উন্নয়ন বাজেট ২০২০-২১

স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ২৮%

প্রকাশ: জুন ০২, ২০২০

সাইদ শাহীন

কভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের সংস্কার আসছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি খাতকেও অগ্রাধিকার দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে সরকারি ব্যয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে খাত দুটি। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে স্বাস্থ্য কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য কৃষি খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে ২১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা করা হচ্ছে। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে হাজার ৯২৪ কোটি টাকা বা ২৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে কৃষি খাতে বাড়ছে হাজার ৭৫৯ টাকা বা ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। দুটি খাতের মন্ত্রণালয় বিভাগের সক্ষমতা অনুসারে বরাদ্দ পর্যাপ্ত বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রসঙ্গে বলেন, স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় সাড়ে হাজার কোটি টাকারও বেশি বাড়ানো হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয়তা সক্ষমতা, দূরদর্শিতা চাওয়ার সক্ষমতা বিবেচনা করেই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমাদের বিবেচনায় বরাদ্দ সর্বোচ্চ। তবে বরাদ্দই শেষ নয়। কৃষি স্বাস্থ্য খাতে ওয়ার্কেবল, পসিবল প্রকল্প নিয়ে এলে তা দ্রুত অনুমোদন দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া হতে পারে। সেই সুযোগ রাখা হয়েছে।

কৃষি খাত: চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে কৃষি খাতে বরাদ্দ রয়েছে হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। অর্থের মাধ্যমে প্রায় ১৮৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২০-২১ বাজেটে খাতে এডিপি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে প্রায় হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দ বাড়ছে ২৬ শতাংশ বা প্রায় হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। কৃষি খাতের বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় প্রায় ৭৬৬ কোটি টাকা বেশি। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। তবে কৃষি খাত বলতে এখানে কৃষি মন্ত্রণালয় ছাড়াও মত্স্য প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও রয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ের আলাদা মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন।

বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী . মো. আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, খাতের সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে সাফল্য আনার একটি বড় দায়িত্ব আমার কাঁধে রয়েছে। আমি খাতের সবাইকে নিয়েই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। করোনাকালে খাদ্য পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন অন্য বিষয়গুলোকে সমন্বিতভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, বিশেষজ্ঞ অন্যদের নিয়ে প্রতিনিয়ত বৈঠক করছি। সমস্যাগুলোর সমাধান করা হচ্ছে। সামনের দিনে কৃষি, মত্স্য বা প্রাণিসম্পদকে এগিয়ে নিতে হলে বাণিজ্যিকীকরণ, প্রযুক্তি যান্ত্রিকীকরণ করা ছাড়া সম্ভব নয়। চলতি বোরো মৌসুমে যন্ত্রের কারণে সঠিক সময়ে ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। সেটি কৃষকের কাছে আরো বেশি পৌঁছানো প্রয়োজন। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। সেই বিবেচনায় আমরা প্রকল্পের সুপারিশ করেছি। বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

স্বাস্থ্য খাত: চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১০ হাজার ১০৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ৭৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত এডিপির তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। তবে মূল এডিপির তুলনায় কিছুটা বরাদ্দ কমছে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে খাতের ৬২ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সেই তুলনায় বরাদ্দ কমছে ২২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো, চিকিৎসক, সেবা কর্মী প্রযুক্তিগত নানা ধরনের দুর্বলতা উঠে এসেছে। কারিগরি দক্ষতা পরীক্ষাগারের অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠতে দরকার বড় বিনিয়োগ। আবার সামনের দিনে করোনা কাঠিয়ে উঠতে ভ্যাকসিন কিংবা -সংক্রান্ত ওষুধ খাতে বড় ব্যয় প্রয়োজন হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে এসব বিষয়ে যৌক্তিক পরিকল্পনা না থাকায় কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, সেটিই এখনো সঠিকভাবে নির্ধারণ হয়নি। আবার যে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে, সেটিও ব্যয় করতে পারছে না। তাই 

স্বাস্থ্য খাতে বাস্তবায়ন সক্ষমতা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। চলতি অর্থবছরের যেখানে বাস্তবায়নের জাতীয় গড় প্রায় ৪৫ শতাংশের ওপরে, সেখানে খাতের প্রধান দুটি বিভাগ মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশ। আবার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগের রেকর্ডও খুব বেশি ভালো নয়। জাতীয় গড় যেখানে ৯০ শতাংশের ওপরে, সেখানে স্বাস্থ্য খাতে বাস্তবায়নের হার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের পরামর্শক সাবেক লিড ইকোনমিস্ট . জাহিদ হোসেন বিষয়ে বলেন, বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকলে বরাদ্দ দিলে সেটার অপচয় অপব্যয় হবে। আবার এটাও সত্য, স্বাস্থ্য খাতের যে কী ধরনের ভঙ্গুর অবস্থা রয়েছে, সেটি করোনা পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়ে গেছে। তাই শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে বরাদ্দ বাড়ালে হবে না। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে চলতি বিনিয়োগ ব্যয় এবং কাঠামোগত সংস্কারের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ ব্যয় বাড়াতে হবে। সেটি করতে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অন্যান্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও এবং বেসরকারি খাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, বর্তমানে জাতীয় বাজেটে দেশের মোট জিডিপির শূন্য দশমিক শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একে জিডিপির দশমিক শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। করোনার কারণে খাতে বরাদ্দ জিডিপির দেড় থেকে শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫