রফতানি বন্ধে বিপাকে মিয়ানমারের মৎস্য খাত

প্রকাশ: মে ৩১, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চীন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান ক্রেতারা ক্রয়াদেশ স্থগিত করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছে মিয়ানমারের মৎস্য খাত। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রায় বন্ধ রয়েছে দেশটির মাছ রফতানি। এতে শিল্পের সঙ্গে জীবিকা জড়িত এমন প্রায় ১০ লাখ মানুষ তাদের কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।

করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে চলতি বছর রেকর্ড ১০০ কোটি ডলারের মাছ রফতানির পূর্বাভাস দিয়েছিল মিয়ানমার ফিশারিজ ফেডারেশন। ২০১৯ সালের চেয়ে তা প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। কিন্তু কিসের কী? করোনা সব পরিকল্পনাই ভেস্তে দিয়েছে। মহামারী মোকাবেলায় সরকার গৃহীত পদক্ষেপের কারণে মাছ প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা কোনোভাবেই মুহূর্তে প্রক্রিয়াজাত মাছ সরবরাহ করতে পারছে না। কারণে ফিশারিজ ফেডারেশন তাদের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ কোটি ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে।

মিয়ানমারে কর্মসংস্থানের বড় একটি উৎস মৎস্য খাত। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের জীবিকা খাতের সঙ্গে জড়িত, যা দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশটির মোট জনবলের প্রায় শতাংশ। ২০১৯ সালের জুনে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতি তিনজন শ্রমজীবী মানুষের একজন সামুদ্রিক খাদ্য অন্যান্য পণ্য আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।

শুক্রবার টেলিফোনে এক সাক্ষাত্কারে মিয়ানমার ফিশারিজ ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিন বলেছেন, ক্রেতা দেশগুলোর কাছ থেকে আমরা কোনো নতুন ক্রয়াদেশ পাচ্ছি না। আমাদের রফতানি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের মাছ রফতানি অনেকটাই নির্ভর করে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর।

নিন জানান, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে যেসব খাত সবচেয়ে সঙ্গিন অবস্থায় রয়েছে, তার মধ্যে অ্যাকোয়াকালচার পশুখাদ্য অন্যতম। রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগদ অর্থপ্রবাহও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কোম্পানিকে, যাদের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে চড়া সুদ দিতে হচ্ছে। কারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিতে বন্ধকি সম্পদ থাকতে হয়, যা এসব প্রতিষ্ঠানের নেই। কারণে তাদের অবৈধ উৎস থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। আর্থিক সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

মিয়ানমারের প্রক্রিয়াজাত সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে পুরো খাতেই স্থবিরতা নেমে আসা। কারণ স্থানীয় বাজারে এসব পণ্য বিক্রি হয় না বললেই চলে। নিন বলেন, স্থানীয় বাজারে এগুলো বিক্রি প্রায় অসম্ভব। কারণ রফতানির জন্য যেসব সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়, সেগুলো কেনার সামর্থ্য মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের নেই।

এমনকি স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য যারা সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য আহরণ করেন, তারাও বিপাকে রয়েছেন। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা এবং বাজার রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় তাদেরও আয় কমে গেছে।

মিয়ানমারের জলজ সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সানপিয়া ফিশ মার্কেট। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর সেখানে বিক্রিবাট্টা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

নিন সরকারকে রাজস্ব আহরণ ধরে রাখতেই অ্যাকোয়াকালচার খাতে প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে আঞ্চলিক সরকারগুলোর রাজস্বের প্রায় ৫৬ শতাংশই আসে মৎস্য খাত থেকে।

 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫