করোনার কারণে বাড়ছে ডায়াবেটিস!

প্রকাশ: জুন ২৩, ২০২০

বণিক বার্তা অনলাইন

ইংল্যান্ড ও আরো কিছু দেশের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীদের কভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়, অবশ্য যদি তাদের শরীরে গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণ বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।

এই তত্ত্বকে সমর্থন করার মতো তথ্য-উপাত্ত ক্রমেই বাড়ছে। এ নিয়ে আরো নিবিড় কিছু গবেষণা হয়তো নিশ্চিত করবে, কভিডে ডায়াবেটিক রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। 

তবে এখানেই শেষ নয়। এ মাসের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাপী বহু স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনকে (এনইজেএম) লেখা চিঠিতে বলেছেন, কভিড-১৯ শুধুই যে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তা-ই নয়, প্রকৃতপক্ষে কভিডের কারণেও ডায়াবেটিস হচ্ছে।

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের: টাইপ-১ ও টাইপ-২। টাইপ-১ ডায়াবেটিস সৃষ্টি হয় শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম দ্বারা এবং এটি অগ্ন্যাশয়ের অ্যান্ড্রোক্রাইন কোষের ধারক আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানসে আক্রমণ করে। এখানেই তৈরি হয় ইনসুলিন। এটি তথাকথিত অটোইমিউন রোগ (যখন ইমিউন সিস্টেম ভুল করে শরীরের প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে বসে তখনই অটোইমিউন রোগের সৃষ্টি হয়)। 

পরিশেষে যা ঘটে- অগ্ন্যাশয়ের মধ্যে যখন কোনো আইলেট না থাকে তখন রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মতো ইনসুলিনও তৈরি হতে পারে না। বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না, কী এই অটোইমিউনিটির সূচনা করে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসের সংক্রমণ এর জন্য দায়ী থাকতে পারে। 

টাইপ-২ ডায়াবেটিস তখনই ঘটে যখন আইলেট সেলগুলোকে অনেক বেশি পরিমানে ইনসুলিন তৈরি করতে হয়। যখন মূল প্রত্যঙ্গগুলো (ফুসফুস, মাংসপেশী ও চর্বি) যথেষ্ট সাড়া দেয় না তখন এমন ঘটে। ফলে আইলেট কোষগুলোর জীবনীশক্তি নিঃশেষিত হয় ও মারা যায়।

চিকিৎসকরা বহু বছর ধরে জেনে এসেছেন, প্রথমবার যখন কারো মধ্যে ডায়াবেটিসের উপসর্গ দেখা দেয় তখন তার ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং ভাইরাস সংক্রমণ মৌসুমে টাইপ-১ ডায়াবেটিস বেশি ধরা পড়ে। ভাইরাসের সংক্রমণ আবার অগ্ন্যাশয়ের মধ্যে ইনসুলি তৈরিকারক আইলেট কোষের ‘কারখানা’কে ধ্বংস করে দেয়।

মাম্পস (ভাইরাসজনিত সংক্রমণ) ও এন্টেরোভাইরাস সংক্রমণের সময় সৃষ্ট কিছু গুরুতর ডায়াবেটিসের দৃষ্টান্ত রয়েছে। এছাড়া অটোইমিউন দ্বারা সংঘটিত টাইপ-১ ডায়াবেটিসের সঙ্গে কক্সস্যাকি-বিওয়ান এন্টেরোভাইরাসের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। পাশাপাশি শীতের মাসগুলোতে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ফলে আইলেট কোষের অটোইমিউনিটি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গবেষকরা। 

করোনাভাইরাস ও ডায়াবেটিসের সম্পর্কটি বুঝতে চীনের এক তরুণের ওপর কেস স্টাডি করেছেন গবেষকরা। তারা দেখেছেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের পর ওই তরুণের শরীরে তীব্রভাবে ডায়াবেটিস সৃষ্টি হয়, এ পরিস্থিতিকে বলা হচ্ছে কিটোএসিডোসিস।

কভিড-১৯ মহামারীর আগে পূর্ব এশিয়া সার্সের প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয় (২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত), ওই রোগটির কারণও ছিল একটি করোনাভাইরাস। সেসময় সার্স নিউমোনিয়া দ্বারা তীব্র ডায়াবেটিসের সূত্রপাত ঘটার তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, যা অন্য সময় নিউমোনিয়ার কারণে ঘটতে দেখা যায়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিন বছর পর ডায়াবেটিস চলে গেছে, যদিও ১০ শতাংশ রোগীর মধ্যে ডায়াবেটিস থেকেই গেছে। 

বর্তমান ও অতীতের একাধিক প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করোনাভাইরাস ঠিক একইভাবে কোষের দখল নিয়ে নেয়। নভেল করোনাভাইরাসের শরীরের উপরিভাগের প্রোটিন স্পাইক এইচটু রিসেপ্টরকে সংযুক্ত করে, যা ফুসফুস, কিডনি ও অগ্ন্যাশয়ের আইলেট কোষের মধ্যে প্রচুর পরিমানে থাকে। 

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫