পরিধেয় ভাইরাস ট্রেসিং ডিভাইস

সবার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা সিঙ্গাপুরের

প্রকাশ: জুন ০৯, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীতে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই বাড়ছে মরণঘাতী ভাইরাসটিতে সংক্রমিত মৃতের তালিকা। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটি নির্মূলে কোনো প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় এটির প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সেটির জন্য প্রয়োজন ভাইরাসটিতে সংক্রমিত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইসোলেশন বা আলাদা করে ফেলা। এটির ওপরই গুরুত্ব দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশেই ডিভাইস অ্যাপ ব্যবহার করে সংক্রমিত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে এবার কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং ডিভাইস ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে সিঙ্গাপুর। পরিধেয় ডিভাইসের সাহায্যে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কে এসেছে, সেটি সহজেই শনাক্ত করা যাবে। খবর রয়টার্স।

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। চীনের পর প্রথমদিকে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর অন্যতম। তবে ৫৭ লাখ বাসিন্দার দেশটি ভাইরাসটির প্রসার ঠেকাতে সফলভাবে কাজ করেছে। শুরু থেকেই কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিলেও এটি এখন উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২৯৬ জন সংক্রমিত হয়েছেন। তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে ৩৮৬ জন। আর ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৫ জন। তবে হঠাৎ করে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে। অবস্থায় দেশটি সংক্রমিত ব্যক্তি তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তের জন্য ডিভাইস ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সুতা বা দড়ির মতো কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং ডিভাইসটি শরীরে বেঁধে রাখা অথবা ব্যাগে রাখা যাবে। আগে থেকে ব্যবহার হওয়া মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে এটির অন্যতম ভিন্নতা বা পার্থক্য হলো, এটিতে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয় রক্ষা হবে। কারণ মোবাইল অ্যাপভিত্তিক ট্রেসিং পদ্ধতিতে ব্যক্তির গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এদিকে যেসব দেশ প্রযুক্তির সাহায্যে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে অর্থনীতি খুলে দেয়ার পথে রয়েছে, সিঙ্গাপুর তার একটি। এশিয়ার ছোট দেশটি খুব শিগগির প্রযুক্তি ডিভাইসটি ব্যবহার করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের স্মার্ট নেশন ইনিশিয়েটিভের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ভিভিয়েন বালাক্রিসনান জানিয়েছেন, এটি খুব তাড়াতাড়ি বিতরণ শুরু হবে। স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল না হওয়ায় এটি প্রত্যেককে দেয়া হবে। তবে এটি পরিধান করা বাধ্যতামূলক হবে কিনা, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি সরকার।

এর আগে সিঙ্গাপুর সরকার ট্রেসটুগেদার অ্যাপ চালু করেছিল। তবে এটি অ্যাপল ডিভাইসে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কারণ অ্যাপল ডিভাইসে এটি চালু করলেও ব্লুটুথ স্ক্যানিং পদ্ধতি বাতিল হয়ে যাচ্ছিল। অবস্থায় অ্যাপলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলেও এটি সমাধান করতে পারেনি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। এর পরই নতুন করে স্মার্টফোনের নির্ভর থেকে বের হয়ে এসে ট্রেসিং ডিভাইসের কথা ভাবছে দেশটি।

এদিকে সিঙ্গাপুর এমন একটি সময় ট্রেসিং ডিভাইস ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে, যখন অ্যাপল গুগলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে এসেছে। তবে গত মাসে বাজারে আসা এসব প্রযুক্তি যে সিঙ্গাপুর সহসাই ব্যবহার করবে না, ডিভাইস ব্যবহারের পরিকল্পনা তারই একটি বার্তা। কারণ অ্যাপল গুগলের অ্যাপসে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি এখন প্রশ্নাতীত। যে কারণে এসব অ্যাপ ব্যবহার করে নাগরিক গোপনীয়তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে চাচ্ছে না সরকার।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আইন বিষয়ের লেকচারার, ডিজিটাল রাইট রেগুলেশন বিশেষজ্ঞ এবং কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ নিয়ে কাজ করা মিশেল ভিয়েলে মনে করেন, জবাবদিহিতা গোপনীয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্য থেকেই সিঙ্গাপুর পরিধানযোগ্য ডিভাইস ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে।

 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫