১৯১৮’র মহামারীতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছিল লকডাউন: গবেষণা

প্রকাশ: জুন ২৫, ২০২০

বণিক বার্তা অনলাইন

করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন বরং অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদই বয়ে আনবে বলে মনে করছের মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের গবেষকরা। তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর প্রভাব বিশ্লেষণ করে এমন পযবেক্ষণ দিয়েছেন। তারা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে নেয়া নানা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অর্থনীতির চাকাকে ধীর বা একেবারে স্থবির করে দিলেও নিদেনপক্ষে এটি ইতিবাচকই হবে।

এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে প্রাথমিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানাননি গবেষকরা। আর এমন এক সময় প্রকাশ হলো যখন করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার রোধে কর্তৃপক্ষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখবেন নাকি সীমিত আকারে চালু রাখবেন তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন, এই পরিস্থিতি তিনি বড়জোর ইস্টার পযন্ত সহ্য করবেন। এরপর ঝুঁকি নিয়ে হলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার অনুমতি দেয়া হবে। যদিও কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, এতে আরো ক্ষতি বাড়বে। যদি দ্বিতীয়বার সংক্রমণ বিস্তার শুরু হয় তাহলে আগের চেয়ে বেশি মানুষ মারা যেতে পারে।

নতুন গবেষণার ফলাফল বিশ্বাস করাটা কষ্টকর হলেও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য। এর পেছনে রয়েছেন ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের সার্জিও কোরেইয়া, নিউইয়র্ক ফেডের স্টিফেন লাক, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এমিল ভার্নারসহ আরো অনেকে।

গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়েছে, ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৫ লাখ থেকে পৌনে ৭ লাখ মানুষের প্রাণ নিয়েছে। তখনকার জনসংখ্যার হিসাবে যা দশমিক ৬৬ শতাংশ। ওই সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি মন্দা দেখা দেয়। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যের ম্যানুফেকটারিং খাতের উৎপাদন ১৮ শতাংশ কমে গিযেছিল। এ মহামারীর প্রভাব ছিল কয়েক বছর স্থায়ী। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি ছিল সেখানে মন্দা ছিল দীর্ঘমেয়াদি। 

কিন্তু ওই করোনাভাইরাসের (স্প্যানিশ ফ্লু ভাইরাসও এক প্রকার করোনাভাইরাস) বিস্তার রোধে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল যেমন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা- গবেষকরা এটিকে বলছেন, ওষুধবিহীন প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা এনপিআই- এসব পদক্ষেপ অর্থনীতিকে সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সময় যেসব শহরে দ্রুত ও কঠোরভাবে এই ওষুধবিহীন প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল সেখানে অর্থনীতি অতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বরং ম্যানুফেকচারিং কার্যক্রম ও ব্যাংক অ্যাসেট সম্পর্কিত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, যেসব এলাকায় এনপিআই বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ বেশ কঠোর ও আগ্রাসী ছিল সেখানে মহামারীর পর অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো করেছে।

অবশ্য গবেষণাটিতে কভিড-১৯ এবং স্প্যানিশ ফ্লু মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ দ্বিতীয়টাতে মৃত্যুহার ছিল অনেক বেশি।

তবে এই দুই মহামারীর মধ্যে দারুণ কয়েকটা মিলও রয়েছে। যেমন, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেয়ার কারণে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে এবং তাদের অর্থনীতির ক্ষতিও হয়েছে বেশ কম।

সূত্র: ব্লুমবার্গ


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫