সহায়তা করতে যাদের পেছন থেকে মূলত সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক সে যোদ্ধা আরো বলেন যে তাদের কমান্ডাররা বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখেন তবে জিএনএ এমন গুজব অস্বীকার করেছে বিপরীতে এর কর্মকর্তারা তাদের শত্রুপক্ষকে কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার জন্য দোষারোপ করেছেন

এদিকে সেই যোদ্ধা হাহাকার করে বলেন, এখানে কোনো প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেই যেন করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্বই নেই

যুদ্ধ এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্য উত্তর আফ্রিকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দিয়েছে অনেকগুলো দেশকে কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের জন্য উপযোগী করে তুলেছে কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা এখন গোপনে যারা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সেসব যোদ্ধাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন

কয়েক মাস ধরে মহামারী গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়া, তুরস্ক, ইরান ইরাকের মতো দেশগুলো সৈন্য, যোদ্ধা ভাড়াটে সৈনিকদের ফ্রন্টলাইনে নিয়োগ দেয় যদিও তাদের আন্তঃসীমান্ত ভ্রমণ আন্তর্জাতিক লকডাউন এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নিয়ম ভঙ্গ করেছে এই দেশগুলো মহামারীর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও সংক্রমণ রোধে ন্যূনতম ব্যবস্থা নেয়া হয়নি পাশাপাশি সেনা কিংবা বিদ্রোহীদের চলাফেরায় গোপনীয়তা বজায় রাখার অভ্যাস কন্টাক্ট ট্রেসিংকে অসম্ভব করে তোলে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে ইনডিপেনডেন্টকে তারা বলেন, অতি অল্প তথ্য এবং টেস্টিং থেকে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা পরিমাপ করা সম্ভব না তারা বলেন, সৈন্যদের অব্যাহত আন্তর্জাতিক চলাচল, প্রাদুর্ভাব দীর্ঘায়িত তীব্র হওয়া অথবা নতুন ক্লাস্টার তৈরির মাধ্যমে মহামারীকে দূর করার যে স্থানীয় প্রচেষ্টা তা ব্যাহত হবে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিজিওনাল ইমার্জেন্সি ডিরেক্টর রিচার্ড ব্রেনান বলেন, স্পষ্টতই আপনি সীমান্ত ক্রসিং, বিমানবন্দর বন্দরে জনস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে চান আদর্শগতভাবে আপনি মানুষদের স্ক্রিনিং কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করছেন লিবিয়ার মতো দেশের অনেক স্থানে এটা করার জন্য খুব কম জায়গা রয়েছে এখন আবার অনেক অস্ত্রধারী লোকজন আসছে যাদের কোনো ধরনের স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিন ট্র্যাকিং কিছুই হচ্ছে না আসলে সংক্রমণ বাধাহীনভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে তার মতে, এটা গোটা অঞ্চলের সমস্যা এরপর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় যোদ্ধারা যেসব দেশে ভ্রমণ করেছে সেসব দেশে

জানা গেছে, জানুয়ারিতে সংঘাত শুরুর পর থেকে লিবিয়ার উভয় প্রান্তে ১০ হাজারের বেশি সৈনিক ভ্রমণ করেছে মূলত কভিড-১৯ যখন বিশ্বকে গ্রাস করছিল, তখনই এই সৈন্য মোতায়েনের বিষয়টি ত্বরান্বিত হয়েছিল জিএনএর পক্ষে লড়াই করার জন্য এই কঠিন পরিস্থিতিতে হাজারো সিরিয়ান সৈন্য তুরস্ক ভ্রমণ করে এসেছে যে তুরস্কে প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি মানুষ কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়েছে এবং পাঁচ হাজারের বেশি মৃত্যুবরণ করেছে যদিও সৈন্য আসার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি

গত বুধবার লিবিয়ার ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ঘোষণা করে করোনাভাইরাস দেশে আঘাত হানার পর সেদিনই দেশটি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড করেছে তবে সঠিকভাবে কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং টেস্ট করা না গেলে লিবিয়া কিংবা একই রকম জায়গা যেখানে বিদেশী সৈন্যদের আসা-যাওয়া রয়েছে, সেসব জায়গায় সত্যিকারের আক্রান্তের হার কেমন তা জানা সম্ভব হবে না

যাই হোক, জাতিসংঘের কর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, আন্তঃসীমান্ত অঞ্চলে যোদ্ধাদের যাতায়াত বেশ ঝুঁকি তৈরি করেছে, বিশেষ করে যেখানে হাসপাতালে বোমা মারা হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, ভেন্টিলেটর টেস্টের স্বল্পতাও রয়েছে

জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিদের একজন স্টেফানে উইলিয়ামস বলেন, লিবিয়া এখনো করোনাভাইরাসের চূড়া স্পর্শ করেনি এখানে যথেষ্ট পরিমাণে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই এখানে ফ্লাইটও অব্যাহত রয়েছে

তিনি বলেন, যুদ্ধে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিমান নিয়ে উড়ছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে এখানে কোনো ধরনের স্বচ্ছতা নেই তারা কি ফ্রন্টলাইনে পাঠানোর আগে কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে?

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও বিদেশী সৈন্যদের ভ্রমণ সম্পর্কে একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এদিকে হাজারো তুর্কি দল, পুলিশ, মিউনিসিপ্যাল কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা এবং দাতব্য সংস্থা প্রতিদিন সিরিয়ায় আসা-যাওয়ার ওপর থাকে দক্ষিণ প্রদেশ হাতয়ের গভর্নর রাহমি ডোগান মাসের শুরুতে স্বীকার করেছিলেন যে ১৪০ জন সৈনিক এবং পুলিশ অফিসার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যারা বিরোধীদের অধীনে থাকা সিরিয়ান শহর আফরিন ইদলিবে কাজ করেন খবর প্রচারিত হওয়ার পর শহরগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যেখানে প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামেরও স্বল্পতা ছিল

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নামে এক সিরিয়ান বিদ্রোহী বলেন, আমরা কভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত টার্কিশ ইউনিট যখন শিফট বদল করে তখনই কেবল এই ভাইরাস সিরিয়ার উত্তরে আসতে পারে আফরিন মাস্তুমার ক্যাম্পে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে

এদিকে সিরিয়ান কর্তাব্যক্তিরা পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পরীক্ষা ছাড়া অবশ্য নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই তবে সিরীয় সৈনিকসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, করোনা দ্রুত বিস্তৃত হলেও তা দেখার মতো কেউই নেই প্রতিরক্ষামূলক কোনো ব্যবস্থাও নেই

ইনডিপেনডেন্ট


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫